Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সাজা শুনে গান ধরলেন ছত্রধর

সকালে যখন মেদিনীপুর আদালতে ঢুকেছিলেন, তখন তাঁদের মুখে স্লোগান ছিল— ‘আদালতের জুলুমবাজি মানছি না, মানব না।’ যাবজ্জীবন সাজা শোনার পরে বিকেল পাঁচটা নাগাদ যখন আদালত থেকে বেরিয়ে প্রিজন ভ্যানে উঠছেন, ছত্রধর মাহাতো ও তাঁর সঙ্গীদের স্লোগান তখন বদলে গেল গানে— “আমরা ক্ষুদিরামের ভাই, আমরা ভগৎ সিংহের ভাই, আমরা দেশের কাজে জেলে আছি, অন্য কাজে নয়।”

মেদিনীপুর আদালতে রাজা সরখেল ও প্রসূন চট্টোপাধ্যায় (বাঁ দিকে)। সাজা ঘোষণার পর ছত্রধর মাহাতো (ডান দিকে)। মঙ্গলবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

মেদিনীপুর আদালতে রাজা সরখেল ও প্রসূন চট্টোপাধ্যায় (বাঁ দিকে)। সাজা ঘোষণার পর ছত্রধর মাহাতো (ডান দিকে)। মঙ্গলবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৫ ০৪:০৯
Share: Save:

সকালে যখন মেদিনীপুর আদালতে ঢুকেছিলেন, তখন তাঁদের মুখে স্লোগান ছিল— ‘আদালতের জুলুমবাজি মানছি না, মানব না।’

যাবজ্জীবন সাজা শোনার পরে বিকেল পাঁচটা নাগাদ যখন আদালত থেকে বেরিয়ে প্রিজন ভ্যানে উঠছেন, ছত্রধর মাহাতো ও তাঁর সঙ্গীদের স্লোগান তখন বদলে গেল গানে— “আমরা ক্ষুদিরামের ভাই, আমরা ভগৎ সিংহের ভাই, আমরা দেশের কাজে জেলে আছি, অন্য কাজে নয়।”

ইউএপিএ এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় সোমবারই দোষী সাব্যস্ত করা হয় জনগণের কমিটির চার নেতা ছত্রধর মাহাতো, সুখশান্তি বাস্কে, শম্ভু সরেন ও সাগেন মুর্মুকে। একই মামলায় অভিযুক্ত রাজা সরখেল এবং প্রসূন চট্টোপাধ্যায়কেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তবে ইউএপিএ- তে নয়। মঙ্গলবার এই ৬ জনকেই যাবজ্জীবনের নির্দেশ দেন মেদিনীপুরের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক কাবেরী বসু।

২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর লালগড়ের বীরকাঁড়ে ধরা পড়েন ছত্রধর। তাঁর বিরুদ্ধে ৩৯টি মামলা ছিল। ৩৭টিতে জামিন পান। ৫টিতে বেকসুর খালাসও হন। কিন্তু জেল থেকে আর বেরনো হল না। আদালত চত্বরে ছত্রধরের স্ত্রী নিয়তি মাহাতো বলেন, “এই সাজা জঙ্গলমহলের মানুষ মেনে নেবে না। ফের আন্দোলন হবে।” লালগড় মঞ্চের অন্যতম সদস্যা রাংতা মুন্সীরও বক্তব্য, বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে।”


মেদিনীপুর আদালতে নিয়তি মাহাতো।

এ দিন সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ আদালতে আনা হয় ছত্রধরদের। একে একে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের বক্তব্য জানান অভিযুক্তেরা। বিচারকের উদ্দেশে ছত্রধর বলেন, “আমি নির্দোষ। সাজা হওয়া উচিত নয়।” রাজা বলেন, “সাক্ষ্যগ্রহণের সময় তদন্তকারী অফিসারই বলছিলেন, তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতো কাজ করেছেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমায় মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।” একধাপ এগিয়ে ফাঁসিই প্রার্থনা করেন প্রসূন।

এ দিন সকাল থেকেই আদালত চত্বর নিরাপত্তার চাদড়ে মুড়ে ফেলা হয়। একাধিক ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। সংবাদমাধ্যমকেও ধারেকাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন ডিএসপি (অপারেশন) সৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিচারক যখন ছত্রধরদের সাজা ঘোষণা করছেন, তখন আদালত কক্ষেই ছিলেন ছত্রধরের স্ত্রী নিয়তিদেবী, রাজা সরখেলের স্ত্রী শুক্লাদেবী, প্রসূনের ভাই প্রদীপ। সাত বছর জেল খাটার পর চলতি বছরই এক মামলা থেকে বেকসুর খালাস হওয়া প্রদীপের কটাক্ষ, “এক সময় ছত্রধরদের আন্দোলনের পাশে থেকেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিহাস খুব নিষ্ঠুর। জঙ্গলমহলের মানুষের কাছ থেকে এর জবাব ওরা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে পাবে।”

এ দিন স্লোগান দেওয়ার সময় রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবিও জানান রাজা-প্রসূনরা। বন্দি মুক্তি কমিটির তরফে সুজাত ভদ্ররা আবার ছত্রধরদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। আজ, বুধবার কলকাতার কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত কমিটি মিছিলও করবে। অন্য দিকে, ইউএপিএ বাতিলের দাবি তুলেছে সিপিআই (এমএল) লিবারেশন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE