বাড়িতে বসে বেআইনি পিস্তল পরিষ্কার করছিল বাবা। আচমকা গুলি ছিটকে লাগে এক মাত্র সন্তানের কপালে। বৃহস্পতিবার সকালে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির ওই ঘটনায় বাঁচানো যায়নি বছর আড়াইয়ের সাহেব শেখকে। যত ক্ষণে ডোমকল হাসপাতালে যখন সাহেবকে নিয়ে যাওয়া হয় ততক্ষণে মারা গিয়েছে ওই শিশু। এই ঘটনার পরে ওই শিশুর বাবা, এলাকায় তৃণমূলের কর্মী বলে পরিচিত হাসিবুলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কিন্তু এ দিন রাত পর্যন্ত ওই পিস্তলটি পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি।
বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা জলঙ্গি-ডোমকলে নির্বাচনী সন্ত্রাস নতুন নয়। গত কয়েক দিনে পদ্মাপাড়ের এই দুই ব্লকে বোমা ও অস্ত্র উদ্ধারের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। ভোটের দিন বিশেষ ‘অপারেশন’-এর জন্য ওপার বাংলা থেকে দুষ্কৃতী ভাড়া করে নিয়ে আসা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনের এখনও বেশ কয়েক দিন বাকি। কিন্তু ইতিমধ্যেই সিঁটিয়ে রয়েছে ওই দুই জনপদের বহু এলাকা। এর মধ্যেই এ দিন সকাল দশটা নাগাদ পিস্তলের শব্দে চমকে ওঠে জলঙ্গির নছেরেরপাড়া।
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকালে বাড়িতে বসে তাঁর পিস্তলটি পরিষ্কার করছিল হাসিবুল। পাশেই খেলা করছিল তাঁর একমাত্র সন্তান সাহেব। সেই সময় হঠাৎই পিস্তল থেকে গুলি ছিটকে লাগে সোজা সাহেবের কপালে। গুলির শব্দ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন পড়শিরা। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগে তড়িঘড়ি একটি মোটরবাইকে সাহেবকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সাদিখাঁরদেয়ার গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখান থেকে ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন শিশুটি মারা গিয়েছে।
ডোমকল মহকুমা হাসপাতালের সুপার প্রবীর মাণ্ডির দাবি, ‘‘তাঁরা ময়নাতদন্তের কথা বলতেই সেখান থেকে মৃত শিশুটিকে সঙ্গে নিয়ে চম্পট দেয় সঙ্গে আসা লোকজনেরা। ফলে ওই শিশুর নাম-ঠিকানা কিছুই আমরা জানতে পারিনি। গোটা বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে জানানো হয়েছে।’’ জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর এই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘খুন ও বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে হাসিবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি অস্ত্র কারবারের সঙ্গে জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিশুটির দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।’’
এই ঘটনার পর থেকেই পেশায় বস্ত্র ব্যবসায়ী হাসিবুলের বাড়ি তালাবন্ধ। তবে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন পড়শিরা। তাঁদের অভিযোগ, হাসিবুলের অপরাধের মাসুল দিতে হল ফুটফুটে ছোট্ট ছেলেটাকে। নিজেকে তৃণমূলের কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করত হাসিবুল। তৃণমূল অবশ্য হাসিবুলকে তাদের দলের কর্মী বলে মানতে রাজি নয়। জলঙ্গি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মোহিত দেবনাথ বলেন, ‘‘আমাদের দলে ও সব লোকের কোনও
জায়গা নেই। অস্ত্রের কারবারে পটু সিপিএম। তারাই এমন কাণ্ড করে নাটক করছে।’’
জলঙ্গি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের সাইফুল মোল্লা বলেন, ‘‘ভোটের আগে ডোমকল-জলঙ্গিতে কারা অস্ত্রে শান দিচ্ছে, কারা আগ্নেয়াস্ত্র মজুত রাখছে তা তামাম রাজ্য জানে। সিপিএমের ঘাড়ে দোষ চাপালে ঘোড়াতেও হাসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy