Advertisement
E-Paper

আত্মঘাতী রজতের বিরুদ্ধে নোট বদলের পাল্টা নালিশ

তিন দিন আগে এলাকার এক ব্যবসায়ী, তাঁর পরিবার এবং এক কর্মীকে ‘ফেসবুকে’ মৃত্যুর জন্য দায়ী করে আত্মঘাতী হয়েছিলেন উলুবেড়িয়ার অস্থায়ী ব্যাঙ্ককর্মী রজত চৌধুরী। এ বার সোমনাথ ঘোষ নামে ওই ব্যবসায়ী রজতবাবুর বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে তাঁর দেওয়া নোট পাল্টে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বাতিল পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট জমা করার অভিযোগ তুললেন।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৬
এই ব্যাঙ্কে কাজ করতেন রজত চৌধুরী।নিজস্ব চিত্র

এই ব্যাঙ্কে কাজ করতেন রজত চৌধুরী।নিজস্ব চিত্র

তিন দিন আগে এলাকার এক ব্যবসায়ী, তাঁর পরিবার এবং এক কর্মীকে ‘ফেসবুকে’ মৃত্যুর জন্য দায়ী করে আত্মঘাতী হয়েছিলেন উলুবেড়িয়ার অস্থায়ী ব্যাঙ্ককর্মী রজত চৌধুরী। এ বার সোমনাথ ঘোষ নামে ওই ব্যবসায়ী রজতবাবুর বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে তাঁর দেওয়া নোট পাল্টে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বাতিল পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট জমা করার অভিযোগ তুললেন। ব্যাঙ্কের একাংশও এ কাজে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

শুক্রবার আত্মঘাতী হন উলুবেড়িয়ার বৃন্দাবনপুরের বাসিন্দা রজতবাবু। পরের দু’দিন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কটি ছুটি ছিল। সোমবার খুলতেই বাণীতবলা এলাকায় ব্যাঙ্কের ওই শাখায় যান তদন্তকারী অফিসারেরা। গত ৯ নভেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সোমনাথবাবু যে টাকা জমা দিয়েছিলেন তার ‘রিসিপ্ট ভাউচার’গুলি এ দিন সংগ্রহ করেন তাঁরা। কথা বলেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও। সংবাদমাধ্যমে তদন্তকারীরা মুখ খুলতে চাননি। তবে সব প্রক্রিয়া যে নিয়ম মেনে হয়নি, তা ঠারেঠোরে মানছেন তাঁরা।

রজতবাবু ওই ব্যাঙ্কের ‘বিজনেস ফেসিলিটেটর’ হিসেবে কাজ করতেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গাইডলাইন অনুযায়ী, টাকা লেনদেন সংক্রান্ত কাজের অধিকার তাঁর ছিল না। সোমবার আনন্দবাজারের কাছে ব্যবসায়ী সোমনাথবাবুর (তাঁর এলপিজি গ্যাস এবং বিভিন্ন মোবাইল ফোন সংস্থার ডিলারশিপ রয়েছে) অভিযোগ, রজতবাবু তাঁর পাঠানো লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্কে গুনতেন। তিনিই জমা দেওয়ার স্লিপে স্ট্যাম্প মারতেন। তার ভিত্তিতে ক্যাশিয়ার টাকা জমা করতেন। তিনি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের পরামর্শ মতোই আমি রজতবাবুকে দিয়ে টাকা গোনানোর কাজ করাতাম। অথচ আমার পাঠানো একশো টাকার নোট বদলে অ্যাকাউন্টে বাতিল নোট জমা করা হয়।’’ ব্যাঙ্ক ম্যানেজার চিন্ময় দত্ত কথা বলতে রাজি হননি বিষয়টি নিয়ে।

ওই শাখায় সোমনাথবাবুর তিনটি কারেন্ট অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তাতে মাসে ৮০ লক্ষ টাকা করে লেনদেন হতো বলে তাঁর দাবি। প্রতিদিন তাঁর সংস্থার কর্মীরা ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা জমা দিতেন। কিন্তু ধাক্কা আসে গত নভেম্বরের গোড়ায়। কেন্দ্র পুরনো পাঁচশো এবং হাজারের নোট বাতিল করে। বাতিল নোট জমা দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কে দীর্ঘ লাইন পড়তে থাকে। সমস্যার কথা জানানোয় ম্যানেজারই রজতবাবুকে দিয়ে টাকা গুনিয়ে জমা করার পরামর্শ দেন বলে সোমনাথবাবুর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘টাকা ঠিকঠাকই জমা পড়ছিল। এ মাসের গোড়ায় আয়কর দফতর চিঠি দিয়ে ৯ নভেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমার ওই অ্যাকাউন্টগুলিতে লেনদেনের বিবরণ চায়। তখনই গরমিলের কথা জানতে পারি।’’ সোমনাথবাবুর দাবি, রজতবাবুকে তিনি ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট এনে দিতে বলেছিলেন। ৬ ফেব্রুয়ারি রজতবাবু তাঁর কাছে এসে অ্যাকাউন্টে বেশ কিছু বাতিল ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটে ৩০-৩৫ লক্ষ টাকা জমা করার কথা বলেন। এর দায়ও স্বীকার করেন। সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘আমি ব্যাঙ্কে বাতিল নোট পাঠাতাম না।’’

সোমনাথবাবুর দাবি, তিনি পরের দিনই রজতবাবুকে নিয়ে ব্যাঙ্কে যান। সঙ্গে নিয়ে যান টাকা জমা দেওয়ার রসিদ। তাঁর অভিযোগ, তাঁর রসিদে যে নোটে টাকা জমা হয়েছিল বলে লেখা ছিল, তার সঙ্গে ব্যাঙ্কের ‘রিসিপ্ট ভাউচার’-এর মিল ছিল না। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে ম্যানেজারের নির্দেশে রজতবাবু লিখিত ভাবেও দায় স্বীকার করেন। উলুবেড়িয়া থানায় এর পর ‘পিটিশন’ দেন সোমনাথবাবু। ব্যাঙ্কের ভিজিল্যান্স বিভাগকে জানান।

এ দিন ব্যাঙ্কে আসে রিজিওনাল ম্যানেজার রাজেশকুমারের নেতৃত্বাধীন এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। ব্যাঙ্কের তরফে গোটা বিষয়টি তদন্ত হবে বলে জানান রাজেশকুমার। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া ‘রিসিপ্ট ভাউচার’গুলির সঙ্গে সোমনাথবাবুর কাছে থাকা রসিদগুলি মিলিয়ে দেখা হবে। তার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ।

রজতবাবুর পরিবারের লোকজন অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁদের দাবি, রজতকে ফাঁসানোর জন্যই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।

Old Notes Suicide Demonetisation Bank
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy