জলপাইগুড়িতে আক্রান্ত বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে শিলিগুড়ির হাসপাতালে মালদহ উত্তরের সাংসদকে দেখার পর তাঁর সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা বলেন মমতা। কথা বলেন সাংসদের স্ত্রী এবং সন্তানের সঙ্গেও। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার পর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, সাংসদ কোথায় আঘাত পেয়েছেন, তার খোঁজ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর তিনি চিকিৎসকদের ডেকে কথা বলেন। খগেনের শয্যার পাশে দাঁড়ানো সাংসদের আপ্তসহায়ককে মমতা জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘ওঁর কি ডায়াবেটিস রয়েছে? ইনসুলিন নেন? ওষুধ খান? টেক কেয়ার করেন? দেখান ভাল করে? খাওয়া-দাওয়া কন্ট্রোল করেন?’’ তিনি মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলেন। এর পর প্রবীণ সাংসদকে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সাংসদের পরিবারের সদস্যদের জানান, যে কোনও প্রয়োজনে তিনি পাশে রয়েছেন। অন্যত্র চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও যেন তাঁকে বলা হয়।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এমনি ঠিক আছেন। সিরিয়াস কিছু নয়। যাঁদের ডায়াবেটিস থাকে, তাঁদের একটু পর্যবেক্ষণে বেশি থাকতে হয়। ওঁর একটু কানে বেশি লেগেছে। চিকিৎসকদের রিপোর্ট ইত্যাদি আমি দেখেছি। উনি এখন পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। ওঁর ডায়াবেটিস আছে। ডায়াবিটিস কন্ট্রোল করতে হয়। আমি প্রার্থনা করেছি। ওঁকে বলেছি। ওঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছি।’’ সাংসদকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হবে কি না প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এমন সিরিয়াস কিছু নয়।’’
অন্য দিকে, খগনের পুত্র অনিমেষ মুর্মু বলেন, ‘‘প্রায় ৩৬ঘন্টা অতিক্রান্ত। এখনও অভিযুক্তেরা অধরা।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের গুন্ডারা বাবাকে মেরেছে। সেই দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও ‘অ্যাকশন’ নেননি এখনও। তাই ওঁর সঙ্গে কথা বলিনি। বলবও না।’’
সোমবার দুর্যোগ-বিপর্যস্ত জলপাইগুড়ির নাগরাকাটার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিজেপির দুই প্রতিনিধি। এক জন মালদহ উত্তরের সাংসদ খগেন এবং অপর জন শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। সবচেয়ে বেশি জখম হন খগেন। মারের চোটে গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে তাঁর মুখ থেকে। শঙ্করকেও ধাক্কা দিয়ে চড়-ঘুষি মারার চেষ্টা হয়। শঙ্করের অভিযোগ, কয়েক জন ‘দিদি-দিদি’ বলতে বলতে পিছন থেকে তাঁদের আক্রমণ করেন। বর্তমানে খগেন এবং শঙ্কর হাসপাতালে রয়েছেন। খগেনের বাঁ চোখের নিচের হাড়ে আঘাত লেগেছে বলে জানা যায়। স্বাভাবিক ভাবে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতর তুঙ্গে ওঠে। নাগরাকাটায় ওই ঘটনার নিন্দা করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘যে ভাবে আমাদের দলের সহকর্মীরা— যাঁদের মধ্যে এক জন বর্তমান সাংসদ ও বিধায়কও রয়েছেন—পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটি তৃণমূল কংগ্রেসের অসংবেদনশীলতা এবং রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার করুণ রূপের স্পষ্ট প্রতিফলন।’’ এর পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা অভিযোগ করেন, উত্তরবঙ্গে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যেও রাজনীতি করতে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সমাজমাধ্যমে বলেন, ‘‘এটা দুর্ভাগ্যজনক এবং গভীর উদ্বেগের যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যথাযথ তদন্তের অপেক্ষা না করেই একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের রাজনীতিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিশেষ করে যখন উত্তরবঙ্গের মানুষ ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস পরবর্তী পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করছেন।’’
আরও পড়ুন:
এই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার খগেনকে দেখতে হাসপাতালে দেখতে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, “লোকসভার স্পিকার গত কাল (সোমবার) রাজ্য সরকারের কাছে নোটিস দিয়ে রিপোর্ট তলব করেছে। রিপোর্ট দিতে দেরি করা হলে স্বাধিকারভঙ্গের প্রস্তাব অনুসারে আমরা পদক্ষেপ করব।” অন্য দিকে, তাদের দলের সাংসদ এবং বিধায়কের উপর হামলার ঘটনায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-কে দিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে রাজ্য বিজেপি। ঘটনার এত ঘণ্টা পরেও কেন কাউকে গ্রেফতার করা হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।
খগেন এবং শঙ্করের জখম হওয়ার অব্যবহিত পরে মুখ্যমন্ত্রী একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘চারপাশের মানুষকে সহযোগিতা করুন। এই সময় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা কাম্য নয়। আমরা একে অপরের পাশে থেকে একসঙ্গে এই সঙ্কটের মোকাবিলা করব।’’