Advertisement
E-Paper

২৬০০০ চাকরি বাতিল: শুনানি শেষ, রায় স্থগিত, সব পক্ষের কথা শুনে কী পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের

এসএসসির ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার শুনানি পর্ব শেষ হয়েছে। রায়দান স্থগিত রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার সিবিআই, কমিশন বা রাজ্য, কেউই নতুন কোনও তথ্য তুলে ধরেনি। বক্তব্য শুনে কী জানাল সুপ্রিম কোর্ট?

সুপ্রিম কোর্টে ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলা।

সুপ্রিম কোর্টে ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:০৯
Share
Save

রাজ্যের ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় আসল তথ্য জানা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোমবার মামলার শুনানি পর্ব শেষ করার আগে এ কথা জানালেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। এ অবস্থায় আদালত কী করতে পারে, তা নিয়েও প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির। সোমবার এই মামলায় বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য শোনে সুপ্রিম কোর্ট। তবে কারও বক্তব্যেই নতুন কিছু উঠে এল না। সিবিআই জানাল, তারা চাইছে ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের রায়ই বহাল থাকুক। স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) জানাল, ‘র‌্যাঙ্ক জাম্প’ এবং প্যানেল-বহির্ভূত নিয়োগের তথ্য থাকলেও ওএমআর শিট কারচুপির তথ্য তাদের কাছে নেই। সরকার পক্ষ জানাল, এত জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হলে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।

সোমবার দুপুর ২টোয় শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি খন্নার এজলাসে শুনানি শুরু হয়। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলল শুনানি। শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছেন প্রধান বিচারপতি। সিবিআই সোমবার জানায়, এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করছে তারা। ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় হাই কোর্টের রায়কেই সমর্থন করছে তদন্তকারী সংস্থা। সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, “নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি হয়েছে। হাই কোর্টের রায় যথার্থ। ওই রায়ই বহাল রাখা হোক।”

এই মামলায় অন্যতম সমস্যা হল যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাই করার ক্ষেত্রে সমস্যা। কত জন যোগ্য এবং অযোগ্যকে বাছাই করা হয়েছে, তা নিয়েও এসএসসিকে প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি। তাতে কমিশনের আইনজীবী জানান, ‘র‌্যাঙ্ক জাম্প’ এবং প্যানেল-বহির্ভূত নিয়োগের তথ্য তাঁদের কাছে রয়েছে। কিন্তু ওএমআর শিট কারচুপির তথ্য কমিশনের কাছে নেই।

সে কথা শুনে প্রধান বিচারপতি খন্না বলেন, “সমস্যা তো এখানেই। পঙ্কজ বনসলের সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে আপনাদের তথ্য মিলিয়ে দেখেননি। আপনারা বলতে পারছেন না কোনটি আসল তথ্য। কিন্তু সিবিআইয়ের তথ্য গ্রহণ করলে বলতে হবে বনসলের তথ্য আসল। উল্টো দিকে অন্য পক্ষ বলছেন, তাঁদের নম্বর আসল। বনসলের তথ্য সঠিক নয়।” প্রধান বিচারপতি জানান, সমস্যা হল আসল ওএমআর শিট নেই। সে ক্ষেত্রে কোন ওএমআর শিটকে আসল বলে ধরে নেওয়া হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “এসএসসি, না কি পঙ্কজ বনসলের সংস্থার কাছে তথ্য রয়েছে? অনেক সন্দেহ রয়েছে! পঙ্কজ বনসলের সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে সন্দেহ আছে। আসল তথ্য জানা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় আমরা কী করতে পারি?” তবে গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-র ‘যোগ্য’ চাকরিজীবীদের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি সোমবার শীর্ষ আদালতে জানান, যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব।

মামলার একটি পর্যায়ে এক আইনজীবী কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তাঁর বক্তব্য, সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার কোনও ভিত্তি নেই। মামলা চলাকালীন তাঁর সাক্ষাৎকার এবং চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগদানের প্রসঙ্গও তোলেন ওই আইনজীবী। তবে আইনজীবীকে ওই সময়ে বিরত করে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি খন্না বলেন, “আমি দুঃখিত। এই বক্তব্য গ্রহণ করতে পারব না। তথ্যের উপর ভিত্তি করে সওয়াল করুন।” ওই আইনজীবীকে কোনও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে মন্তব্য না-করার পরামর্শ দেন প্রধান বিচারপতি। আদালত যে তথ্য এবং প্রমাণের ভিত্তিতে চলে, সে কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি।

এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি এই মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে কি না, সে বিষয়ে গত শুনানিতে জানতে চান শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি খন্না। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া কতটা কঠিন, তা-ও জানতে চান তিনি। তখন মূল মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে জানান, অনেকে চাকরির আবেদন না করেও নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যাঁরা চাকরির আবেদন করেছিলেন, তাঁদের আবার নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে বলে প্রধান বিচারপতির এজলাসে জানান বিকাশরঞ্জন। নিয়োগের পুরো প্যানেলই বাতিল করার জন্য গত শুনানিতে সওয়াল করেন বিকাশ।

গত ২২ এপ্রিল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রায় ঘোষণা করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করে। তার ফলে চাকরি যায় ২৫,৭৫৩ জনের। যাঁরা মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন, যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ হারে সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে বলা হয় ওই চাকরিপ্রাপকদের।

হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। পৃথক ভাবে মামলা করে রাজ্যের শিক্ষা দফতর, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তার পর সুপ্রিম কোর্টে দফায় দফায় মামলা করেন কয়েকশো চাকরিহারা। গত ৭ মে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ চাকরি বাতিল মামলায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়। এ ক্ষেত্রে সেই সময় শীর্ষ আদালতের যুক্তি ছিল, যদি যোগ্য এবং অযোগ্য আলাদা করা সম্ভব হয়, তা হলে গোটা প্যানেল বাতিল করা ন্যায্য হবে না।

Bengal SSC Recruitment Case Supreme Court CJI Sanjiv Khanna West Bengal government

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}