প্রতীকী ছবি।
জ্বরে আক্রান্ত সাড়ে সাত বছরের শিশুটির রক্তপরীক্ষায় ডেঙ্গির ভাইরাস ‘এনএস১ হাই পজিটিভ’ পাওয়া গিয়েছিল। চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে ডেঙ্গি-আক্রান্ত বলে উল্লেখও করেছিলেন। কিন্তু সোমবার সকালে তার মৃত্যুর পরেই রোগ বদলে গেল বেমালুম! মৃতের বাবা নিউ টাউন থানায় হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতি এবং তথ্য গোপনের অভিযোগ করেছেন।
মৃতের পরিবার জানাচ্ছে: সাড়ে সাত বছরের সাইসা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু ঘোষণার পরেই হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, লিভারের সমস্যায় মারা গিয়েছে সে। তবে মৃত্যুর সাড়ে সাত ঘণ্টা পরে হাসপাতাল থেকে দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃৎপিণ্ডের পেশির সমস্যা, লিভারের সমস্যা ও ‘ডেঙ্গির মতো অসুস্থতা’র উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিবারের তরফে জানানো হয়, দিন পাঁচেক আগে জ্বরে আক্রান্ত হয় শিলিগুড়ির বাসিন্দা সাইসা। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকেরা জানান, ভাইরাল সংক্রমণ হয়েছে। হাতে-পায়ে যন্ত্রণা বাড়তে থাকায় তাকে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
চিকিৎসকেরা জানান, কলকাতায় তাঁদের হাসপাতালের একটি শাখা রয়েছে। সেখানে নিয়ে গেলে আরও ভাল পরিষেবা পাওয়া যাবে। শনিবারেই বিমানে সাইসাকে নিয়ে কলকাতায় পৌঁছন তার বাবা শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মা দেবিকাদেবী। বিমানবন্দর থেকেই সরাসরি পৌঁছে যান রাজারহাটের সেই শাখায়। শনিবার রাতে সাইসাকে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়।
সাইসার রক্ত পরীক্ষা করা হয় রবিবার। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, শিশুটির রক্তে এনএস১ হাই পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। সোমবার সাইসার মৃত্যুর পরে তার আত্মীয় সৌরজিৎ দাস বলেন, ‘‘বাচ্চাটা মারা গেল। সেই যন্ত্রণা সামলাব, নাকি ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে লড়াই করতে হবে! শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায় পাঠাল। তার পরে যে-ধরনের আচরণ করা হল, সেটা কি মানবিক? সাত ঘণ্টা পরেও হাসপাতাল মৃত্যুর কারণ নিয়ে জটিলতার কথা বলেছে!’’
দেবিকাদেবীর প্রশ্ন, ডেঙ্গি না-লিখে ডেথ সার্টিফিকেটে ‘ডেঙ্গির মতো অসুস্থতা’ লেখা হল কেন? সাইসা যদি হৃৎপিণ্ড ও লিভারের সমস্যায় মারা যায়, তা হলে চিকিৎসা চলাকালীন এই রোগের কথা কেন পরিবারকে জানানো হল না?
রাজারহাটের ওই হাসপাতালের সহ-সভানেত্রী রুনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডেঙ্গি যে নিশ্চিত, সেই রিপোর্ট ডেথ সার্টিফিকেট লেখার আগে আমাদের হাতে ছিল না। তাই সে-কথা লেখা হয়নি। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরে পরিবারের হাতে অন্য একটি নথি তুলে দেওয়া হয়েছে।’’ রক্তপরীক্ষার রিপোর্টেই তো ‘এনএস১ হাই পজিটিভ’-এর কথা বলা হয়েছিল। তা হলে ডেঙ্গির রিপোর্ট ছিল না বলা হচ্ছে কেন? সদুত্তর নেই হাসপাতালের কাছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, বিভিন্ন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ যে ডেঙ্গির তথ্য গোপন করতে চাইছেন, এ দিনের ঘটনায় সেটা ফের প্রমাণিত হল। গত বছরেও দক্ষিণ কলকাতার একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছিল।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গি লেখার আগে বেসরকারি হাসপাতালকে স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, সেই পরামর্শের পরেই কি সাইসার ‘এনএস১ হাই পজিটিভ’ রিপোর্ট ‘ডেঙ্গির মতো অসুস্থতা’য় বদলে গেল?
স্বাস্থ্যকর্তারা এই সব প্রশ্ন বা যুক্তিকে আমল দিচ্ছেন না। তাঁরা জানান, তথ্য গোপনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্যই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডেঙ্গি-আক্রান্তের মৃত্যুর পরে দ্রুত স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘বেসরকারি হাসপাতাল কী লিখল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্বাস্থ্য ভবন নথি যাচাই করে যা বলবে, সেটাই চূড়ান্ত। তাই বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলে তথ্য গোপনের চেষ্টার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy