দিল্লি বিধানসভার ভোটে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)-র বিপর্যয়ের জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের সমন্বয়ের অভাবকেই দুষলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বস্তুত, বিজেপি-বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের দুই শরিক কংগ্রেস এবং আপের হারের জন্য দু’দলের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবই দায়ী বলে মনে করেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, দিল্লিতে যেমন কংগ্রেস ‘অনমনীয়’ মনোভাব দেখিয়েছে, তেমনই এর আগে হরিয়ানার বিধানসভা ভোটে আপ কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে চলেনি।
দিল্লি বিধানসভার ভোটে ৭০টি আসনের মধ্যে ৪৮টিতেই জয়ী হয়েছে বিজেপি। ২২টিতে আপ। কংগ্রেস খাতাই খুলতে পারেনি। শনিবার ভোটের ফল প্রকাশের পরে ‘ইন্ডিয়া’র শরিক তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু বলেননি। তবে দলের অন্দরে প্রত্যাশিত ভাবেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। সোমবার বিধানসভায় পরিষদীয় দলের বৈঠকে ওই প্রসঙ্গ তোলেন মমতা। জানান, দিল্লি নির্বাচনে কয়েক শতাংশ ভোটে জিতেছে বিজেপি। কংগ্রেস নমনীয় হয়ে আপের সঙ্গে জোট করলে এমনটা হত না। পাশাপাশিই তিনি জানিয়েছেন, দিল্লিতে কংগ্রেসের মাত্র ৫ শতাংশ ভোট পাওয়ার বিষয়টা খারাপ। পাশাপাশি, হরিয়ানা বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের হারের প্রসঙ্গও তুলেছেন মমতা। হরিয়ানায় ৯০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৪৮টি পেয়েছিল বিজেপি। ৩৭টিতে জিতেছিল কংগ্রেস। কেজরীওয়ালের আপ খাতা খুলতে পারেনি। হরিয়ানার ফলাফল প্রসঙ্গে নিয়ে আপকে কাঠগড়ায় তুলে মমতা জানান, হরিয়ানায় আপ যদি কংগ্রেসকে নিয়ে চলত, তা হলে ফল অন্য রকম হত। ওই রাজ্যেও কংগ্রেস-আপ পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় করে চলেনি।
দিল্লি বিধানসভা ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র দুই শরিক আপ এবং কংগ্রেসের ভোট কাটাকাটির ফলে ১৪টি আসনে জয় নিশ্চিত হয়েছে বিজেপির। শেষ পর্যন্ত ওই ১৪টি আসনই দিল্লির ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে নির্ধারক ভূমিকা নেয়। লোকসভা ভোটে দিল্লিতে আপ-কংগ্রেস একসঙ্গে লড়াই করলেও গত ডিসেম্বরে কেজরীওয়াল ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, দিল্লির ভোটে তাঁরা একাই লড়বেন। প্রচারে নেমে তিনি লাগাতার কটাক্ষ করেন কংগ্রেসকে। পাল্টা আবগারি দুর্নীতি নিয়ে তাঁকে নিশানা করেন কংগ্রেসের সাংসদ রাহুল গান্ধী-সহ অন্য শীর্ষনেতারা। কংগ্রেসের সঙ্গে সেই বিরোধিতার ‘খেসারত’ দিতে হয়েছে কেজরীকেও। ভোট কাটাকাটির কারণেই নয়াদিল্লি বিধানসভা কেন্দ্রে তিনি হেরেছেন ৪,০৮৯ ভোটে। ওই আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের পুত্র সন্দীপ পেয়েছেন ৪,৫৬৮ ভোট। সন্দীপের প্রাপ্ত ভোট আপের ঝুলিতে গেলে খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারতেন কেজরী। একই কারণে হেরেছেন দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া। জঙ্গপুরা বিধানসভা কেন্দ্রে ৬৭৫ ভোটে পরাজিত হয়েছেন তিনি। ওই আসনে কংগ্রেস পেয়েছে ৭,৩৪০ ভোট। ওই ভোটের কিছু অংশ মণীশের ঝুলিতে গেলে তাঁকে হারতে হত না। সেই সমস্ত হিসাবনিকাশ করেই মমতা ওই মন্তব্য করেছেন বলে জানাচ্ছেন তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা।
আরও পড়ুন:
তবে ‘ইন্ডিয়া’র অন্দরে তৃণমূল বরাবরই কংগ্রেসের ‘দাদাগিরি’র বিপক্ষে। একাধিক বার এই নিয়ে দলীয় মহলে আলোচনা করেছেন তৃণমূলনেত্রী এবং অন্য প্রথম সারির নেতারা। ঘটনাচক্রে, দীর্ঘ ২৭ বছর পরে দিল্লির ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে এই প্রথম। স্বভাবতই বিজেপি দিল্লির জয়কে ‘মোদীর জয়’ হিসেবেই তুলে ধরছে। গত লোকসভা ভোটেও অবশ্য দিল্লিতে ভাল ফল করেছিল বিজেপি। কিন্তু দিল্লির বিধানসভা ভোট বরাবরই অন্য রকমের রাজনৈতিক ‘গুরুত্ব’ বহন করে। দেশের শাসকদলের হাতে রাজধানীর ক্ষমতা এসে যাওয়ায় মোদী আরও ‘শক্তিশালী’ হলেন বলেই অভিমত অনেকের।