Advertisement
E-Paper

কয়লা: নিরাপত্তা অফিসার আর তাঁর বয়ান ঘিরে রহস্য

সিবিআইয়ের অভিযোগ, কয়লা পাচারের তদন্তে রাজ্য পুলিশের কিছু কর্তা ও নিচু তলার কর্মী এবং বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৪৯
কয়লা কেলেঙ্কারির মতো বিষয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই এবং রাজ্যের সিআইডি-র সমান্তরাল তদন্ত নিয়ে বিতর্ক আছে।

কয়লা কেলেঙ্কারির মতো বিষয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই এবং রাজ্যের সিআইডি-র সমান্তরাল তদন্ত নিয়ে বিতর্ক আছে। ফাইল চিত্র।

পশ্চিম বর্ধমানের বারাবনি থানার কয়লা পাচার সংক্রান্ত এক মামলায় তাঁর গোপন জবানবন্দি নিয়েছিল সিআইডি। কিন্তু তার পরেই কোনও এক ‘অজ্ঞাত কারণে’ সেই তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়। যাঁর জবানবন্দির পরেই সংশ্লিষ্ট মামলাটি অন্ধকারের আড়ালে চলে যায়, এখন কয়লা পাচারের বৃহত্তর প্রেক্ষিতে সিবিআই এবং সিআইডি-র সমান্তরাল তদন্তে ইসিএলের সেই নিরাপত্তা অফিসার আক্ষরিক অর্থেই টানাপড়েনের কেন্দ্রে এবং তাঁর জবানবন্দি হয়ে উঠেছে সিবিআইয়ের অন্যতম অস্ত্র।

কেন বারাবনি থানার সেই মামলায় ‘ক্লোজ়ার’ ঘোষিত হয়েছিল অর্থাৎ তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। আইনজীবীদের একাংশের অভিযোগ, ‘মিসটেক অব দ্য ফ্যাক্ট’ বা তথ্যভ্রান্তির কারণ দেখিয়ে মাত্র ১৫ দিনের মাথায় ওই তদন্ত বন্ধ করার পিছনে অন্য কারণও থাকতে পারে।

সিবিআই সূত্রের খবর, আদালতের অনুমতি পেয়ে সম্প্রতি দিল্লি থেকে সরাসরি আসানসোলের বিশেষ আদালতে আসেন ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীরা। ইস্টার্ন কোল ফিল্ডের ওই নিরাপত্তা অফিসারের গোপন জবানবন্দি নিয়ে সে-দিনেই তাঁরা তাঁকে নিয়ে দিল্লি ফিরে যান। তদন্তকারীদের দাবি, ওই জবানবন্দিতে এমন সব বিস্ফোরক তথ্য পাওয়া গিয়েছে, যা কয়লা পাচার মামলায় আদালতে তাঁদের খুবই সাহায্য করবে।

সিবিআইয়ের অভিযোগ, কয়লা পাচারের তদন্তে রাজ্য পুলিশের কিছু কর্তা ও নিচু তলার কর্মী এবং বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। ইসিএলের ওই সুরক্ষা অফিসার প্রাক্তন সেনাকর্মী এবং তদন্তকারীদের দাবি, ওই ব্যক্তির গোপন জবানবন্দি এ বার সেই সব পুলিশকর্তা ও প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাঁদের অন্যতম শক্তপোক্ত হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

এমনিতেই কয়লা কেলেঙ্কারির মতো বিষয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই এবং রাজ্যের সিআইডি-র সমান্তরাল তদন্ত নিয়ে বিতর্ক আছে। ইসিএলের ওই নিরাপত্তা অফিসারকে নিয়ে টানাপড়েন সেই বিতর্কে নতুন বাঁক সৃষ্টি করতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। কয়লা চুরি প্রতিরোধে ইসিএলের টাস্ক ফোর্সের নেতৃত্বে থাকা ওই ব্যক্তিকে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এবং সিবিআই বেশ কয়েক বার জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। আসানসোল, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের বিভিন্ন থানায় কয়লা চুরির মামলা দায়ের করেছিল ইসিএল। বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীর নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়। আদালত সূত্রের খবর, গত ফেব্রুয়ারিতে জামুড়িয়া, অন্ডাল ও বারাবনি থানায় দায়ের করা ওই সব পুরনো কয়লা পাচারের মামলার তদন্তভার নেয় সিআইডি। কিন্তু ওই নিরাপত্তা অফিসারের গোপন জবানবন্দি নেওয়ার পরেই বারাবনি থানার মামলাটি আচমকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আইনজীবীদের একাংশের মতে, গোপন জবানবন্দির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অভিযোগের সামঞ্জস্য না-থাকায় মামলাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। কারও কারও প্রশ্ন, বিস্ফোরক তথ্যের জন্যই কি তদন্ত বন্ধ হয়েছিল? সিআইডি-কর্তারা এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

পুরো বিষয়টি সিবিআইয়ের কানে পৌঁছে যায়। বারাবনি থানার ওই মামলার নথিপত্র চেয়ে আদালতে আবেদন করে তারা। সেই আবেদনে সিআইডি-র কাছে ওই সুরক্ষা অফিসারের দেওয়া জবানবন্দিটিও চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিবিআইয়ের সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়।

সিবিআই সূত্রের খবর, ইসিএলের ওই নিরাপত্তা অফিসার এখন ভিন্‌ রাজ্যে কর্মরত। সিবিআই সম্প্রতি তাঁকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার পরে তারা সরাসরি আসানসোল বিশেষ আদালতে ওই ব্যক্তির গোপন জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আবেদন করে, যা মঞ্জুর হয় ২২ নভেম্বর। কালবিলম্ব না-করে তার পরেই আসানসোল পৌঁছয় তদন্তকারী দল।

Coal Smuggling CID
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy