Advertisement
E-Paper

মাদক বিক্রিতে জড়িয়ে পড়ছে কলেজপড়ুয়ারা

ইন্টারনেট থেকে পাড়ার দোকান, মাদক-জাল সর্বত্র। চাইলেই হাতে পৌঁছে যায় পছন্দের ‘পুরিয়া’কোথায় কোথায় নেশার আসর বসান কলেজপড়ুয়ারা?

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৯ ০১:৫০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কলেজে রয়েছে সিসি ক্যামেরার নজরদারি। তাই কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে নয়, নেশার আসর বসে অন্য কোথাও। কখনও গঙ্গার ঘাটে, কখনও পার্কে, কখনও নাইট ক্লাবে, কখনও বন্ধুদের পার্টিতে, কখনও বা চায়ের ঠেকে। লালবাজারের মাদক-বিরোধী বিভাগের কর্তারা জানাচ্ছেন, মাদক নেওয়ার পাশাপাশি মাদক বিক্রির কাজেও জড়িয়ে পড়ছেন শহরের কলেজপড়ুয়ারা। কয়েক জনকে হাতেনাতে ধরার পরে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

কোথায় কোথায় নেশার আসর বসান কলেজপড়ুয়ারা?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, উত্তর কলকাতার একটি কলেজের কয়েক জন পড়ুয়া জানালেন, বাগবাজার ঘাট থেকে শুরু করে গঙ্গার অধিকাংশ ঘাটই এখন মাদকের ঠেক। গাঁজা থেকে শুরু করে এলএসডি ট্যাবলেট— সবই মেলে সেখানে। ‘অভিজ্ঞ’ নেশাড়ুদের হাত ধরে আসেন ‘শিক্ষানবিশেরা’। কার কাছে কোন মাদক আছে, তার খোঁজ রাখতে তৈরি হয় হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ-ও। এমনই একটি গ্রুপের এক সদস্য বললেন, ‘‘এই হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে হেরোইন, এলএসডি, কোকেন— সব ধরনের মাদকেরই বেচাকেনা চলে। যাঁরা খুব বিশ্বাসযোগ্য, শুধুমাত্র তাঁদেরই ওই গ্রুপের সদস্য করা হয়।’’

হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে মাদক বিক্রি করতে গিয়ে এ মাসেই পুলিশের জালে ধরা পড়েছিলেন কয়েক জন কলেজপড়ুয়া। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তিন মাদক বিক্রেতাকেও গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পুলিশ জানায়, হোয়াট্সঅ্যাপের মাধ্যমে অথবা ফোন করে মাদকের অর্ডার দিতেন ওই পড়ুয়ারা।

সূত্রের খবর, উত্তরে বরাহনগর থেকে দক্ষিণে যাদবপুর— মাদক বিক্রির ঠেক ছড়িয়ে আছে সর্বত্র। নতুন নতুন ঠেক তৈরি হচ্ছে ই এম বাইপাস ও রাজারহাটে। কোথায়, কত দামে কী মিলছে, তা হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে জেনে যান মাদকাসক্তেরা।

তবে কলেজপড়ুয়াদের মতে, কোকেন মূলত পার্টি ও নাইট ক্লাবেই বেশি চলে। ভাল মানের কোকেনের বেশির ভাগটাই আসে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। লালবাজারের নার্কোটিক্স বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘মাস কয়েক আগে এক নাইজিরীয় মহিলা কোকেন-সহ ধরা পড়েছিলেন কলকাতা বিমানবন্দরে। ধৃত মহিলা জেরায় স্বীকার করেন, তাঁর কাজ ছিল এখানে স্থানীয় কিছু এজেন্টের হাতে ওই কোকেন তুলে দেওয়া।’’ স্থানীয় এজেন্টরাই অনেক সময়ে এই কোকেন শহরের কলেজপড়ুয়াদের হাতে পৌঁছে দেন।

এক তদন্তকারী অফিসার জানাচ্ছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা বা নাইজিরিয়া থেকে কলকাতার কলেজে পড়তে আসা যুবকেরা অনেক সময়েই টাকার লোভে মাদক পাচারের কাজে জড়িয়ে পড়েন। লালবাজারের নার্কোটিক্স শাখার এক অফিসারের কথায়, ‘‘এক গ্রাম কোকেনের দাম আট হাজার টাকার মতো! পাঁচ থেকে দশ গ্রাম কোকেন বিক্রি করতে পারলেও বিক্রেতার অনেকটা লাভ। এই লাভের আশাতেই বিদেশি পড়ুয়াদের সঙ্গে স্থানীয় পড়ুয়ারাও এই কারবারে জড়িয়ে যাচ্ছেন।’’

তবে ক্যাম্পাসের চৌহদ্দিতে কেউ মাদক নেন না বলেই দাবি করেছেন শহরের অধিকাংশ কলেজের অধ্যক্ষেরা। জয়পুরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ অশোক মুখোপাধ্যায়, মণীন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মন্টুরাম সামন্ত ও বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ গৌতম কুন্ডুর দাবি, তাঁদের কলেজ চত্বর এখন নেশামুক্ত। তবে কলেজের বাইরে কে কী করছেন, সেই দায়িত্ব তাঁদের নয়।

কলেজের ভিতরে না হলেও তার আশপাশে যে নেশার অনেক ঠেক রমরমিয়ে চলছে, তা কবুল করেছেন উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার এলাকার একটি কলেজের এক শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কলেজের এক পড়ুয়া নেশা করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাকে বাইপাসের চিংড়িঘাটা এলাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। ওই পড়ুয়া জানিয়েছিল, কলেজের পিছনের একটি পার্কে বহু দিন ধরে নেশার ঠেক চলছে। সেখানেই সে নিয়মিত মাদক নিত।’’

College Students Drug Addictio Drug Dealers Kolkata Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy