‘অবৈধ’ কয়লা। প্রতীকী ছবি।
বেআইনি কয়লা ‘পাচার’ হয়েছে রেলের রেকেও— এমন তথ্য তাঁদের হাতে এসেছে বলে দাবি করেছেন কয়লা পাচার মামলায় তদন্তকারী সিবিআই আধিকারিকদের একাংশ। সেই সূত্রে এ বার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘ইস্টার্ন কোল ফিল্ডস লিমিটেডের’ (ইসিএল) পরে, পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের কয়েক জন কর্মী-আধিকারিকও তাঁদের ‘নজরে’ রয়েছেন বলে দাবি তদন্তকারীদের। রেলের কোনও কর্তা বা কর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর করা না হলেও, ১৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানায় সিবিআই।
সম্প্রতি এই মামলায় প্রথম যে চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই, তাতে নাম রয়েছে ইসিএলের কয়েক জন কর্মী-আধিকারিকের। তবে সিবিআই সূত্রের দাবি, প্রাথমিক ভাবে প্রায় ১৫০ জনের নামের একটি তালিকা তাদের হাতে এসেছে। তার মধ্যে প্রাথমিক চার্জশিটে মাত্র ৪১ জনকে যুক্ত করা হয়েছে। তদন্তকারী এক আধিকারিক সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে সম্প্রতি দাবি করেন, “তদন্ত এখনও চলছে। কয়েক জন রেল-কর্তার দিকে নজর আছে। তাঁদের আবারও ডাকা হতে পারে।”
রেলের কর্তা-কর্মীদের সঙ্গে এই মামলার যোগসূত্র কোথায়?
সিবিআই-এর একটি সূত্রের দাবি, মূলত দু’রকম যোগাযোগ। প্রথমত, খনি লাগোয়া রেল সাইডিংগুলিতে রেলের রেকে কয়লা তোলার সময়ে ‘কয়লা মাফিয়া’ অনুপ মাজি ওরফে লালার লোকজন চুরি করে নিত বলে অভিযোগ। দ্বিতীয়ত, অবৈধ কয়লা পাচারের জন্য কয়লা সংস্থার নামে ভুয়ো কাগজপত্র তৈরি করা হত বলে দাবি। তা ব্যবহার করে রেলের রেকে তুলে ভিন্ রাজ্যে কয়লা পাচার করা হত। কী ভাবে এই গোটা প্রক্রিয়াটি চলত, এখনই বিশদে ভাঙতে নারাজ তদন্তকারীরা।
রেলে কয়লা পাচারের বিষয়টি জানতে পশ্চিম বর্ধমানের ডালুরবাঁধ, সামডি ও পুরুষোত্তমপুর, বারাবনির চরণপুর-সহ নানা রেল সাইডিংয়ে তদন্তে গিয়েছে সিবিআই। তদন্তকারীদের আরও দাবি, কয়লা সরবরাহের তারিখ ও সময় মিলিয়ে, তখন সংশ্লিষ্ট জায়গায় দায়িত্বে থাকা কর্মী-আধিকারিকদের নামের তালিকা তৈরি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নজর রাখা হয়েছে রেলের এই ডিভিশনের কয়েকটি বিভাগের কিছু কর্তা-কর্মীর উপরে। তবে রেলের কর্মী-আধিকারিকদের সঙ্গে লালার লোকজনের টাকা লেনদেনের কোনও তথ্যপ্রমাণ সিবিআই-এর হাতে এসেছে কি না, সে বিষয়ে কোনও সদুত্তর মেলেনি।
পুরো বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন আসানসোল ডিভিশনের কর্তারা। তবে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমানের অন্যতম জেলা সম্পাদক অভিজিৎ ঘটকের দাবি, “আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, কয়লা চুরি হয়ে থাকলে, তা হয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থার কিছু লোকজনের মদতে। সেটাই পরিষ্কার হচ্ছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “কেন্দ্র ও রাজ্যে যাঁরা ক্ষমতায়, সবাই দুর্নীতিতে যুক্ত। এখন দেখার, সে দুর্নীতির পর্দা সত্যিই ফাঁস হয় কি না।” বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের যদিও বক্তব্য, “সিবিআই যে নিরপেক্ষ তদন্ত করে, এ সব তথ্য তারই প্রমাণ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy