রাজ্যের ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে আবার পথে নামতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার বনগাঁয়। মঙ্গলবার সেখানকার ত্রিকোণ পার্কে সভা করবেন তিনি। তার পরে চাঁদপাড়া থেকে ঠাকুরনগর পর্যন্ত পদযাত্রা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সভার প্রস্তুতি নিয়ে দফায় দফায় সাংসদ তথা বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতাবালা ঠাকুর, জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এর আগে কলকাতায় এসআইআরের বিরুদ্ধে মিছিল করেছিলেন মমতা।
মঙ্গলবার হেলিকপ্টারে চেপে কলকাতা থেকে বনগাঁ যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল সূত্রে খবর, চাকদহ রোডের প্রতাপগড় মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার নামার জন্য হেলিপ্যাড করা হবে। জ্যোতিপ্রিয়কে পাশে নিয়ে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘বালুদার (জ্যোতিপ্রিয় এই নামেই পরিচিত) সঙ্গে দিদি কথা বলেন। তিনি জানান, বনগাঁয় সভা করতে চান। মঙ্গলবার দুপুর ১টার সময়ে ত্রিকোণ পার্কে সভা। তার পরে চাঁদপাড়া থেকে ঠাকুরনগর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার পদযাত্রা করবেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন, এসআইআরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদেই এই কর্মসূচি করছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে ও পার বাংলার মানুষ বেশি। মতুয়া, তফসিলি মানুষজন রয়েছেন। এসআইআরকে সামনে রেখে ভয় দেখানো হচ্ছে। মানুষ আতঙ্কিত। আত্মঘাতী হচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকেই এই নিয়ে মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন। সেই বার্তা দিতে আসছেন এখানে।’’ তৃণমূল নেতা এ-ও জানান, মতুয়ারা এখনও তৃণমূলের পাশেই রয়েছেন। আগামী দিনেও থাকবেন। কারণ, এ রাজ্যে মতুয়াদের জন্য যে কাজ হয়েছে, তা মুখ্যমন্ত্রীই করেছেন। শুক্রবার তৃণমূল নেতৃত্ব হেলিপ্যাডের জন্যে প্রতাপগড় মাঠের পাশাপাশি বনগাঁ স্টেডিয়ামের পাশে বনগাঁ হাইস্কুলের মাঠ পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন:
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর এই সভা নিয়ে মমতাবালার সঙ্গে বৈঠক করেন জ্যোতিপ্রিয়। বৈঠকের পরে জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘মতুয়া ভাইদের চোখে জল। মমতাবালা অনশনে বসেছেন। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। মতুয়া ভাইরা অসুস্থ। তখন লন্ডনে রয়েছেন এক জন। মতুয়ারা বিচার করবেন। কিছু বলার নেই। মমতা যত ক্ষণ আছেন, এর শেষ দেখে ছাড়বেন।’’ প্রসঙ্গত, এসআইআরের বিরুদ্ধে মমতাবালা যখন অনশন করছিলেন, তখন বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের বিদেশে সপরিবার ভ্রমণের একটি ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। নাম না করে বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেন জ্যোতিপ্রিয়। মমতাবালা বলেন, ‘‘এসআইআর নিয়ে যে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দিদি আশ্বাস দিয়েছেন।’’
রাজ্যে এসআইআর শুরু হওয়ার পরে মতুয়াদের একাংশের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কয়েক জন আত্মঘাতী হয়েছেন। এই নিয়ে মতুয়া অনুগামীদের নিয়ে অনশনে বসেন মমতাবালা। রাজ্যে যে দিন এসআইআর শুরু হয়, সেই ৪ নভেম্বর কলকাতায় পদযাত্রা করেন মমতা। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রেড রোডে বিআর অম্বেডকরের মূর্তির সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়। প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে মিছিল শেষ হয় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সামনে। এ বার এসআইআরের বিরুদ্ধে বনগাঁয় কর্মসূচি করছেন মুখ্যমন্ত্রী।