(বাঁ দিকে) আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় ইস্পাত কারখানার জন্য কত কোটি টাকায় জমি কিনেছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সংস্থা, তা জানিয়ে দিল নবান্ন। শনিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করলেন, এ নিয়ে ‘ভিত্তিহীন’ প্রচার চলছে।
গড়বেতার ডুকিতে ‘প্রয়াগ’ ফিল্মসিটির জমিতে প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভের প্রস্তাবিত কারখানা তৈরি হওয়ার কথা। তাঁকে জমি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টে গত বৃহস্পতিবার জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। মামলাকারীর দাবি, এক টাকার বিনিময়ে সৌরভকে জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। শনিবার আলাপন জানিয়ে দিলেন, কত অর্থের বিনিময়ে সৌরভ এবং অন্য একটি সংস্থাকে জমি দেওয়া হয়েছে।
নবান্নে শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করেন আলাপন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় শিল্পের জন্য জমি দেওয়ার প্রশ্নে কিছু ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর, অসত্য সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে কিছু সংবাদমাধ্যমে। যা নিয়ে রাজ্য সরকার সঠিক তথ্য জানাতে চায়।’’ তার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘বেরি অ্যালয়জ় লিমিটেড, ক্যাপ্টেন ইন্ডাস্ট্রিজ ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড গড়বেতায় যথাক্রমে ৭৫.৬২ একর এবং ২৪২.৪৩ একর জমির ডিড রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে। বেরি অ্যালয়জ় সংস্থা ১২কোটি ১৮ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছে। ক্যাপ্টেন ইন্ডাস্ট্রিজ ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থা ৩০ কোটি ৪৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে।’’ এই ক্যাপ্টেন ইন্ডাস্ট্রিজ ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড সৌরভের সংস্থা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রীর স্পেন সফরে সঙ্গী হয়েছিলেন সৌরভ। সেখানেই সৌরভ বাংলায় ইস্পাত কারখানা তৈরির ঘোষণা করেছিলেন। সে জন্য তাঁকে গড়বেতায় জমি দেয় রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। সেই মামলার শুনানি হবে কলকাতা হাই কোর্টের চিটফান্ড সংক্রান্ত মামলার বেঞ্চে।
অতীতে পশ্চিম মেদিনীপুরে ‘ফিল্মসিটি’ তৈরির জন্য প্রয়াগ গোষ্ঠীকে ৭৫০ একর জমি দিয়েছিল রাজ্য। ওই জমির জন্য এবং ‘ফিল্মসিটি’ প্রকল্পের কাজে প্রায় ২,৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল প্রয়াগ গোষ্ঠী। পরবর্তী সময়ে চিটফান্ড কেলেঙ্কারি মামলায় নাম জড়ায় ওই সংস্থার। আমানতকারীদের ২,৭০০ কোটি টাকা ওই ‘ফিল্মসিটি’ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
চিটফান্ড কেলেঙ্কারি মামলায় সেই সময় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এসপি তালুকদারের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। এর পর আমানতকারীদের টাকা ফেরানোর উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকার প্রয়াগ গোষ্ঠীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। বাজেয়াপ্ত হওয়া সম্পত্তির তালিকায় ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের এই ৭৫০ একর জমিও। আমানতকারীদের সকলে এখনও টাকা ফেরত পাননি বলেই দাবি করেছেন।
সৌরভকে ওই জায়গায় ৩৫০ একর জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। আগের বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই কেন প্রয়াগ গোষ্ঠীর বাজেয়াপ্ত হওয়া সম্পত্তি আবার অন্যকে দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন এসকে মাসুদ নামে এক আমানতকারী। মামলাকারীর আইনজীবী শুভাশিস চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার আদালতে বলেন, “প্রয়াগ গোষ্ঠীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল রাজ্যের। সেই মতো ওই জমি বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা পাইয়ে দেওয়া উচিত।” মামলাকারীর আইনজীবীর দাবি, টাকা ফেরত পাইয়ে না দিয়ে রাজ্য সৌরভকে কারখানা তৈরির জন্য এক টাকায় ৯৯৯ বছরের জন্য ওই জমি লিজ দিয়েছেন। কেন এমন করা হল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
এ বার নবান্নের তরফে জানানো হল, এ নিয়ে ভিত্তিহীন প্রচার হয়েছে। কত টাকার বিনিময়ে দুই সংস্থা জমি পেয়েছে, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হল শনিবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy