Advertisement
E-Paper

অপারেশন ভারতী ঘোষ, মাঠে নামল সিআইডি

ভারতীর নাকতলার বাড়ি ছাড়াও কালিকাপুরে ইএম বাইপাস সংলগ্ন তাঁর নির্মীয়মাণ বাড়িতে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত সিআইডি তল্লাশি চালায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:২১
ভারতী ঘোষ।

ভারতী ঘোষ।

বৃহস্পতিবার গভীর রাত। নাকতলার ডি পি পি রোডে সাজানো দোতলা বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নেমে কলিং বেল বাজাতে দরজা খুললেন গৃহস্বামী। তিনি প্রশ্ন করার আগেই আগন্তুকরা বললেন, ‘‘সিআইডি থেকে আসছি। তল্লাশি চালাব।’’

গৃহকর্ত্রী বাড়ি নেই। তিনি আবার যে সে লোক নন! এই সে দিনও তাঁর দাপটে পশ্চিম মেদিনীপুরে সিঁটিয়ে থাকতেন শাসক দলের নেতারাও। মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি ডাকতেন ‘মা’ বলে। সম্প্রতি অবশ্য তাঁর দিন গিয়েছে। নবান্নের বিরাগভাজন হয়ে ছেড়ে দিয়েছেন পুলিশের চাকরি। আর তার পরেই সোনা কারবারের পুরনো মামলায় সিআইডি-র নিশানায় ভারতী ঘোষ।

ভারতীর নাকতলার বাড়ি ছাড়াও কালিকাপুরে ইএম বাইপাস সংলগ্ন তাঁর নির্মীয়মাণ বাড়িতে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত সিআইডি তল্লাশি চালায়। পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক জায়গায়, বীরভূমে ‘ভারতী-ঘনিষ্ঠ’ কয়েক জন পুলিশ অফিসারের বাড়ি, কোয়ার্টারেও তল্লাশি চালানো হয়। গ্রেফতার হন ভারতীর ‘ঘনিষ্ঠ’ সোনার কারবারি দাসপুরের বিমল ঘোড়ই। কোয়ার্টার থেকে বেশ কিছু সোনা উদ্ধারের পরে ‘ক্লোজ’ করা হয় বেলদার ওসি প্রদীপ রথকে।

আরও পড়ুন: কলকাতায় ফিরেই আদালতে যাচ্ছি: ভারতী

সিআইডি কর্তারা মুখ খোলেননি। তবে সূত্রের দাবি, নাকতলার বাড়ি থেকে নগদ টাকা ও জমি-বাড়ির দলিল বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ভারতীর দেহরক্ষী সুজিত মণ্ডলের সোনারপুরের বাড়ি থেকেও মিলেছে সোনা, নগদ টাকা। সব মিলিয়ে ১২টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে নগদ ৬০ লক্ষ টাকা, ২ কেজি সোনা ও নথিপত্র বাজেয়াপ্ত হয়েছে। নাকতলার বা়ড়িটি ভারতীর স্বামী এম এ ভি রাজুর নামে। বাড়ির মালিকানা নিয়েও রাজুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

ভারতী ঘোষের নাকতলার বাড়ি তল্লাশি। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

পুলিশ সূত্রের খবর, ভারতী এখন পশ্চিম ভারতে রয়েছেন। ভারতীও এ দিন আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘আমি বাইরে রয়েছি। কেন এই তল্লাশি, তা জানানো হয়নি। ফোন কেড়ে স্বামীকে ঘরে আটকে বাড়ি লন্ডভন্ড করা হয়েছে। আইনজীবীদের সঙ্গেও কথা বলতে দেওয়া হয়নি। রাজ্যে ফিরে আদালতের দ্বারস্থ হব।’’ সিআইডি সূত্রে অবশ্য কোনও রকম বেআইনি কাজের অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, তল্লাশির পরে রাজুর মোবাইল ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

দাসপুরের চকচাঁইপাটের চন্দন মাজির অভিযোগের সূত্রেই এই তল্লাশি। চন্দন আগে মুম্বইয়ে সোনার কারবার করতেন। গ্রামে ফিরে রেস্তোরাঁ খোলেন। বৃহস্পতিবার ঘাটাল এসিজেএম আদালতে তিনি জানান, পুলিশ তাঁর অভিযোগ নিচ্ছে না। কী অভিযোগ?

আদালতে চন্দন জানান, ২০১৬-এর নভেম্বরে নোটবন্দির পরে বিমল তাঁকে বলেন, এখন সোনা বিনিয়োগ করলে পরে বাজার দরের দ্বিগুণ দাম মিলবে। এই স্কিমে দাসপুরের তৎকালীন ওসি প্রদীপ রথ ও জেলার কয়েক জন পুলিশ অফিসার আছেন। সোনা না দিলে পুলিশ কারবার বন্ধের হুঁশিয়ারিও দেয় বলে জানিয়েছেন চন্দন। তাঁর দাবি, তিনি ৩৭৫ গ্রাম সোনা দেন। কিন্তু দু’মাস পরে টাকা চাইতে দাসপুর থানায় গেলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়। তৎকালীন পুলিশ সুপার ভারতীর কাছে অভিযোগ করেও লাভ হয়নি।

দাসপুর থানার পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলে আদালত। সিআইডি তদন্তভার পায়। এক আইজি-র নেতৃত্বে বিশেষ দল গড়ে ৭২ জন সিআইডি অফিসার বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর, বেলদা, পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল, পটাশপুরে ছড়িয়ে পড়েন। বৃহস্পতিবার রাতেই চাঁইপাট থেকে গ্রেফতার করা হয় বিমলকে। এ দিন ঘাটাল আদালত তাঁকে ১০ দিনের জন্য সিআইডি হেফাজতে দেয়।

সিআইডি হানা

কোথায়

• নাকতলা এলাকায় ভারতীর বা়ড়ি

• কালিকাপুরে ই এম বাইপাসের ধারে ভারতীর নির্মীয়মাণ বাড়ি

• সোনারপুরে ভারতী-ঘনিষ্ঠের বাড়ি

• পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদায় ওসি প্রদীপ রথের কোয়ার্টার

• দাসপুরে সোনার কারবারি বিমল গড়াইয়ের বাড়ি

• পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে সিআই শুভঙ্কর দে-র কোয়ার্টারে মোট ১২টি জায়গায়

কখন

• বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত তল্লাশি দলে ক’জন

• কলকাতায় ৬-৭

• জেলায় প্রতি দলে ৪-৫ বাজেয়াপ্ত

• নগদ ৬০ লক্ষ টাকা, দু’কেজি সোনা, জমি-বাড়ির দলিল, ব্যাঙ্কের পাশবুক-সহ অন্যান্য নথি

এ দিন সকালে বেলদার ওসির কোয়ার্টারে তল্লাশি চালিয়ে সোনা উদ্ধার হয়। তাঁর পটাশপুরের বাড়িতেও তল্লাশি চলে। সিআইডি জেরার কথা মানছেন মহিষাদলের সিআই শুভঙ্কর দে। তিনি এক সময় ঘাটালের সিআই ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে বীরভূমের রামপুরহাটের চকমণ্ডলা গ্রামে কেশিয়াড়ি থানার সাব ইন্সপেক্টর চিত্ত পালের বাড়িতে হানা দেয় সিআইডি। বছর দেড়েক আগে তিনি ঘাটালের ওসি ছিলেন। পরে ডেবরা থানায় যান। চিত্তবাবু অবশ্য বাড়িতে ছিলেন না।

এ দিন তল্লাশির সময় ভারতীর বাড়ির কাছের রাস্তায় ছিল ব্যারিকেড। প্রাক্তন পুলিশের বাড়িতে সিআইডি-র তল্লাশি দেখতে ভিড়ও জমেছিল বিস্তর। যাঁর অভিযোগ ঘিরে এত কাণ্ড, সেই চন্দন এ দিন কিছুই বলতে চাননি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘যা জানানোর আদালতেই জানিয়েছি।

Bharati Ghosh CID Raid IPS Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy