সন্ত্রাস মোকাবিলায় ভারতের সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আজ, মঙ্গলবার উত্তপ্ত হতে পারে রাজ্য বিধানসভা।
সেনাবাহিনীর কৃতিত্বকে সম্মান জানাতে এই প্রস্তাব এলেও তা ‘অনেক দূর’ গড়ানোর ইঙ্গিত রয়েছে বর্তমান রাজনৈতিক আবহে। সে ক্ষেত্রে জন্মু-কাশ্মীরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার প্রসঙ্গ আসার সম্ভাবনা রয়েছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্যে। একই ভাবে মুর্শিদাবাদের হিংসার প্রেক্ষিতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন নিয়েও সরকারকে বিদ্ধ করতে প্রস্তুত বিরোধী বিজেপি।
সেনাবাহিনীর প্রতি সম্মান জানাতে বিধানসভার অধিবেশনে এই ‘ব্যতিক্রমী’ প্রস্তাব আনছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রস্তাব নিয়ে বিতর্কে আজ অংশগ্রহণ করার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। সেই সঙ্গেই সরকার পক্ষের বক্তা তালিকায় চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ব্রাত্য বসু, বিরবাহা হাঁসদা, মধুপর্ণা ঠাকুর ও মোশারফ হোসেনের নাম ঠিক করে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে খবর, এই আলোচনায় দলের বক্তাদের মন্তব্য ‘বিতর্কহীন’ রাখার জন্য তৃণমূল সতর্ক থাকলেও ইতিমধ্যেই দলের নিশানা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযানের ওই নামকরণ (‘সিঁদুর’) এবং তার পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মমতার সমালোচনায় তৃণমূলের আক্রমণাত্মক মেজাজই স্পষ্ট।
এই বিতর্কের আগে অধিবেশনের প্রথম দিনেই দলের লক্ষ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে বিজেপির পরিষদীয় দল। বিধানসভার শোক-প্রস্তাবে মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনায় নিহত বাবা-ছেলের নাম না থাকায় তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ‘সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতিত্ব’ করার অভিযোগ বিজেপি। বিধানসভা চত্বরে বি আর অম্বেডকরের মূর্তির নীচে এ দিন বিরোধী দলের সচেতক শঙ্কর ঘোষের নেতৃত্বে বিজেপির বিধায়কেরা কিছু ক্ষণ এই নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। পরে তাঁরা মুর্শিদাবাদে নিহত বাবা-ছেলের নামে নিজেরা শোক-প্রস্তাব পাঠ করেছেন। শঙ্করের অভিযোগ, ‘‘পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় কেবল হিন্দু হওয়ার জন্য মালদহ ও মুর্শিদাবাদে যে হিংসার শিকার হতে হয়েছে, বিধানসভায় তার জন্য কোনও শোক নেই। আমরা তার প্রতিবাদ করছি।’’ অধিবেশন শুরুর দিনে প্রথামাফিক যে শোক-প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, তাতে জম্মুর উধমপুরে নিহত সেনা জওয়ান (প্যারা কম্যান্ডো) ঝন্টু আলি শেখের নামও না থাকায় অস্বস্তি তৈরি হয়েছে শাসক শিবিরে। স্পিকার অবশ্য বলেছেন, ‘‘পহেলগামে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। আলাদা কারও নাম নেওয়া হয়নি।’’
সেনা সংক্রান্ত আলোচনার দিন, মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই বিষয়টি নিয়ে সুর চড়াতে পারেন শুভেন্দুরা। তাতে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল এক পুলিশ আধিকারিককে যে চূড়ান্ত আপত্তিকর হুমকি দিয়েছেন, তা নিয়েও শোরগোল করতে পারেন তাঁরা। সেই লক্ষ্যে শঙ্কর ছাড়াও বিজেপির বক্তা তালিকায় রাখা হয়েছে অগ্নিমিত্রা পাল, অশোক লাহিড়ীকে। শাসক দলের ভূমিকা, আগামী বিধানসভা নির্বাচন সংক্রান্ত নানা বিষয়েই এ দিন বোলপুরে ‘নারী সম্মান যাত্রা’য় গিয়ে সুর চড়িয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। বিধানসভার গত অধিবেশনেও মুখোমুখি বিতর্কে জড়িয়েছিল শাসক ও বিরোধীরা। বাজেট বিতর্কের দফাওয়াড়ি সেই আলোচনা উত্তপ্ত হয়েছিল মমতা ও শুভেন্দুদের ধর্মীয় চাপানউতোরে। এ বারের আলোচনার প্রস্তাবক হিসেবে স্পিকারের বক্তব্য, ‘‘এটা তো সেই অর্থে কোনও বিতর্কের প্রস্তাব নয়। ভারতীয় সেনার কৃতিত্বে আমরা গর্বিত। তাকে সম্মান জানাতে যাঁর যা বলার আছে, তিনি তা বলবেন।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)