বর্ষায় বৃষ্টি স্বাভাবিক। কিন্তু চাষিরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টির পরে চাষের জমির জল শুকোনোর মতো রোদ উঠছে না। কিছু ক্ষণ বৃষ্টি থামার পরে ফের বৃষ্টি শুরু হচ্ছে। বেশির ভাগ চাষের জমিই জলের তলায়। অধিকাংশ আনাজের ফুলই ধরছে না। লতানে গাছের কাণ্ড জলেপচে যাচ্ছে। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। যে টুকু আনাজ বাজারে আসছে তারা অনায়াসেই দামে শতক বা নিদেনপক্ষে অর্ধ শতক স্পর্শ করছে। আনাজ বাজার করতেই মধ্যবিত্তের পকেট ফাঁকা।
দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট বাজার বা উত্তরের মানিকতলা বাজার বা শহরতলির বাজারেও বেগুন সেঞ্চুরি পেরিয়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। লঙ্কা ১৫০ টাকা, পটল হাফ সেঞ্চুরি পেরিয়ে ৭০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। দাম আরও বাড়তে পারে। বিনস্ ১২০, করলা ৭০, শসা ৬০, ঢ্যাঁড়শ ৬০থেকে ৭০, গাজর ৬০, বরবটি ৬০ থেকে ৭০, টোম্যাটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এ যেন একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার লড়াই।
চাষি ভেন্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রেসিডেন্ট তথা রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে বলেন, ‘‘অতিবৃষ্টিতে গত কয়েক দিনে কোলে মার্কেটের আনাজ আসার পরিমাণ ৩০ শতাংশ কমেছে। স্থানীয় আনাজ বিক্রেতারাও ১০ থেকে ১৫ কেজি আনাজ কম করে বিভিন্ন বাজারে নিচ্ছেন। কারণ বৃষ্টিতে অনেক বাজার ঠিক মতো বসছে না। রাজ্যের প্রায় সব পাইকারিবাজারের এক অবস্থা।’’ উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমার গোপালনগর হাটের কথা বললেন কমল। সেখানে রাজ্যের সব জেলা থেকে ট্রাক যায় আনাজ কিনতে। এখন কিছু ছোট ম্যাটাডরের সেখানে বিচরণ। কমলের কথায়, ‘‘টানা বৃষ্টিতে আনাজের গাছ তো খেতেই পচে যাচ্ছে। রোদ উঠছে কোথায়? দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি হল রাজ্যের আনাজ উৎপাদনের প্রাণকেন্দ্র। চার জেলারই খেতের পর খেতজলের তলায়।’’
উত্তর ২৪ পরগনা থেকে কোলে মার্কেটে আনাজ আনছেন, এমন কয়েক জন চাষী বললেন,‘‘অতিবৃষ্টিকে দায়ী করা হলে, সমান ভাবে দায়ী করা উচিত নিকাশি নালার বেহাল দশাকে। কেন নদী থেকে পলি তোলা হয় না? একটুবৃষ্টিতেই নদীগুলি ভরে যায় পলি না সরানোর জন্য। নদীও তো বৃষ্টির জল টানতে পারছে না।’’ গড়িয়াহাট বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘যে ভাবে বৃষ্টি চলছে তাতেএখনই দাম কমার সম্ভাবনা নেই। অন্তত ১০ দিন টানা রোদ চাই। পটল, ঝিঙে, শসা, লাউ সহ নানা আনাজের দাম আরও বাড়বে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)