E-Paper

‘আগুন নিয়ে খেলবেন না’, এসআইআর-হুঁশিয়ারি মমতার

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:২৯
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ইঙ্গিত ছিলই। সেই মতো এ রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার ফের হুঙ্কার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্টো দিকে মুখ্যমন্ত্রীর এই অবস্থানে ‘তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক ভীতি’র বহিঃপ্রকাশ দেখছে বিজেপি।

রাজ্য সরকারের সচিবালয় ‘নবান্নে’ অনুষ্ঠিত সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘আগুন নিয়ে খেলবেন না!.. অ্যাকশন হলে রিঅ্যাকশনও হবে!’’ এসআইআর-এ ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং এ রাজ্যে এই প্রক্রিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে (সিইও) নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সিইও’র সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘‘বড্ড বেশি আধিকারিকদের হুমকি দিচ্ছেন। আশা করি, তিনি বেড়ে খেলবেন না!’’ অসম সরকারের বিরুদ্ধে আবার এ রাজ্যের বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব প্রমাণের নোটিস পাঠানোর অভিযোগ করে মমতার দাবি, ‘‘এসআইআরের নামে ভোট কাটার চক্রান্ত চলছে, এটা তার প্রমাণ।’’

বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, ‘ভুয়ো ভোটার’ বাদ পড়লে ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মতে, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী উস্কানি দিচ্ছেন।’’ তাঁর আশঙ্কা, ‘‘যে ভাবে এসআইআর-কে এনআরসি বলে মুখ্যমন্ত্রী প্রচার করছেন, সেটা আশঙ্কাজনক। ইডি, সিবিআই, এনআইএ, আয়কর কর্মী থেকে জগৎ প্রকাশ নড্ডা, খগেন মুর্মু, আমি যে ভাবে আক্রান্ত হচ্ছি, বিএলও-দের (বুথ লেভল অফিসার) না সে ভাবে আক্রমণ করা হয়!’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘ভারতীয় মুসলমান-সহ কোনও নাগরিকের কোনও চিন্তা নেই, সবার নাম থাকবে ভোটার তালিকায়।”

এনআরসি-র সঙ্গে যোগসূত্র টেনেই এ দিন এসআইআর নিয়ে বিজেপি তথা নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুজো মিটতেই অসম থেকে এনআরসি-র নোটিস আসতে শুরু করেছে। নদিয়ার দুই বাসিন্দা সেই নোটিস পেয়েছেন।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এসআইআরের জন্য উৎসবের মরশুমকে কেন বেছে নেওয়া হয়েছে?’’ মমতার অভিযোগ, ‘‘এখন সারা রাজ্যে দুর্যোগ এবং দুর্ভোগ চলছে, সামনে অনেক উৎসব রয়েছে। এই সময় ‘ফিল্ড সার্ভে’র নাম করে চার জন অফিসার বিএলও-দের ডেকে হুমকি দিচ্ছেন আর বলছেন তাঁদের ইচ্ছেমতো কাগজ তৈরি করতে হবে।’’ এ রাজ্যে সরকার যে এই প্রক্রিয়া নিয়ে বিপরীতে দাঁড়িয়ে, তা বুঝিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘বিহারে করতে পেরেছিলেন, কারণ সেখানে ডাবল ইঞ্জিন সরকার আছে। পশ্চিমবঙ্গ পুরো উল্টো!’’

অন্য দিকে, এসআইআর-এর সমর্থনে শুভেন্দু এ দিন বলেছেন, ‘‘ভারতে জন্মহার অনুযায়ী ভোটার তালিকার বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু বাংলায় এক জন জন্মেছে, আর আড়াই জন ভোটার হয়েছেন! অর্থাৎ এখানে জন্মাননি, তেমন কয়েক লক্ষ বাংলাদেশের মুসলিম, রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছেন।’’ শুভেন্দুর দাবি, ‘‘বাংলার ১০৫টি বিধানসভা কেন্দ্রে এই হার ২০-৩০%। ভারতে এই হার ৭%। মূলত উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে ভোটার বৃদ্ধির সংখ্যা বেশি। অন্য জায়গায় ৮ থেকে ১৪% বৃদ্ধির হার। বাংলাদেশ পাশ্ববর্তী জেলাগুলিতে এই হার ২০-৩০%। রাজারহাট-নিউটাউনে ২৮, ডোমকলে ৩০, জলঙ্গিতে ২৭% ভোটার বৃদ্ধি হয়েছে।’’ সেই সূত্রেই তাঁর সংযোজন, ‘‘হিন্দু শরণার্থীদের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় থাকবে।’’

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ‘মিরজ়াফর’ বলেই আগেই মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ভোটার তালিকা সংশোধনের ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ বোঝাতে এ দিনও মমতা বলেছেন, ‘‘এসআইআর-এর পিছনে কি মিরজ়াফর স্যার! জন-বিস্ফোরণ দেখার জন্য তৈরি হোন।’’ একই ভাবে রাজ্যের সিইও সম্পর্কে মমতা বলেন, ‘‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়!’’ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘সিইও-র বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ আছে। সময় হলে বলব।’’ যদিও আমলাদের একাংশের বক্তব্য, রাজ্যের সঙ্গে কথা বলেই কমিশন সিইও নিয়োগ করে। রাজ্য সরকারের দেওয়া তালিকা থেকেই এক জনকে বেছে নেওয়া হয়। সে জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের অভিজ্ঞতা ও ‘ভিজিল্যান্স ক্লিয়ারেন্স’ দিতে হয় রাজ্যকে। বর্তমান সিইও মনোজ আগরওয়ালের ক্ষেত্রেও তা হয়েছে। ফলে, এখন মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি ‘অনৈতিক ও রাজনৈতিক’ বলে প্রশাসনিক মহলের একাংশের মত। মুখ্যমন্ত্রীর এই আক্রমণের পরই মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি লিখে সিইও-সহ গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সুরক্ষিত করার আবেদন জানিয়েছন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু।

এসআইআর নিয়ে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের দাবি ও মন্তব্যকেও এ দিন হাতিয়ার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কী করে বলেন দেড় কোটি ভোটারকে বাদ দিতে হবে? মানে, আগে থেকে পরিকল্পনা হচ্ছে আর কমিশনকে দিয়ে তাতে সিলমোহর দেওয়া হবে!’’

মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের অভিযোগ সম্পর্কে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আকাশ থেকে নেমে আসা কোনও রাজনীতিক নন। তৃণমূল স্তরে থেকে উঠে আসায় পশ্চিমবঙ্গের মাটির গন্ধ উনি চেনেন। উনি এটা জানেন, দুধে কতটা জল আছে, না কি জলে সামান্য দুধ আছে! এখন কমিশন যখন রাজহাঁসের রূপ ধরে বাংলার খাল-বিলে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই মুখ্যমন্ত্রী আতঙ্কিত।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘ভুয়ো ও মৃত ভোটারদের নাম তালিকা থেকে নিয়ম মেনেই বাদ দিতে হবে। কিন্তু বিজেপি নেতারা এমন করছেন, যেন তাঁরাই নির্বাচন কমিশন। আর ভুয়ো নাম বাদ গেলে যারা বিপদে পড়বে, তাঁদের নেত্রী আর এক দিকে চড়া হুমকি দিচ্ছেন। সাংবিধানিক কাজের পরিবেশটাই ধ্বংস হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee Election Commission of India SIR

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy