Advertisement
E-Paper

বেহাল বাগান

নোট বাতিলে কী সমস্যা? কোথাও চা শ্রমিকরা মজুরি পান সাপ্তাহিক ভিত্তিতে, কোথাও পাক্ষিক। এক জন স্থায়ী শ্রমিকের মজুরি দৈনিক ১৪০-১৫০ টাকা। একটি বড় বাগানে মজুরি দিতে সপ্তাহে অন্তত ৫ লক্ষ টাকা লাগে।

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:১১

নোট বাতিলে কী সমস্যা?

কোথাও চা শ্রমিকরা মজুরি পান সাপ্তাহিক ভিত্তিতে, কোথাও পাক্ষিক। এক জন স্থায়ী শ্রমিকের মজুরি দৈনিক ১৪০-১৫০ টাকা। একটি বড় বাগানে মজুরি দিতে সপ্তাহে অন্তত ৫ লক্ষ টাকা লাগে। বিধিনিষেধের জেরে এই টাকা তুলতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। তাই মজুরি দেওয়া যাচ্ছে না।

শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি মজুরি দেওয়া হচ্ছে না কেন?

প্রচলিত আইন অনুযায়ী, চা বাগিচায় কোনও সরকারি সুযোগ সুবিধে শ্রমিকরা সরাসরি নিতে পারেন না। তাই অনেকের অ্যাকাউন্টই নেই। তাই এ ভাবে টাকা দিলে সকলে মজুরি পাবে না। কয়েকটি শ্রমিক পরিবারে যৌথ অথবা সিঙ্গল অ্যাকাউন্ট আছে ঠিকই। কিন্তু এক পরিবারের একাধিক সদস্য বাগানে কাজ করেন। সে ক্ষেত্রে একের মজুরি অন্যের অ্যাকাউন্টে দিতে গেলে লিখিত সম্মতি প্রয়োজন। সেটাও এখন অসম্ভব।

দ্রুত মজুরি না দেওয়া গেলে কী হতে পারে?

কাজ বন্ধের আশঙ্কা করছে অনেক বাগান। মাসে দু’বার মজুরি দেওয়া হয় ডুয়ার্সের কালচিনি-রায়মাটাং চা বাগানে। দুই বাগান মিলে স্থায়ী শ্রমিক ৩,২০০ জন। ১৫ দিনে এক বার মজুরি দিতে গেলে চাই ৪০ লক্ষ টাকা। কী ভাবে এই টাকা মেটাবেন, জানেন না বাগান কর্তৃপক্ষ। চা বাগান পরিচালনা সংস্থার তরফে নিরঞ্জনকুমার বসু বলেন, ‘‘শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন না, ওঁদের হাঁড়ি চড়ছে না। এই সপ্তাহে মজুরি দিতে না পারলে, ভুখা শ্রমিকরা কাজেই আসবেন না।’’

দিন কয়েক কাজ বন্ধে কী সমস্যা?

বাগানে এখন পাতা তোলার কাজ শেষ করে ‘প্রুনিং’ বা পরিচর্যার সময়। নভেম্বরের শেষে চা গাছের পাতা-ডাল ছাঁটা, মাটির যত্ন নেওয়া হয়। শ্রমিকরা এক সপ্তাহ কাজ বন্ধ করে দিলে পরিচর্যা আটকে যাবে। ফলে আগামী মরসুমে পাতা তোলার দিন পিছিয়ে যেতে পারে, চায়ের মানেও প্রভাব পড়বে। দার্জিলিং চায়ের মতো স্পর্শকাতর অর্থোডক্স পাতায় আশঙ্কা আরও বেশি।

প্রশাসনের ভূমিকা কী?

জেলাশাসকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলায় বিধিনিষেধ নেই। দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি— তিন জেলা প্রশাসনই চা বাগান কর্তৃপক্ষকে বলেছে, মজুরির টাকা চেকে লিখে জেলাশাসকের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হোক। প্রশাসন সেই চেক ভাঙিয়ে নগদ টাকা বাগান কর্তৃপক্ষকে দেবে। মালিকরা রাজি হওয়ায় কয়েকটি চা বাগানে মজুরি দেওয়ায়ও হয়। এর পরে জেলা প্রশাসন হঠাৎই জানায়, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই লেনদেন অনুমোদন করবে না বলে তারা খবর পেয়েছে। মঙ্গলবার থেকে চেক নিচ্ছে না প্রশাসন।

কোন পথে সমাধান?

বাগান মালিকদের অনেকেরই দাবি, প্রশাসন চেক নিয়ে টাকা ভাঙিয়ে দিক। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নতুন কোনও নির্দেশ পাঠালে তখন দেখা যাবে। অসমের বাগানগুলিতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপেই মজুরি দেওয়া চলছে। প্রশাসনের কর্তারা সেই ঝুঁকি নিতে চান না। কারণ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আগের লেনদেনে অনুমোদন না দিলে শাস্তির মুখে পড়ার আশঙ্কা।

ছোট বাগানে কী সমস্যা?

শ্রমিক কম বলে মজুরির সমস্যা বিশেষ নেই। তবে সঙ্কটে ছোট বাগানের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি। এই সব বাগান বটলিফ কারখানায় (মাঝারি আকারের চা তৈরির কারখানা) পাতা বিক্রি করে। ছোট বাগানে অল্প পাতা হয়। বটলিফ কারখানায় অল্প পাতা নিয়ে যাওয়ার খরচ বেশি। সুযোগ নিয়ে ফড়েদের চক্র গড়ে উঠেছিল। বাগানে গিয়ে কম দামে পাতা কিনে নিত চক্র। বঞ্চিত হতেন চা-চাষিরা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় চা পর্ষদের নির্দেশে গোষ্ঠী গড়েছিলেন চাষিরা। এতে যেমন পরিবহণ খরচ কমে, পাতার ন্যায্য দাম পেতেও সুবিধে হয়। এত দিন বটলিফ কারখানা গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিত। গোষ্ঠী সেই টাকা সদস্যদের মধ্যে ভাগ করত। গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়লেও, বিধি-নিষেধের জেরে তা তুলে সদস্যদের মধ্যে ভাগ করা যাচ্ছে না। বিপদে চাষিরা। সেই সুযোগে ফের সক্রিয় দালাল চক্র। কম দামে পাতা বিক্রি করতে হচ্ছে চাষিদের। ভাঙতে বসেছে গোষ্ঠীগুলি।

উত্তরবঙ্গে চা বাগান ক’টি?

দার্জিলিং পাহাড়ে ৮৭টি, তরাইয়ে (শিলিগুড়ি লাগোয়া সমতল) ৩২টি, ডুয়ার্সে ১৮১টি।

ছোট চা বাগানের সংখ্যা কত?

সাধারণত ২৫ একর পর্যন্ত বাগানকে ছোট বাগান বলা হয়। উত্তরবঙ্গে প্রায় ৪০ হাজার ছোট বাগান রয়েছে। শ্রমিক সংখ্যা দেড় লক্ষ।

ক’টি চা বাগান বন্ধ?

পাহাড়ে ৩টি, ডুয়ার্সে ৯টি।

রুগ্ণ বাগান কটি?

৩০টি।

মোট শ্রমিক কত?

স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৫ লক্ষ।

বাগানের উপরে নির্ভরশীল কত?

প্রায় ১২ লক্ষ।

Tea garden workers Money Wages
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy