ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় বাড়ি-বাড়ি ‘এনুমারেশন ফর্ম’ (গণনাপত্র) বিলি চলছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ, বুথ লেভল অফিসার বা বিএলও-রা ভোটারদের বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেবেন ফর্ম। অথচ, কোথাও শিবির করে, কোথাও ক্লাব বা মন্দিরে বসে ফর্ম বিলি হচ্ছে ও তাতে সাহায্য করছে তৃণমূল, অভিযোগ এমনই। বিহারে এসআইআর চলাকালীন একই অভিযোগে আঙুল উঠেছিল বিজেপির দিকে।
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার কেশাপাট পঞ্চায়েতের পলসা গ্রামে ৪৭ নম্বর বুথের বিএলও শ্যামল সেনাপতি গোপীমোহনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভার ওই বুথে ভোটার সংখ্যা ১৪৬৫। বৃহস্পতিবার গ্রামের লালচকে শিবির করে ফর্ম বিলি করেন শ্যামল। সঙ্গী তৃণমূলের বিএলএ-২ তথা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য শেখ মিজানুর রহমান ও তাঁর সঙ্গীরা।
শ্যামলের দাবি, ‘‘বাড়ি-বাড়ি যাচ্ছিলাম। বাসিন্দারা আমাকে দেখে জড়ো হন।’’ মিজানুরের দাবি, ‘‘গ্রামীণ এলাকায় নানা জায়গায় ইন্টারনেট নেই। তাই একটা জায়গা বেছে সবাইকে আসতে বলা হয়েছে। কেউ না এলে, তাঁর বাড়িতে ফর্ম পৌঁছে দেওয়া হবে।’’ বিজেপির বিএলএ-২ নিমাইচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘বলতে গেলে ঝামেলা হবে। তাই সঙ্গে যাইনি।’’ পাঁশকুড়ার বিডিও মোহন বর্মার বক্তব্য, ‘‘নিয়ম ভাঙলে পদক্ষেপ হবে।’’
একই অভিযোগে কমিশন পদক্ষেপ করেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায়। খড়্গপুর-২ ব্লকের ভিকানচকের ৬১ নম্বর বুথের বিএলও সোমনাথ ঘোড়ই বাড়ি-বাড়ি না গিয়ে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে শিবির করে ফর্ম বিলি করছেন বলে অভিযোগ। বিডিও সুব্রত ঘোষ বলেন, “ওই বিএলও-কে সতর্ক করা হয়েছে। এইআরও-কে বলেছি, ওঁকে শো-কজ় করতে।”
তবে প্রশাসন সূত্র মনে করাচ্ছে, ৪ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফর্ম দিতে-নিতে এক জন বিএলও-কে গড়ে ৩০০-৩৫০টি বাড়িতে যেতে হবে। বিএলও-রা নানা স্তরের সরকারি কর্মী। তাঁরা নিজেদের চাকরির পাশাপাশি, এ কাজ করছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ মেটাতে গিয়ে কেউ কেউ এক জায়গায় বসে ফর্ম বিলি করছেনবলে দাবি।
মালদহের চাঁচলের শ্রীরামপুরে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে বসে বিএলও-র ফর্ম বিলির ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে। প্রধানের দাবি, বিএলও বিলি করার আগে ফর্ম গোছাচ্ছিলেন। তৃণমূলের দুই নেতা একটি ঘরে বসে আর সামনে ছড়ানো কিছু ফর্ম— এমন ছবিতে বিতর্ক বেধেছে পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসায়। তবে জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি ব্লকের গধেয়ারকুঠি এলাকায় বিজেপি-ঘনিষ্ঠ স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে ফর্ম বিলি করছেন বিএলও, এমন অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। বিএলওর দাবি, স্বামী তাঁকে সাহায্য করছেন। এতে রাজনীতি নেই।
বীরভূমের সিউড়ি ২ ব্লকের পুরন্দরপুরে ক্লাব থেকে ও ইলামবাজারের ভগবতী বাজার ১২৮ নম্বর বুথে মন্দিরে বসে ফর্ম বিলির অভিযোগ উঠেছে। হাওড়ার ডোমজুড়ে এবং দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভার একাধিক বুথে স্কুল থেকে ফর্ম বিলির অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং ১, বাসন্তী ও গোসাবা ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফর্ম বিলি হওয়ায় ভোটারেরা সে কথা জানতে পারছেন না বলে দাবি। উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে রাস্তার পাশে শিবির করে ও বসিরহাটের সীমান্তবর্তী গাছা আখাড়পুরের এক বিএলও বাড়ির বারান্দায় বসে ফর্ম বিলি করেছেন বলে অভিযোগ। বাদুড়িয়ায় ইটভাটায় চাঁদোয়া খাটিয়ে ফর্ম বিলির খবর পেয়ে পুলিশ এবং নির্বাচনী আধিকারিক গিয়ে চাঁদোয়া খুলে দেন।
কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং ভয় দেখাচ্ছেন। বিএলও-দের প্রভাবিত করার সব রকম চেষ্টা তৃণমূল করছে।’’ তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘নির্বাচনে বুথে এজেন্ট দিতে পারেন না। এখন বিএলএ দিতে পারেননি। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে মিথ্যা বলছেন বিজেপি নেতারা।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)