E-Paper

বঙ্গেও করোনা, সতর্কতার পরামর্শ

কোভিড-১৯-এর সিঁদুরে মেঘ কি বঙ্গের আকাশেও? কারণ, রাজ্যে এখন অল্প হলেও করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলছে বলে খবর। যদিও স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৫ ০৫:০৫

—প্রতীকী চিত্র।

সিঙ্গাপুর, হংকংয়ের পাশাপাশিদেশে ধীরে হলেও চোখ রাঙাচ্ছে করোনা। কোভিড-১৯-এর সিঁদুরে মেঘ কি বঙ্গের আকাশেও? কারণ, রাজ্যে এখন অল্প হলেও করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলছে বলে খবর।

যদিও স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সূত্রের খবর, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ২৫ জন মতো আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। কাঁকুড়গাছির এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে দুই জনের কোভিড পজ়িটিভ বলে খবর পেয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। মগরাহাটের দু’জন বাড়িতেই ছিলেন, পরে তাঁদের পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯ মে পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্ত ২৫৭ জন। ১১টি রাজ্যে পজ়িটিভ রোগীর খোঁজ মিলেছে। তার মধ্যে তামিলনাড়ু, কেরল, মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। শুক্রবার মহারাষ্ট্রের ঠাণেতে প্রবল ডায়াবিটিসে আক্রান্ত এক তরুণের মৃত্যু হয়। করোনা পরীক্ষায় তাঁর পজ়িটিভ এসেছিল। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মৃত্যুর কারণ ‘কোমর্বিডিটি’। বেঙ্গালুরুতে ৮৪ বছর বয়সি এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয় গত শুক্রবার। তাঁর আরটিপিসিআর পরীক্ষায় পজ়িটিভ এসেছে বলে শনিবার জানা গিয়েছে। ওই সমস্ত রাজ্যে করোনা সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এ রাজ্যে এখনও নির্দিষ্ট ভাবে নির্দেশিকা জারি হয়নি কেন? স্বাস্থ্য কর্তাদের দাবি, ওমিক্রনের ঢেউয়ের সময়ে যে নির্দেশিকা জারি ছিল, সেটিই মেনে চলার কথা বলা রয়েছে। প্রয়োজনমতো নতুন নির্দেশিকা জারি হবে।

তবে করোনার কোন ভ্যারিয়েন্টে রোগীরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তা নির্দিষ্ট ভাবে জানার জন্য জিনোম সিকোয়েন্সিং করার বিষয়ে কেন্দ্রের কোনও নির্দেশিকা এখনও নেই বলেও দাবি চিকিৎসকদের। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, হংকং ও সিঙ্গাপুরে ওমিক্রনের উপপ্রজাতি জেএন.১-র দু’টি সাব ভ্যারিয়েন্ট এলএফ.৭ এবং এনবি.১.৮-র প্রকোপ বেড়েছে বলে জানা গিয়েছে। জেএন.১-র বংশধর ওই দুটি উপপ্রজাতির কারণেই তামিলনাড়ু, কেরল, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, দিল্লি, গুজরাতে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। অনির্বাণ বলেন, “জেএন.১-এর বংশধর নতুন দু’টি উপপ্রজাতির আচরণের দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও নজর রাখছে। তবে বিস্তারিত তথ্য মেলেনি। অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।”

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত বছর জানুয়ারির শুরুর থেকেই বঙ্গে করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল। কিন্তু গত বছরে মোট কত জন আক্রান্ত হয়েছিলেন, তার নির্দিষ্ট সংখ্যা স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশ করেনি। সূত্রের খবর, সংখ্যাটি ছিল প্রায় ৯০। মৃত্যু হয়েছিল দু’জন ষাটোর্ধ্বের। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, গত বছর আক্রান্তদের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে জানা গিয়েছিল, বেশির ভাগই ওমিক্রনের উপপ্রজাতি জেএন.১ দ্বারা আক্রান্ত। মে মাসে ওমিক্রনের আর একটি সাব ভ্যারিয়েন্ট কেপি.২-এর খোঁজ মিললেও, তা সংখ্যায় বেশি ছিল না।

চিকিৎসকদের বড় অংশের দাবি, আক্রান্তের ঠিক সংখ্যা জানতে না পারার নেপথ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক করোনা পরীক্ষা না হওয়া। সংক্রামক রোগের চিকিৎসক যোগীরাজ রায়ের কথায়, “কেন্দ্রের কোভিড-পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতি অনুযায়ী খুব গুরুতর অসুস্থ, অক্সিজেন লাগছে, অনিয়ন্ত্রিত কোমর্বিডিটি রয়েছে এমন রোগীদের শুধু পরীক্ষা করতে হবে।” তবে জ্বর, সর্দি, কাশির উপসর্গ বুঝে চিকিৎসার পাশাপাশি প্রয়োজন হলে কোভিড পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানাচ্ছেন যোগীরাজ। বেশ কিছু দিন আগে আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালে যে চিকিৎসাধীন মহিলার কোভিড পজ়িটিভ হয়েছিল, তাঁর শুকনো কাশি ও জ্বরের উপসর্গ ছিল।

ওই হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ারের চিকিৎসক সৌতিক পান্ডা জানাচ্ছেন, ওই রোগীর আপার রেসপিরেটরি সংক্রমণের কারণ জানতে ‘বায়োফায়ার রেসপিরেটরি প্যানেল’ পরীক্ষা করা হয়েছিল। সৌতিকের কথায়, “সন্দেহ করা হয়েছিল, কোনও ফ্লুয়ের সংক্রমণ ধরা পড়বে। কিন্তু করোনা পজ়িটিভ আসে। কয়েক দিন আইসোলেশনে রাখার পরে ছুটি দেওয়া হয়েছে।” সৌতিক আরও জানিয়েছেন যে, ওমিক্রনের মতোই তার উপপ্রজাতির কারণে যে সংক্রমণ ঘটছে, তাতে উপসর্গ সাধারণ ফ্লুয়ের মতোই।

সূত্রের খবর, মগরাহাটের বাসিন্দা কুড়ি বছরের এক তরুণী ও এক কিশোরের শুকনো কাশি ও জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্টের উপসর্গ ছিল। সপ্তাহখানেক আগে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরীক্ষাগারে দু’জনের করোনা পরীক্ষার ফল পজ়িটিভ আসে। তবে তাদের কারও শারীরিক সমস্যা ছিল না। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাড়িতে থাকতে বলা হয়। কিছু দিন পর তাদের নতুন করে পরীক্ষা করলে ফল নেগেটিভ আসে বলেই দাবি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Covid 19 India Corona virus

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy