দার্জিলিং, তরাই এবং ডুয়ার্সের গোর্খাদের নানাবিধ বিষয় নিয়ে কথোপকথন চালানোর জন্য অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস পঙ্কজকুমার সিংহকে নিয়োগ করেছে অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক এবং স্বেচ্ছাচারী’ বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আবার চিঠি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি তাঁর আর্জি, কেন্দ্রীয় মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের সিদ্ধান্ত যাতে প্রত্যাহার করা হয়।
পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করেছে কেন্দ্র। তার বিরোধিতা করে গত মাসেই মোদীকে চিঠি লেখেন মমতা। তাঁর বক্তব্য ছিল, গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) এলাকার প্রশাসন, শান্তিরক্ষার বিষয় সরাসরি রাজ্য সরকারের আওতাভুক্ত। কিন্তু তা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা করা হয়নি। একতরফা ভাবে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করা হয়েছে, যা সংবিধানের অন্যতম ভিত্তি যুক্তরাষ্ট্রীয় ভাবনার উপর আঘাত। সোমবার প্রধানমন্ত্রীকে যে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, তার বিষয়বস্তুও একই।
আগের চিঠিতেই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘‘মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের বিষয়ে আপনার হস্তক্ষেপের পরেও, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ১০ নভেম্বরের একটি চিঠিতে জানিয়েছে যে, মধ্যস্থতাকারীর দফতর ইতিমধ্যেই কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। এটা বিস্ময়কর।’’ মমতার অভিযোগ, এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এতে পাহাড়ের শান্তি এবং স্থিতাবস্থা নষ্ট হতে পারে।
আশির দশকে সুবাস ঘিসিংয়ের আন্দোলনের সময় তৎকালীন কংগ্রেস সরকার দার্জিলিঙের দলীয় সাংসদ ইন্দ্রজিৎ খুল্লারকে এই রকম দায়িত্ব দিয়েছিল। পরে ২০০৯ সালে ইউপিএ আমলেও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিজয় মোহন এই দায়িত্বে ছিলেন। তবে ২০১১ সালে জিটিএ চুক্তির আগে তিনি পদত্যাগ করেন। দু’বারই পৃথক রাজ্যের দাবিতে পাহাড়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, এই মুহূর্তে তেমন পরিবেশ না থাকায় কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন রয়েছে।
২০১১ সালে পাহাড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যস্থতায় জিটিএ তৈরির কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা। আগের চিঠিতেই প্রধানমন্ত্রীকে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘গোর্খাদের নিজস্ব পরিচিতি বজায় রেখে, সব অংশের সম্প্রীতি রক্ষা করে পাহাড়ের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ভাষা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নই ছিল জিটিএর লক্ষ্য।’’
পাহাড় সম্পর্কিত ‘একক সিদ্ধান্ত’ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘পাহাড়ে কষ্টার্জিত শান্তির পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে গোর্খা বা জিটিএ সম্পর্কিত যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।’’