ইসরত জহান
সপ্তাহখানেক আগে বোরখার আড়াল থেকে উঁকি দেওয়া চোখে দেখা গিয়েছিল জয়ের আনন্দ আর আলো। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিনভর সেই চোখে ছিল শুধুই উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তা।
তিন তালাকের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মহিলাদের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছিলেন এ রাজ্যের ইসরত জহান। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে জিতে গিয়েছিলেন তাৎক্ষণিক তিন তালাক বন্ধের লড়াইয়ে। নতুন লড়াইয়ের জমি তৈরির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু এ দিন হঠাৎ তাঁর দুই সন্তান নিখোঁজ হয়ে যায়। ইসরত ছুটে যান পুলিশের কাছে। ঘণ্টাখানেকের তল্লাশির পরে তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে থানায় হাজির হন ইসরতের স্বামী মুরতাজা আনসারি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে গোলাবাড়ি থানায় গিয়ে ইসরত জানান, দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে তিনি ওই থানা এলাকার নন্দ ঘোষ লেনে থাকেন। কিন্তু এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ছেলেমেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সাত বছরের ছেলে মহম্মদ জাহিদ এবং বছর তেরোর মেয়ে ফাইসদা খাতুনকে তাঁর স্বামী মুরতাজা, ভাশুর মুস্তফা আনসারি এবং জা জাবিনা খাতুন অপহরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেন ইসরত।
আরও পড়ুন: নিরাপত্তা নেই, মমতাকে চিঠি ইসরতের
পুলিশ খোঁজখবর শুরু করতেই মুরতাজার এক আত্মীয় তাঁকে ফোনে পুরো বিষয়টি জানান। ছেলেমেয়েকে নিয়ে দ্রুত গোলাবাড়ি থানায় হাজির হওয়ার পরামর্শ দেন। মুরতাজা তার পরেই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ জাহিদ এবং ফাইসদাকে নিয়ে থানায় হাজির হন মুরতাজা। তিনি জানান, বুধবার আবু ধাবি থেকে দেশে ফিরেছেন। তার পরে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা বারবার ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বায়না করছিল। আমি মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আমায় দেখতে পায়। তার পরে ওদের নিয়ে একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম।’’ পুলিশের জেরায় তিনি জানান, এ দিন সকালে ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাজার করতে গিয়েছিলেন। তার পরে যান বর্ধমানে এক আত্মীয়ের বাড়িতে।
জিজ্ঞাসাবাদের পরে মুরতাজাকে এলাকা ছাড়তে বারণ করেছে পুলিশ। রাতে পুলিশ জাহিদ-ফাইসদাকে তাদের মায়ের কাছে পাঠায়। ইসরতই আজ, শুক্রবার তাদের আদালতে নিয়ে যাবেন। বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দির পরে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে বলে জানায় পুলিশ। ইসরত জানান, ১৪ বছর বয়সে বিহারের মুরতাজার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। কিন্তু মেয়ের জন্ম দেওয়ার ‘অপরাধ’-এ লাগাতার অত্যাচার ও অপমান সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। ছেলে হওয়ার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। ২০১৪ সালে আবু ধাবি থেকে তাঁকে ফোনে তালাক দেওয়া হয়। তার পরেই শুরু হয় ইসরতের নতুন লড়াই। শ্বশুরবাড়ির লোকজন এবং এলাকার কিছু মানুষের বিরুদ্ধে বারবার কটূক্তি, হেনস্থার অভিযোগ জানিয়েছেন ইসরত। নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় বিভিন্ন সময়ে রাজ্য সরকারকে বিষয়টি জানালেও কোনও ফল মেলেনি বলেই তাঁর অভিযোগ। ইসরতের আইনজীবী নাসিয়া ইলাহি খান এ দিন বলেন, ‘‘বারবার সরকারের কাছে নিরাপত্তার জন্য আবেদন করেছিলাম। সাড়া মেলেনি। এর পরে ইসরত আরও বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy