গড়িয়ার দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজের পরে এ বার হাওড়ার পাঁচলা-গঙ্গাধরপুর কলেজ এবং খাস কলকাতার গুরুদাস কলেজ।
ফের স্নাতক স্তরে ভর্তি হতে আসা ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বিধি ভেঙে টাকা তোলার অভিযোগ উঠল ছাত্র সংসদের বিরুদ্ধে। এবং এ ক্ষেত্রেও অভিযুক্ত সেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। কারণ, ওই দুই কলেজেরই ছাত্র সংসদ টিএমসিপি-র দখলে। পাঁচলা কলেজে যে টাকা তোলা হচ্ছে, তেমন অভিযোগ তাঁর কাছেও পৌঁছেছে বলে স্বীকার করেছেন টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। ওই কলেজের ছাত্র সংসদের নেতারাও বিষয়টি অস্বীকার করছেন না। তবে গুরুদাস কলেজে টাকা তোলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন।
কলেজে ভর্তিতে অনিয়ম ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ছাত্র ভর্তির ব্যবস্থা হয়েছিল। সেই ব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে কলেজে কলেজে দাদাগিরিরই পথ প্রশস্ত করা হয়েছে বলে শিক্ষাজগতের অভিযোগ। ভর্তিতে ছাত্র সংসদের তরফে টাকা তোলার ঘটনায় সেটাই প্রমাণিত।
অভিযোগগুলো ঠিক কী ধরনের?
পাঁচলা-গঙ্গাধরপুর কলেজে মূল ফটক দিয়ে ঢুকে ডান দিকে ছাত্র সংসদের ঘরের সামনে বেঞ্চ পেতে বসে রীতিমতো রসিদ কেটে টাকা তুলছে ছাত্র সংসদ। মঙ্গলবারেও এমন চিত্র দেখা গিয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার ভর্তি বন্ধ। শুক্রবার থেকে ফের ওই ‘ইউনিয়ন ফি’ দিতে হবে বলে জানিয়েছে ছাত্র সংসদ। আর গুরুদাস কলেজে অভিযোগ, ফি-বুকে স্ট্যাম্প মেরে ভর্তি হতে আসা পড়ুয়া-পিছু ৫০০ টাকা নিচ্ছে ছাত্র সংসদ।
কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যেই ছাত্র সংসদকে বেঞ্চ পেতে টাকা তুলতে দেখা গেলেও বিষয়টি তিনি জানেন না বলে দাবি করেন পাঁচলা-গঙ্গাধরপুর কলেজের অধ্যক্ষ পরমানন্দ সরকার। তিনি বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ঘটনাটি যদি ঘটে থাকে, তা অবশ্যই নিন্দনীয়। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেব।”
টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেবের দাবি, এই বিষয়ে আগেই অভিযোগ এসেছে তাঁর কাছে। তিনি বলেন, “পুরনো খবরের ব্যাপারে আমি কোনও প্রতিক্রিয়া দেব না। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, সেই বিষয়েও সংবাদমাধ্যমে কিছু বলব না।” তবে শঙ্কুদেব কোনও ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী নন বলেই কলেজ সূত্রের খবর। অনার্সের পড়ুয়া-পিছু ২৫০ টাকা এবং জেনারেলে ২০০ টাকা ইউনিয়ন ফি না-দিয়ে পাঁচলা কলেজে ভর্তি হওয়া কার্যত অসম্ভব বলেই জানাচ্ছে ওই সূত্র।
এলাকার একমাত্র কলেজ পাঁচলা-গঙ্গাধরপুর। বাগনান, আমতা, ডোমজুড় থেকেও অনেকে পড়তে আসেন এই কলেজে। বাণিজ্য বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের কথায়, “অনেক কষ্টে করে টাকা জোগাড় করে ভর্তি হতে এসেছিলাম। কলেজে এসে শুনি, ২৫০ টাকা ইউনিয়ন ফি দিতে হবে। অগত্যা নিজের জমানো হাতখরচ থেকেই ইউনিয়ন ফি চুকিয়ে দিতে বাধ্য হই।”
কিন্তু কেন এই ইউনিয়ন ফি?
ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক আক্রম খান বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের উন্নতির জন্যই এই টাকা তোলা হচ্ছে।” তবে এটা ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে দাবি করে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা জানিয়েছে, বিষয়টি উচ্চ নেতৃত্বকে জানানো হবে।
খাস কলকাতার গুরুদাস কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তি হতে আসা ছাত্রছাত্রীদের ফি-বুকে স্ট্যাম্প মেরে টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি-র অধীন ছাত্র সংসদের বিরুদ্ধে। কলেজ-কর্তৃপক্ষ জানান, লিখিত ভাবে না-হলেও এ ব্যাপারে তাঁদের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন কয়েক জন ছাত্রছাত্রী এবং তাঁদের অভিভাবকেরা। ছাত্র সংসদকে ডেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষ মনোতোষ বৈশ্য বুধবার বলেন, “কয়েক জনের কাছ থেকে মৌখিক ভাবে বিষয়টি জেনেছি। সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র সংসদের সদস্যদের ডেকে এই বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়।” তাঁর দাবি, ছাত্র সংসদের সদস্যেরা টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তবে ফি-বুকে স্ট্যাম্প মারার জন্য ক্ষমা চেয়ে এমন ঘটনা আর হবে না বলে কথা দেয় ছাত্র সংসদ।
কাল, শুক্রবার ওই কলেজে জেনারেল পাঠ্যক্রমে ছাত্র ভর্তির কাউন্সেলিং।
ওই দিন যাতে গোলমাল না-হয়, সে-দিকে তাঁরা নজর রাখবেন বলে জানান অধ্যক্ষ।
কলেজের শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, ফি-বুকে স্ট্যাম্প মারা এবং টাকা তোলাকে কেন্দ্র করে ছাত্র সংসদের সঙ্গে মতবিরোধ হয় কর্তৃপক্ষের। তার জেরে তিন দিন ভর্তি বন্ধ রাখার জন্য কলেজ-কর্তৃপক্ষকে চাপ দেয় ছাত্র সংসদ। অধ্যক্ষ সেই চাপের কাছে মাথা নত করেন বলে অভিযোগ। মনোতোষবাবু এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, সোমবারের পরে শুক্রবারেই ফের ছাত্র ভর্তি করার কথা ছিল। ভর্তি বন্ধ রাখা হয়নি। আর টিএমসিপি-র রাজ্য সম্পাদক সুজিত সামের দাবি, তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগই মিথ্যা, সংবাদপত্রের মনগড়া।
সহ প্রতিবেদন: সাবেরী প্রামাণিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy