দুর্যোগে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে ফের সেখানে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তিনি মিরিকের একাংশ ঘুরে দেখেন। প্রথমে ওই এলাকায় ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। ধসের কারণে পাহাড়ে ভেঙে পড়া বসতবাড়ি, স্কুল, প্রশাসনিক ভবন দ্রুত মেরামত করে জনজীবন স্বাভাবিক করার জন্য প্রশাসনিক আধিকারিকদের নির্দেশ দেন তিনি। এর পর তিনি যান সেখানকারই একটি ত্রাণশিবিরে। ত্রাণশিবিরে বন্যাদুর্গতদের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী়। তার পর তিনি যান মিরিকের সুখিয়াপোখরির বিডিও দফতরে। সেখানে দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করেন তিনি।
পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, মিরিকের প্রায় সব রাস্তা থেকেই ধস সরানো হয়েছে। এই কাজের জন্য রাজ্যের পূর্ত দফতর, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী। ভারী বৃষ্টিতে মিরিক যাওয়ার পথে যেখানে সেতু ভেঙে গিয়েছিল, সেখানে অস্থায়ী সেতু তৈরি করা হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার তিনি জানান, অস্থায়ী সেতু সাত-আট দিনের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে। তার পর পাকা সেতু তৈরি করে দেওয়া হবে ওই জায়গায়।
দুর্যোগের কারণে নথিপত্র হারিয়ে গেলে সরকারের তরফে নতুন তৈরি করিয়ে দেওয়া হবে বলে আগেই আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো নতুন নথিপত্র তৈরি করিয়ে দিতে ত্রাণশিবিরেই বিশেষ ক্যাম্প তৈরি করেছে প্রশাসন। মঙ্গলবার ওই ক্যাম্পে যান মুখ্যমন্ত্রী। ওই ক্যাম্পের পাশেই রয়েছে চিকিৎসার কাছে ক্যাম্প। সেখানেও যান মুখ্যমন্ত্রী। মিরিকের ত্রাণশিবিরে মহিলাদের কক্ষে যান মুখ্যমন্ত্রী। সবাই ঠিক মতো ত্রাণ পাচ্ছেন কি না জানতে চান। ত্রাণশিবিরে কয়েক জন শিশু মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তাদের আঁকা ছবি তুলে দেয়। মুখ্যমন্ত্রী তাদের চকোলেট, খেলনা, আঁকার খাতা এবং পেন্সিল দেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি সঙ্গে করে অনেক ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এসেছেন। সেগুলি বণ্টন করে দেওয়ার জন্য প্রশাসনিক আধিকারিকদের নির্দেশ দেন তিনি।
উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে গত বুধবারই কলকাতায় ফিরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন দিন পর, রবিবার আবার তিনি উত্তরবঙ্গে গিয়েছেন। রবিবার আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন জায়গার পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন মমতা। তার পর সোমবার সকালে রওনা দেন নাগরাকাটার উদ্দেশে। প্রথমেই বামনডাঙায় যান মমতা। সেখানে সাত জনের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্যোগে এলাকাবাসীদের যা যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সে সব রাজ্য সরকার পূরণ করে দেবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। দুর্যোগের কারণে যাঁরা মাথার ছাদ হারিয়েছেন, তাঁদের সরকার বাড়ি তৈরি করবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার বামনডাঙা থেকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমরা অনেক দিন ধরে বলছি ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন গড়া হোক এবং তার সদস্য করা হোক বাংলাকে। ভুটানের জলেই এত বড় ঘটনা ঘটেছে। আমরা চাই ওরা ক্ষতিপূরণ দিক।’’ এর পরেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘সবটাই তো আমাদের করতে হয়। দিল্লি এক পয়সাও দেয় না।’’