সামাজিক ক্ষেত্রে সরকারি প্রকল্পগুলির জন্যই রেকর্ড হারে রাজ্যের বেকারত্ব কমেছে বলে দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কর্মসংস্থানই এখন তাঁর সরকারের অন্যতম লক্ষ্য— বৃহস্পতিবার বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের (বিজিবিএস) সমাপ্তি মঞ্চ থেকে সেই ঘোষণাও করেন তিনি। জাতীয় রাজনীতির নিরিখে ও রাজ্যের বাজেট অধিবেশনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বার্তা ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের।
ছাত্র-যুব এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের জন্য রাজ্যে শিল্প বিনিয়োগ যে খুবই জরুরি, বুধবার সম্মেলনের উদ্বোধনী মঞ্চ থেকেই তা জানিয়েছিলেন মমতা। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে সামাজিক পদক্ষেপের কারণে স্কুলছুটের প্রবণতায় যেমন রাশ টানা গিয়েছে, কমানো গিয়েছে বেকারত্বের হারও। মমতার কথায়, “১ কোটি ৭২ লক্ষ মানুষ দারিদ্রসীমার বাইরে এসেছেন।” বিশ্লেষকের একাংশ মনে করাচ্ছেন, কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব নিয়ে বরাবরই কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে থাকেন বিরোধীরা। গত কেন্দ্রীয় বাজেটের পরেও তাতে সামাজিক খাতে বরাদ্দ নিয়ে কটাক্ষ করেছিল তৃণমূল। সে দিক থেকে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্য অর্থপূর্ণ।
শিল্পকর্তাদের অনেকের মতে, সামাজিক উন্নয়ন হলে তবেই বিনিয়োগ আক্ষরিক অর্থে লাভজনক হয়। কারণ, মানুষের হাতে টাকা থাকলে তবে তাঁরা পণ্য কিনতে পারেন। তাতে পণ্যের চাহিদা বাড়বে। সমান্তরালে বাড়াতে হবে উৎপাদনও। সেটা করতে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন। যাতে বাড়ে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা। সম্মেলনের প্রথম দিন মুকেশ অম্বানী-সহ শিল্পকর্তারা এ রাজ্যের সামাজিক পদক্ষেপগুলিকে সাধুবাদ দিয়েছিলেন। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, সেই সূত্র ধরেই এ দিন মমতা জানান বেকারত্ব ও দারিদ্র দূরীকরণের কথা। তিনি বলেন, “আমাদের ৯৪টি প্রকল্প চলছে। কন্যাশ্রীর তিনটি ধাপই সম্পূর্ণ হয়েছে। মা-শিশুমৃত্যু কমেছে।”
বিরোধীরা বরাবর রাজ্যের লগ্নি-প্রস্তাবের বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে থাকেন। লগ্নির সঙ্গে কর্মসংস্থান সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। সেই দিক থেকে কর্মসংস্থানকে পাখির চোখ করাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। মমতা এ দিনও বলেছেন, “১.৩ কোটি মানুষ কাজ করেন ক্ষুদ্র-ছোট ও মাঝারি শিল্পে। আজকের (সম্মেলনের সমাপ্তি দিন) নজর তাই ক্ষুদ্র শিল্প। আজও বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাঁরা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।”
আর্থিক অনটন সত্ত্বেও সরকার লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী-রূপশ্রী, পড়ুয়াদের সাইকেল-স্মার্টফোন-ঋণকার্ড, কৃষকবন্ধু, নিখরচায় রেশন, বিভিন্ন পেনশন-বৃত্তি প্রকল্পে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে। অভিজ্ঞ কর্তাদের একাংশের মতে, এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ইঙ্গিত—আসন্ন বাজেটে সামাজিক ক্ষেত্রের উপরেই দেওয়া হতে পারে সবচেয়ে বেশি জোর।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)