Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
sainthia

Sainthia: দেবী প্রতিমা আগলে রেখেছেন গ্রামের মুসলিম বাসিন্দারাই

বর্তমানে ওই গ্রামে প্রায় ১১০টি মুসলমান পরিবারের বাস। গ্রামটি যে জমিদারের অধীনে ছিল তিনি ওই গ্রামে দেবী দুর্গার শিলামূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন।

গাছের নীচে সেই শিলামূর্তি।

গাছের নীচে সেই শিলামূর্তি। নিজস্ব চিত্র।

অর্ঘ্য ঘোষ
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ০৬:২৮
Share: Save:

গ্রামে একটি ঘরও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস নেই। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীরাই পুরুষানুক্রমে সমাদরে আগলে রেখেছেন হিন্দুদের দেবী প্রতিমা। সাঁইথিয়ার বলাইচণ্ডী গ্রাম রীতিমতো চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাস্তব ছবিটা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ওই গ্রামে প্রায় ১১০টি মুসলমান পরিবারের বাস। এক সময় গ্রামটি যে জমিদারের অধীনে ছিল তিনি ওই গ্রামে দেবী দুর্গার শিলামূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজোর প্রচলন করেন। বার্ষিক মহোৎসবের পাশাপাশি নিত্যপুজোর জন্য বরাদ্দ করেন বেশ কিছু দেবোত্তর জমিও। জমিদারি গিয়েছে। বরাদ্দ জমির সিংহভাগই বেহাত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জমিদারের প্রতিষ্ঠিত সেই শিলামূর্তিটি গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র সংলগ্ন একটি খেজুর গাছের নীচে আজও রয়ে গিয়েছে। বছরের পর বছর সেই মূর্তিটি সমাদরে আগলে রেখেছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ জন। বর্তমানে সেই মূর্তিটি ঠাকরুন মা বা নাককাটি ঠাকরুন হিসাবে পরিচিত। ৬৮ বছরের শেখ ইমানদার, ৬৫ বছরের শেখ সাধু জামালরা বলেন, ‘‘বাপ ঠাকুরদাদের মুখে শুনেছি আগে নাকি খুব ধুমধাম করে পুজো হত। পুজো ঘিরে মেলাও বসত। এখন পাশের গ্রামের এক পুরোহিত সপ্তাহে একদিন পুজো করে যান। জায়গাটিকে পবিত্র স্থান হিসাবে রক্ষা করি আমরা।’’ এই গ্রামের আসমা বেগম, নাজমা বেগমদের কথায়, ‘‘আমরাও দেবীর কাছে মানত করি। স্নান সেরে পরিষ্কার পোশাকে ঠাকরুন মা-এর থানে যাই। মঙ্গল কামনা করি। আমাদের বিশ্বাস দেবী আমাদের রক্ষা করেন।’’

বংশানুক্রমে ওই দেবীর পুজো করে আসছেন পার্শ্ববর্তী নবগ্রামের ৬৫ বছরের উজ্জ্বল চক্রবর্তীর পরিবার। তিনি বলেন, ‘‘জমিদারেরাই ওই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। জমিও বরাদ্দ ছিল। এখন পুরোহিতের জন্য বরাদ্দ যৎসামান্য জমি বরাদ্দ আছে। তাও বর্গা হয়ে গিয়েছে। গ্রামের মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরাই বংশ পরম্পরায় মূর্তিটি রক্ষা করে আসছেন।’’

স্থানীয় মাজার দেখাশোনা করেন শেখ সালাউদ্দিন, শেখ ইব্রাহিমরা। তাঁদেরও পুরোহিতের ভূমিকায় পাওয়া যায় এই দেবস্থানে। তাঁরা বলেন, ‘‘জাগ্রত হিসেবে পরিচিতি রয়েছে দেবীর। তাই মানতের পুজো দিতে দূর দূরান্তের পূণ্যার্থীরা হাজির হন। কিন্তু পুরোহিত না থাকলে সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। তখন আমরাই পুরোহিতকে খবর পাঠাই। তিনি আসতে পারলে ভাল। না হলে আমরাই পুরোহিতের হয়ে মানতের সামগ্রী দেবীর কাছে নিবেদনকরে দিই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sainthia Communal harmony
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE