বাড়ি তৈরির জন্য ব্যাঙ্ক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (নন-ব্যাঙ্কিং ফাইন্যান্স কোম্পানি বা এনবিএফসি) মাধ্যমে ভাসমান সুদে ঋণ নিয়েছিলেন এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) রেপো রেট ৫.২৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরও কমেনি তাঁর সুদের হার। শুধু তা-ই নয়, ২০ বছরের মেয়াদও কমায়নি ঋণদাতা নন-ব্যাঙ্কিং ফাইন্যান্স সংস্থাটি। বছরের শুরু থেকে রেপো রেট চার বার কমানো হয়েছিল, যার ফলে রেপো রেট ৫.২৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অথচ নন ব্যাঙ্কিং সংস্থাটি গৃহঋণের সুদের হারে কোনও পরিবর্তন আনেনি বলে অভিযোগ ঋণগ্রহীতার। তিনি একাধিক বার ইমেল করে বিষয়টি নিয়ে স্বচ্ছতা প্রকাশ করার জন্য সংস্থাকে অনুরোধ করেন। আবেদনের কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত ওই তরুণের। তাঁর অভিযোগ, যত বার গৃহঋণের সুদের হার বৃদ্ধি হয় তত বারই সেই বিষয়ে ইমেল করে জানায় সংস্থা। কিন্তু যখন রেপোরেটে চারটি বড় ধরনের কাটছাঁট করা হয়েছে, তখন সংস্থাটি এ বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি।
কেন এই নিয়ম লঙ্ঘন? আর্থিক বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সাধারণত সুদের হার কমানোর পরের সপ্তাহেই ঋণে সুদের হারের পরিবর্তন আনে। অন্যান্য বেসরকারি ব্যাঙ্ক এবং বহুজাতিক সংস্থাগুলির তাদের পরবর্তী ত্রৈমাসিকের ১৫ তারিখের মধ্যে সুদের হার কমানো উচিত।
আরবিআইয়ের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এনবিএফসি-র উপরের স্তরগুলি ব্যাঙ্ক ঋণ এবং আমজনতার আমানতের উপর ব্যাপক ভাবে নির্ভরশীল। যখন ব্যাঙ্কগুলি সুদের হার হ্রাস করতে দেরি করে, তখন এনবিএফসি ঋণগ্রহীতারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। ২০২৫ সালে চার বার রেপো কমা সত্ত্বেও গৃহঋণদাতারা হার কমানোর পরিবর্তে তাদের ‘মার্জিন’ বাড়িয়েছে। মার্জিন হল ঋণগ্রহীতার ঝুঁকির উপর ভিত্তি করে একটি বেঞ্চমার্ক হারের (যেমন রেপো রেট) উপরে বসানো অতিরিক্ত সুদ। সে কারণে ঋণগ্রহীতারা রেপো রেট হ্রাসের সামগ্রিক সুবিধা পেতে পারেন বা না-ও পেতে পারেন। কারণ ব্যাঙ্কগুলি ঋণের উপর উচ্চহারে ‘মার্জিন’ যুক্ত করেছে। এর অর্থ ব্যাঙ্কগুলি আইনত দাবি করতে পারে যে নির্দিষ্ট ব্যক্তিরা ঋণ নিচ্ছেন তাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ব্যাঙ্ক মুনাফার হিসাব পরিষ্কার রাখার জন্য ‘মার্জিন’ বসিয়ে চলতে চায়।
আরও পড়ুন:
আর্থিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুদ কমাতে না চাইলে অন্য ব্যাঙ্কে ঋণ স্থানান্তর করে নিতে পারেন ঋণগ্রহীতা। যে প্রতিযোগিতামূলক সুদের হার তিনি অন্য ব্যাঙ্কে পাচ্ছেন তা তাঁর ঋণদাতা সংস্থাকে জানাতে পারেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই কৌশল কাজে লেগে যায়। প্রতিযোগিতার বাজারে গ্রাহক হারাতে চায় না কোনও সংস্থাই।