Advertisement
E-Paper

টোটো চালিয়েই পড়া, টানছেন সংসারও

টোটোয় চড়তে গিয়ে চালকের দিকে চোখ যেতেই চমকে উঠতেন যাত্রীরা— ‘‘ও বাবা, এ তো মেয়ে!’’ কেউ উঠতেন, কেউ উঠতেন না। বছর একুশের সুপ্রিয়া রায় অবশ্য থেমে থাকেননি। সংসার ও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার তাগিদে ছুটিয়ে গিয়েছেন টোটো।

সুচন্দ্রা দে

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫২
কাটোয়ায় সুপ্রিয়া রায়। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

কাটোয়ায় সুপ্রিয়া রায়। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

টোটোয় চড়তে গিয়ে চালকের দিকে চোখ যেতেই চমকে উঠতেন যাত্রীরা— ‘‘ও বাবা, এ তো মেয়ে!’’ কেউ উঠতেন, কেউ উঠতেন না। বছর একুশের সুপ্রিয়া রায় অবশ্য থেমে থাকেননি। সংসার ও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার তাগিদে ছুটিয়ে গিয়েছেন টোটো।

পরের বোনের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন বাবা-মা। কিন্তু বিয়ের পিঁড়ির বদলে সুপ্রিয়া পড়াশোনাই বেছে নিয়েছেন। এখন দিনমজুর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় সংসারে অনটন। তাই পড়া ও সংসার, দু’টো এক সঙ্গে চালানোর জন্য টোটোর স্টিয়ারিং ধরেছেন কাটোয়া কলেজের বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুপ্রিয়া। গোড়ায় প্রতিবেশীদের কেউ-কেউ তাঁর বাবা-মাকে বুঝিয়েছিলেন, ‘‘পড়ানোর দরকার কী! বিয়ে দিয়ে দিলেই তো হয়।’’ অনেকে আবার বলেছিলেন, ‘‘মেয়ে টোটো নিয়ে রাস্তায় বেরোলে মান থাকবে তো?’’ সুপ্রিয়া কোনও কিছুতেই কান দেননি।

মাস দুয়েক ধরেই কাটোয়া শহরের অলিগলিতে নীল রঙের টোটো নিয়ে দেখা যাচ্ছে সুপ্রিয়াকে। শহরের কাশীগঞ্জপাড়ায় বাবা, মা ও ছোট বোনকে নিয়ে থাকেন এক কামরার টিনের চালের ঘরে। বাবা সুধীরবাবু অসুস্থ হয়ে ঘরবন্দি। বছরখানেক আগে মেজো বোনের বিয়ে হয়। কিন্তু সুপ্রিয়া নিজের পাশাপাশি সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছোট বোন সঞ্চিতাকেও পড়াতে চান। তিনি জানান, বাবার রোজগার বন্ধ হওয়ার পরে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে টিউশন দিতেন। কিন্তু সেই আয়ে সংসার চলছিল না। আবার, অন্য কোনও কাজে ঢুকলে কলেজে ক্লাস করার সময় পাওয়া মুশকিল হতো।

শেষমেশ মাস কয়েক আগে এক আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলে টোটো চালানোর ভাবনা মাথায় আসে। খানিকটা হাত পাকানোর পরে সেই আত্মীয়ের টোটো নিয়েই রাস্তায় নামেন। দিন কয়েক আগে এক বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে নিজেই একটি টোটো কিনে ফেলেছেন।

টোটো নিয়ে রাস্তায় নামা অবশ্য সহজ হয়নি। গোড়ায় প্রতিবেশীদের নানা রকম মন্তব্য তো ছিলই। সঙ্গে ছিল যাত্রীদের সংশয়। অনেকেই বলতেন, ‘‘কী সাহস, মেয়ে হয়ে টোটো চালাচ্ছে!’’ সুপ্রিয়া জানান, এ সব শুনেও হাল ছাড়েননি। এখন সেই সব সমস্যা অনেকটাই কেটে গিয়েছে। যাত্রীদের অনেকে চিনে গিয়েছেন তাঁকে।

কাটোয়া সার্কাস ময়দান এলাকার বাসিন্দা অসিত সিংহ বলেন, ‘‘প্রথম দিকে মনে হত, এত ছোট মেয়ে, অঘটন না ঘটিয়ে ফেলে! এখন অবশ্য ওর টোটোয় উঠতে ভালই লাগে।’’ রিমা দাস নামে আর এক যাত্রীর কথায়, ‘‘দারুণ কাজ করছে সুপ্রিয়া। ওকে দেখে অনুপ্রেরণা পাই।’’ অন্য টোটো চালকদেরও পাশে পেয়েছেন সুপ্রিয়া। কাটোয়ার টোটো ইউনিয়নের সম্পাদক গৌতম দাস বলেন, ‘‘ওর যে কোনও সমস্যায় আমরা আছি। ওকে দেখে আরও মেয়ে এগিয়ে আসুক।’’

সকালে এক দফা টোটো চালানো, তার পরে কলেজে যাওয়া, বিকেলে আবার রাস্তায় নেমে পড়াই এখন সুপ্রিয়ার রুটিন। তাঁর মা মমতাদেবী বলেন, ‘‘মেয়েটা একা হাতে সংসার টানছে। এ কি কম কথা! এখন আর কারও কথায় কান দিই না।’’ পড়াশোনা শেষেও কি টোটো চালাবেন? সুপ্রিয়া বলেন, ‘‘ছোট থেকে স্বপ্ন দেখি, ট্রেন চালাব। সে জন্যই তো এত লড়াই।’’

student toto
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy