শুরু থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ দাবি করে এসেছে, তদন্ত এগোচ্ছে সঠিক পথে। বিস্তর জাল বিছিয়ে আইটিআই ছাত্র কৌশিক পুরকাইত খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা তাপস মল্লিককে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করে সে কথার মান রেখেছে তারা। কিন্তু ঘটনা হল এই গ্রেফতারের কিছুক্ষণ পরে, শুক্রবার সকালেই নবান্ন থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, খুনের মামলার তদন্তভার দেওয়া হল সিআইডিকে।
এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ কর্তাদের একাংশ। যদিও মুখে কুলুপ এঁটেছেন তাঁরা। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
এখানেই বিরোধীরা নতুন করে সমালোচনার ইন্ধন পাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যে সদ্য শেষ শেষ হওয়া ভোটপর্ব থেকে জেলা পুলিশের একাংশ মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের একের পর এক কড়া অবস্থান তাঁদের মনোবল জুগিয়েছে। ভোটপর্ব মেটার পরেও টেবিলের তলায় লুকনো পুরনো চেহারাটায় ফিরতে রাজি নন তাঁদের অনেকেই। এমনকী, টাকার প্রলোভনেও যে তাঁদের ইদানীং টলানো যাচ্ছে না, তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে তাপস মল্লিক খুনের তদন্ত। মামলা ‘ম্যানেজ’ করতে ওই তৃণমূল নেতার দেওয়া মোটা টাকার প্রস্তাব ফিরিয়ে তৃণমূল নেতা তাপসকে গ্রেফতার করার হিম্মত দেখিয়েছেন তাঁরা।
এই অবস্থায় মামলা রাজ্য পুলিশের হাতে থাকলে তৃণমূলের বিপদ বাড়তে পারে বলে মনে করেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, ডায়মন্ড হারবারের ডক এলাকা থেকে কোটি কোটি তোলাবাজির টাকা তাপস মারফত দলের কোন শীর্ষ স্তরে পৌঁছত, কেঁচো খুঁড়তে সে সব কেউটে ফনা তুলবে কিনা, তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে শাসক দলকে। তার উপরে, ১৯ মে ভোটের ফলাফলে রাজ্য সরকারের গদি নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে বলেও ইঙ্গিত মিলছে নানা সূত্রে। এই পরিস্থিতিতে মামলাটি তড়িঘড়়ি রাজ্য পুলিশের হাত থেকে সরিয়ে সিআইডি-র হাতে দিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। এই প্রসঙ্গেই তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ভারতী ঘোষ এখন সিআইডি-র গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন!
তবে এই ঘটনায় তৃণমূল নেতা তাপসের নাম জডিয়ে যাওয়ায় দল যে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, তা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বক্তব্যে স্পষ্ট। যে ঘটনা নিয়ে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় চলছে, তা নিয়ে এ দিন কোনও মন্তব্যই করতে চাননি তিনি। পার্থবাবু বলেন, ‘‘জেলা তৃণমূলের কাছ থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করার পরেই এ নিয়ে মন্তব্য করব।’’
তৃণমূলের এই অবস্থান বিরোধীদের অস্ত্র জুগিয়েছে। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ী বলেন, ‘‘এ ধরনের নেতারা শাসকদলের সম্পদ। খুন- তোলাবাজি এদের পেশা। এখন এরা মানুষ খুন করতে পিছুপা হচ্ছে না।’’
সরকারের সিদ্ধান্তে খুশি নয় নিহত ডায়মন্ড হারবারের ছাত্র কৌশিক পুরকাইতের পরিবারও। সোমবার রাতে হরিণডাঙা পঞ্চায়েতের পশ্চিমপাড়া গ্রামের কিছু লোক কৌশিককে পিটিয়ে খুন করে। মোষ চুরির অপবাদে মা-মাসির সামনেই নৃশংস ভাবে মারধর করা হয় তাঁকে। মারধরের মূল হোতা হিসাবে উঠে আসে তাপসের নাম।
কৌশিকের বাবা কার্তিকবাবু এ দিনও বলেন, ‘‘সিবিআই তদন্ত করলেই ভাল।’’ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাপসকে পুলিশ ধরতে না পারায় অসন্তুষ্ট পরিবারটি সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছিল। তাপস ধরা পড়ার পরে কার্তিকবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ শেষমেশ মূল অভিযুক্তকে ধরতে পেরেছে, সেটা ভাল কথা। কিন্তু লঘু ভাবে যাতে মামলা সাজানো না হয়, সেটাও দেখার। সে জন্যই আমরা সিবিআই তদন্ত চাইছি।’’ অভিযুক্তেরা ছাড়া পেয়ে গেলে তাঁদের উপরে আক্রমণ হতে পারে বলে আশঙ্কা কৌশিকের মা চন্দ্রাদেবীর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy