Advertisement
E-Paper

আঙুলও ধরেছিল ছেলেটা, পারলাম না তা-ও

গলানো পিচ ভর্তি ট্যাঙ্কারের নীচে চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া গাড়িটার জানলা থেকে বেরিয়ে আছে ছোট্ট হাত। কচি গলার আর্তনাদ ভেসে আসছে—‘আঙ্কল, আঙ্কল... হেল্প মি’!

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৭ ০৩:৩৩
ছারখার: দেহে সাড় নেই। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি থেকে বার করে আনা হচ্ছে আরভকে। —নিজস্ব চিত্র

ছারখার: দেহে সাড় নেই। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি থেকে বার করে আনা হচ্ছে আরভকে। —নিজস্ব চিত্র

গলানো পিচ ভর্তি ট্যাঙ্কারের নীচে চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া গাড়িটার জানলা থেকে বেরিয়ে আছে ছোট্ট হাত। কচি গলার আর্তনাদ ভেসে আসছে—‘আঙ্কল, আঙ্কল... হেল্প মি’!

‘আঙ্কল’রা আছেন কাছেই। এক বা দু’জন নয়, অনেক ‘আঙ্কল’। কেউ হাতপাখা নিয়ে ছুটছেন, কেউ জল নিয়ে। কারও চোখ দিয়ে ঠেলে আসছে কান্না। কিন্তু, ছ’বছরের ছেলেটাকে বের করতে পারছেন না কেউ। গাড়ি একটু নড়ালেই যে গরম পিচ এসে পড়ছে হাতে-গায়ে!

বুধবার বর্ধমানের রথতলায় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনার পরে সেই দুমড়ে যাওয়া গাড়িতে তিন ঘণ্টা বেঁচে ছিল আরভ সিংহ। নিথর বাবা, মা, দাদু, ঠাকুমা, দুই দিদির মধ্যে থেকেও টানা বাঁচার আর্তি জানাচ্ছিল। তবে যাঁদের উদ্দেশে আর্তি, তাঁদেরও যে খুব কিছু করার ছিল, তা নয়। কাছে গেলেই গরম পিচের হল্কা। যতক্ষণ না ওই ট্যাঙ্কার তোলা যাচ্ছে, ততক্ষণ দমকল ও পুলিশের কাছে গিয়ে ‘স্যার একটু তাড়াতাড়ি করুন না’ বা ‘বাচ্চা ছেলেটা বোধহয় মরেই যাবে এ বার’ বলা ছাড়া উপায় ছিল না তাঁদের।

আরও পড়ুন: ফের দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে, গরম পিচের ট্যাঙ্কার উল্টে গাড়িতে, মৃত ৭

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রথমে তাঁরা বুঝতেই পারেননি ওই ট্যাঙ্কারের নীচে গাড়ি চাপা পড়ছে। ভেবেছিলেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে উঠে উল্টে গিয়েছে ট্যাঙ্কারটি। কিন্তু, ধোঁয়ায় একটু চোখ সইয়ে কাছে যেতেই ঘটনার বীভৎসতা বোঝেন তাঁরা। চারিদিকের চিৎকার ছাপিয়ে ওঠে হাওড়ার গোলাবাড়ির বাসিন্দা আরভের গলা। প্রত্যক্ষদর্শী সুমনা কর্মকারের দাবি, সকাল ন’টা নাগাদ দুর্ঘটনার পরে অন্তত আড়াই-তিন ঘণ্টা বেঁচেছিল আরভ। পাশের ইটভাটা কলোনি, আমবাগানপল্লির লোকেরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। প্রাণ যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত আরভ কতটা যন্ত্রণা ভোগ করেছে, সেটা ভেবেই তাঁদের গলা বুজে আসছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গাড়িতে মা রেশমির কোলে ছিল আরভ। দুর্ঘটনার পরে মায়ের গায়ের উপর শুয়েই চেঁচাচ্ছিল। ওকে বের করতে এগিয়ে এসেছিলেন দীনবন্ধু রায়। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেটা আমার আঙুল ধরেছিল। কিন্তু, কিছুই করতে পারছিলাম না।’’

Asphalt Loaded Tanker Children
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy