—প্রতীকী চিত্র।
বৃদ্ধ বাবা-মাকে খুন করে কি নিজেও আত্মঘাতী হয়েছেন গড়িয়ার সুমনরাজ মৈত্র? না কি তাঁরা তিন জনেই একসঙ্গে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে তিনটি দেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকে রহস্য বেড়ে চলেছে। উঠে আসছে একের পর এক প্রশ্ন, যার উত্তর নেই। একাধিক সম্ভাবনা নিয়ে পুলিশও ধন্দে। ওই ফ্ল্যাট থেকে কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। তবে ৩৯ বছরের সুমন মৃত্যুর কয়েক দিন আগে একটি ফেসবুক লাইভ করেছিলেন। ২০ মিনিটের সেই ভিডিয়ো এখন তদন্তকারীদের আতশকাচের নীচে।
লাইভে নিজের জীবনের নানা সমস্যার কথা বলেছিলেন সুমন। তাঁর পিছনে শুয়েছিলেন তাঁর বাবাও। শেষের দিকে সুমন কেঁদে ফেলেছিলেন। কাঁদতে কাঁদতে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘মাঝেমাঝে ভাবছি, নিজেকে শেষ করে দেব। বাবা-মাকে শেষ করে দেব। অন্তত শান্তিতে তো যেতে পারব তা হলে!’’
প্রবল অর্থকষ্টে ভুগছিল গড়িয়ার মৈত্র পরিবার। বুধবার দুপুরে নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার গড়িয়া গড়াগাছায় বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় স্বপন মৈত্র (৭৫), তাঁর স্ত্রী অপর্ণা (৬৮) এবং ছেলে সুমনের (৩৯) ঝুলন্ত দেহ। ফেসবুক লাইভে সুমন যে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অর্থাৎ, তাঁরা তিন জনেই একসঙ্গে আত্মহত্যা করেছেন, না কি বাবা এবং মাকে মেরে নিজে আত্মঘাতী হয়েছেন পুত্র, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনটি দেহ একসঙ্গে ঝুলতে দেখে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল, বাবা, মা এবং পুত্র একসঙ্গে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু ফেসবুক লাইভে সুমনের বক্তব্য শোনার পর প্রশ্ন উঠছে, তবে কি সুমনই তাঁর বাবা এবং মাকে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন? তা-ই যদি হয়, তিনি নিজে আত্মহত্যা করবেন জেনেও বাবা-মায়ের দেহ ঝোলাতে গেলেন কেন?
লাইভে অবশ্য সুমন জানিয়েছিলেন, আত্মহত্যা করার চরম সিদ্ধান্ত তিনি নিতে পারবেন না। কারণ তাঁর সেই সাহস নেই। তাঁর কথায়, ‘‘সত্যি বলছি, আমি সাহস পাচ্ছি না। মরতে পারছি না। আমার ভয় করছে। মাঝেমাঝে মনে হচ্ছে আমি কি সত্যিই পাগল হয়ে গিয়েছি? আমি কোথায় যাব? কার কাছে যাব? কোথায় পালাব? যেখানে যাব, সেখানেই তো ওরা আমার পিছু নেবে।’’
তাঁকে অপদস্থ করা হয়েছে বলেও ফেসবুক লাইভে অভিযোগ করেন সুমন। বলেন, ‘‘ওরা আমাকে সবসময় অপদস্থ করেছে। যেখানে গিয়েছি অপদস্থ করেছে। মানুষ সবচেয়ে বেশি কিসে ভয় পায় জানেন? মৃত্যুকে নয়। অপদস্থ হওয়াকেই।’’
লাইভে সাহায্যের জন্য কাতর আর্জি জানিয়েছিলেন সুমন। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা কেউ যদি আমার এই ভিডিয়ো দেখেন, দয়া করে আমাকে একটু সাহায্য করুন। আমার পাশে দাঁড়ান। আমি কী করব, বুঝতে পারছি না।’’
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রঞ্জন ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ভিডিয়ো করে বলার মাধ্যমেই বোঝা যাচ্ছে, উনি আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। এই আতঙ্কের অনুভূতি বাড়িতে এক জনের থেকে বাকিদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। আবার, আমি চলে গেলে বাড়ির লোকের কী হবে, সেই ভাবনাও কাজ করে। মানুষের মন সরলরেখায় চলে না। তাই কী ভেবে তিনি কী করেছেন, তা বলা সহজ নয়। তবে যে কোনও আত্মহত্যাই আটকানো যায়। লাইভে এসে উনি সাহায্য চেয়েছিলেন।’’
গড়িয়াকাণ্ডে আত্মহত্যা বা খুন নিয়ে যে ধন্দ তৈরি হয়েছে, তা ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট এলেই জানা যাবে বলে দাবি পুলিশের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy