E-Paper

মোদীকে ‘পরিযায়ী’ বলে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ মমতার

গত সপ্তাহেই মেট্রো রেলের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। আলাদা মঞ্চে দলের রাজনৈতিক সভাও করেন তিনি। তবে দু’টি কর্মসূচিই শেষ পর্যন্ত জুড়ে গিয়েছিল বিজেপির ভোট-প্রস্তুতির সঙ্গে।

সৌমেন দত্ত , সুপ্রকাশ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৫ ০৪:৫৮
(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

ভোটের অভিমুখে রাজ্যে পরিবর্তনের বার্তা দিতে দমদমের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্লোগান দিয়েছিলেন— ‘বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই।’ চার দিনের মাথায় বধর্মানে প্রশাসনিক সভায় তার জবাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিলেন, ‘‘লড়ে নেব!’’

গত সপ্তাহেই মেট্রো রেলের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। আলাদা মঞ্চে দলের রাজনৈতিক সভাও করেন তিনি। তবে দু’টি কর্মসূচিই শেষ পর্যন্ত জুড়ে গিয়েছিল বিজেপির ভোট-প্রস্তুতির সঙ্গে। আর মঙ্গলবার বর্ধমানে সরকারি মঞ্চে প্রশাসনিক কর্মসূচি ও রাজনৈতিক বক্তব্য জুড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা। দুর্নীতি, কর্মসংস্থান এবং বাংলার অস্মিতা ও অগ্রগতি নিয়ে মোদী যে আক্রমণ করেছেন, তাকে একই ভাবে তাঁর নেতৃত্বাধীন বিজেপির দিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারকে সম্মান করি, তাঁরও উচিত আমাদের চেয়ারকে সম্মান করা।’’ এই প্রসঙ্গেই নির্বাচন কমিশনের প্রতি হুঁশিয়ারির সুরেই তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, ‘‘দয়া করে বিজেপির ললিপপ হবেন না! দেশের মানুষ ক্ষমা করবে না।’’

দুর্নীতির অভিযোগের জবাবে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘কেন বলবেন, এখানে সব চোর? ডাবল ইঞ্জিনের উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার সব চেয়ে বড় চোর!’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সেখানে ক’টা কেন্দ্রীয় দল পাঠিয়েছিলেন? এখানে ১৮৬টা দল পাঠানো হয়েছিল বাংলাকে অসম্মান করতে। সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরেও আপনারা নম্বর কাটছেন আর বাংলাকে চোর বলছেন!’’ তার পরেই মমতা বলেন, ‘‘চোরের সর্দারকে নিয়ে মিটিং করছেন! লজ্জা করে না? এদের দু’কানই কাটা।’’ ভোটের আগে রাজ্যে সফররত প্রধানমন্ত্রীকে ‘পরিযায়ী পাখি’র সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পরিবর্তনের স্লোগানের জবাবে লড়ে নেবেন জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘ভয় দেখিয়ে কিছু করা যাবে না।’’

কমিশনের সঙ্গে কেন্দ্রের শাসক দলকে এক সূত্রে গেঁথে যে আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রী করেছেন, তার প্রেক্ষিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘আমাদের রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হয়তো রাজ্য সরকারের ললিপপ কিংবা মুখ্যমন্ত্রীর ভেজে দেওয়া চপ, বেগুনি খেতে অভ্যস্ত! তাই মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন নিয়েও একই রকম ভাবছেন!’’

দমদমে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় রাজ্যের অস্মিতা ও উন্নতির কথাও এসেছিল বারবার। সেই প্রসঙ্গেই বর্ধমানে এ দিন বাংলাভাষী, বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি রাজ্যে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাকে সামনে রেখেছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের ২২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক আছেন। দয়া করে কেউ নিয়ে যায়নি, তাঁদের দক্ষতা আছে। এখন তাঁদের জুটছে অত্যাচার। হাবড়ার যে ভাইটিকে মুম্বইয়ে মারধর করেছিল, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বাংলায় অন্য রাজ্যের দেড় কোটি মানুষ আছেন। কিন্তু আমরা তাঁদের ভালবাসি।’’

জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ফের দাবি করেছেন, ‘‘বাংলা থেকে রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা দেশের যে প্রান্তেই যান না কেন, একই রকম অভ্যর্থনা পাবেন! আপনি বাংলাভাষী, বাঙালি-অধ্যুষিত যে কোনও বুথে খোঁজ নিন, দিল্লির করোলবাগ থেকে বিলাসপুর, রায়পুর, দেশের যে কোনও প্রান্তের যে কোনও একটি বুথের ফলাফল দেখুন, সেখানে বিজেপিকে হারানো তো দূরের কথা, বিরোধীরা জামানত রক্ষা করতে পারে না। ভিন্ রাজ্যের বাঙালিরা এ সব কথা শুনে হাসছে। আর অনুরোধ করছে, এই ধরনের বক্তব্য রেখে আমাদের সর্বনাশ করবেন না!’’

উন্নয়নের প্রশ্নে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারের পুরনো অভিযোগই এ দিন ফের সামনে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, ‘‘কেন্দ্র একশো দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প করেছি। ৭৮ লক্ষ লোককে জবকার্ড দেওয়া হয়েছে। ৯১ কোটির বেশি শ্রমদিবস তৈরি করা হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC BJP Migrant PM Narendra Modi Mamata Banerjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy