Advertisement
E-Paper

সুদের ব্যবসা থেকেই অনর্থ, ধারণা সিআইডির

পুলিশকর্মীর সুদের ব্যবসায় নয় নয় করে খাটছিল প্রায় দশ কোটি টাকা। কৃষ্ণনগরের পালপাড়ায় পুলিশ কনস্টেবল রমাপ্রসাদ চন্দ ও তাঁর স্ত্রী জয়ন্তী চন্দ খুনের তদন্তে নেমে এমনই তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি সিআইডি-র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৫ ০৪:৪৬
রমাপ্রসাদ চন্দর বাড়িতে তদন্তে সিআইডি।— নিজস্ব চিত্র।

রমাপ্রসাদ চন্দর বাড়িতে তদন্তে সিআইডি।— নিজস্ব চিত্র।

পুলিশকর্মীর সুদের ব্যবসায় নয় নয় করে খাটছিল প্রায় দশ কোটি টাকা। কৃষ্ণনগরের পালপাড়ায় পুলিশ কনস্টেবল রমাপ্রসাদ চন্দ ও তাঁর স্ত্রী জয়ন্তী চন্দ খুনের তদন্তে নেমে এমনই তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি সিআইডি-র। প্রায় বছর আঠারো ধরে চলা এই সুদের ব্যবসাই অনর্থের কারণ বলে প্রাথমিক তদন্তে ধারণা গোয়েন্দাদের। ফলে, জেলা পুলিশের ‘স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ’(এসওজি)-এর ওই কনস্টেবল কী ভাবে এই বিপুল টাকার অধিকারী হয়ে উঠলেন, তা খুঁড়ে দেখা হচ্ছে এখন। সেই সঙ্গেই উঠছে প্রশ্ন, ওই পুলিশকর্মী দীর্ঘদিন এই সুদের ব্যবসা চালালেন কী ভাবে?

মঙ্গলবার গভীর রাতে জানলার গ্রিল খুলে বাড়ির ভিতরে ঢুকে ওই দম্পতিকে বেঁধে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে, দু’টি ঘর তছনছ করে চলে যায় আততায়ীরা। বুধবার একটি ঘরের আলমারি থেকে নগদ প্রায় সাড়ে ১৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে জেলা পুলিশ। মেলে সাতটি-জমি বাড়ির দলিল।

বুধবার রাত থেকে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। সে রাতেই তল্লাশি চালিয়ে বাড়িটি থেকে ওই দম্পতির নামে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার ‘ফিক্সড ডিপোজিট’-এর নথি পান গোয়েন্দারা। মেলে বহু ‘পোস্ট ডেটেড চেক’ ও সুদে টাকা ধার দেওয়া সংক্রান্ত বহু স্ট্যাম্প পেপার। তাতে লেখা, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধারের টাকা ফেরত না পেলে রমাপ্রসাদবাবু ওই চেক ভাঙিয়ে টাকা তুলে নেবেন। ছিল কিছু ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ও। কৃষ্ণনগরের প্রায় সব সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখার পাশবই, কলকাতার রাজারহাট-নিউটাউনের কিছু ব্যাঙ্কের পাশবই (সব মিলিয়ে ৩৩টি) উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ সমবায়ের আমানতকারী হিসেবে দম্পতির দু’টি সদস্য-কার্ড, পোস্ট অফিসে একাধিক এবং শক্তিনগরে একটি সমবায় ব্যাঙ্কে যৌথ ‘রেকারিং ডিপোজিট’-এর কাগজও পাওয়া গিয়েছে। রাজারহাটে চন্দ দম্পতি একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন বলেও জেনেছেন গোয়েন্দারা।

এ সব ছাড়াও মিলেছে একটি ডায়েরি—তাতে রমাপ্রসাদবাবু যাঁদের টাকা ধার দিয়েছিলেন, তাঁদের নাম ও ধারের অঙ্ক লেখা রয়েছে। সেই তালিকায় যেমন চপের দোকানের মালিক, মুরগির দোকানদারের নাম আছে, তেমনই রয়েছে বড় বড় প্রোমোটার, ঠিকাদার, বা ব্যবসায়ীর নামও। সিআইডি সূত্রের দাবি, ‘‘উদ্ধার হওয়া কাগজপত্র এবং ডায়েরি মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত আমরা যা হিসেব পাচ্ছি, তাতে রমাপ্রসাদবাবু অন্তত দশ কোটি টাকা সুদে খাটাচ্ছিলেন। ওই দম্পতির সম্পত্তির পরিমাণ আরও বেশি। এখন এই অর্থের উৎস সন্ধান করাটাও জরুরি হয়ে পড়েছে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, রমাপ্রসাদবাবুর মাসিক বেতন ছিল ৩০-৩১ হাজার টাকা। কিছু জমি এবং পালপাড়ায় একতলা বাড়ি পেয়েছিলেন পৈতৃক সূত্রে। গোয়েন্দাদের দাবি, পড়শি এবং সহকর্মীদের একাংশের সঙ্গে কথা বলে তারা জেনেছেন, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে রমাপ্রসাদবাবু সুদের ব্যবসা শুরু করেন। মূলধন বলতে ছিল—জয়ন্তীদেবীর প্রথম পক্ষের বিবাহ সূত্রে পাওয়া বাড়ি বিক্রির টাকা। গোড়া থেকেই মাসে ১০ শতাংশ হারে সুদ নিতেন রমাপ্রসাদ। পুলিশকর্মী বলে তাঁর থেকে ধার নিয়ে টাকা মেরে দেওয়ার সাহস প্রায় কারও ছিল না। কিন্তু তার পরেও ১০ কোটি টাকা বাজারে খাটানোর মতো সঙ্গতি ওই পুলিশকর্মীর কোথা থেকে হল, সে হিসেব মিলছে না গোয়েন্দাদের।

অঙ্ক মেলাতে ডায়েরিতে লেখা নামগুলি থেকে সন্দেহভাজনদের একটি তালিকা তৈরি করেছে সিআইডি। এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, ‘‘মনে রাখতে হবে, ঘটনাস্থল থেকে বহু লক্ষ টাকা নগদ মিলেছে। মনে করা যেতেই পারে, টাকা নেওয়া বা লুঠপাটের মতলবে হামলা হয়নি। কিন্তু ঘরগুলো যে ভাবে তছনছ করা হয়েছে, তাতে আমাদের অনুমান, আততায়ীরা এমন কিছুর খোঁজে এসেছিল, যা সুদের ব্যবসার সূত্রে রমাপ্রসাদবাবুর কাছে ছিল।’’

কিন্তু এক জন পুলিশকর্মী এ ভাবে সুদের ব্যবসা চালিয়ে গেলেও তা পুলিশের নজর এড়াল কী করে? সহকর্মীদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, ‘‘এটা ‘ওপেন সিক্রেট’। সবাই
জানত, আবার কেউ জানত না। সে কারণেই হয়তো এত দিন কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’ তাঁরা জুড়ছেন, ‘‘বিপদে-আপদে অনেক সময় ওঁর থেকে ধার নিয়েছি। কিন্তু উনি যে এত বড় মাপের ব্যবসা ফেঁদেছেন, তা জানতাম না।’’

নদিয়ার পুলিশ সুপার ভরতলাল মিনা বলেন, ‘‘সিআইডি জোড়া খুনের তদন্ত করছে। কিন্তু আমরাও কী হয়েছে, না হয়েছে খোঁজ নিচ্ছি।’’ জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, স্থানীয় দুই সমাজবিরোধীকে আটক করে আপাতত জেরা করা হচ্ছে।

Krishna Nagar police Ramaprasad Chanda Nadia murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy