বিধানসভায় কথোপকথন হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে।
সোমবার বেলা দুটো নাগাদ বাজেট বক্তৃতা দিতে বিধানসভায় আসেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। প্রথামাফিক অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে তাঁকে স্বাগত জানাতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বেরোনোর পথে অধিবেশন কক্ষেই মুখোমুখি হন মমতা ও শুভেন্দু। তখনই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর কাছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা জানতে চান, রাজ্যপালকে স্বাগত জানাতে তাঁর সঙ্গে বিধানসভার গাড়িবারান্দা পর্যন্ত শুভেন্দু যাবেন কি না। শোনা যায়, মমতা শুভেন্দুকে বলছেন, ‘‘রাজ্যপালকে রিসেপশন করতে (স্বাগত জানাতে) যাবি না?’’ মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই ছিলেন স্পিকার বিমান। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু স্পিকারের পিঠে হাত দিয়ে বলেন, ‘‘এটা স্পিকারের দায়িত্ব। আমার নয়।’’
এর পরে আর কথা না বাড়িয়ে রাজ্যপালকে স্বাগত জানাতে এগিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী এবং স্পিকার। রাজ্যপালকে নিয়ে তাঁরা যখন অধিবেশন কক্ষে ফিরছেন, তখন নিজের আসনে বসেছিলেন শুভেন্দু। ফেরার মুহূর্তে মমতা-শুভেন্দু আবার মুখোমুখি হয়ে যান। পরস্পরকে দেখে নমস্কার এবং প্রতি-নমস্কারের সৌজন্য বিনিময়ও হয়। পরে রাজ্যপালের বক্তৃতা চলাকালীন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা, আরজি কর-কাণ্ড এবং জলজীবন মিশন প্রকল্পের নামবদল নিয়ে সরব হন শুভেন্দু। কিন্তু সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে কোনও অভিযোগ করেননি তিনি। যদিও রবিবার আরজি করের নির্যাতিতার জন্মদিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা এবং কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে লক্ষ্য করে কড়া আক্রমণ শানিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। প্রসঙ্গত, গত শীতকালীন অধিবেশনেও মুখ্যমন্ত্রী-বিরোধী দলনেতার মধ্যে ‘সৌজন্যের স্থিতাবস্থা’ বজায় ছিল। সোমবার আরও এক বার তা দেখা গেল।
আরও পড়ুন:
২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। তখন থেকেই মমতার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে তাঁর। ২০২১ সালে নন্দীগ্রাম বিধানসভায় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে প্রার্থী হন মমতা। সেই লড়াইয়ে শুভেন্দু জয়ী হলেও গণনায় কারচুপির অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। যদিও তার শুনানি অনেক দিনই হয়নি। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় বারের জন্য মমতা ক্ষমতা দখল করার পরে শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছিল। যদিও এর মধ্যে ২০২২ সালে বিধানসভায় শুভেন্দুকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়েছিলেন মমতা। একা ডাক পেলেও শুভেন্দু অবশ্য দলের তিন বিধায়ককে নিয়ে তাঁর ঘরে গিয়েছিলেন। ২০২৩ সালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্যে বিরোধী দলনেতা প্রবল ক্ষুব্ধ হলে বিধানসভায় প্রতি-নমস্কারে সেই বিতর্কের অবসান করেছিলেন মমতাই।
বিধানসভার নতুন প্রেক্ষাগৃহ উদ্বোধনের কর্মসূচিতে বিরোধী দলনেতাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য স্পিকারকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে বার অবশ্য স্পিকারের বার্তা পাওয়ার আগেই বিধানসভা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। সোমবারের সৌজন্যমূলক ব্যবহার প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কোনও মন্তব্য না করলেও শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি যখন অধিবেশন কক্ষে ঢুকেছিলাম, তখন স্পিকারকে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে আনতে যাচ্ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী আমাকে দেখে রাজ্যপালকে স্বাগত জানাতে যেতে বলেন। প্রটোকল বলে, এই দায়িত্ব স্পিকারের। আমি তাই যাইনি।’’ পাশাপাশিই শুভেন্দু বলেন, ‘‘এটা একেবারেই সৌজন্যমূলক বিষয়। এর অন্য কোনও অর্থ খোঁজা উচিত নয়।’’