Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বয়কটে জেলা পরিষদের সদস্যরাও

ফরাক্কার সরকারি অনুষ্ঠানে অনাহূত মইনুল

ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক তৃণমূলে ভিড়ছেন বলে ৪৮ ঘণ্টা আগে বড়াই করে ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন। মঙ্গলবার রাজ্যের জনস্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা সেই মইনুল হককে এলাকার একটি পরিশ্রুত জল প্রকল্পের সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণই করলেন না! প্রশ্ন উঠে গেল মান্নানের দাবি নিয়েও।

প্রকল্পের উদ্বোধনে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

প্রকল্পের উদ্বোধনে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৫ ০০:১৭
Share: Save:

ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক তৃণমূলে ভিড়ছেন বলে ৪৮ ঘণ্টা আগে বড়াই করে ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন। মঙ্গলবার রাজ্যের জনস্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা সেই মইনুল হককে এলাকার একটি পরিশ্রুত জল প্রকল্পের সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণই করলেন না! প্রশ্ন উঠে গেল মান্নানের দাবি নিয়েও।
বেনিয়াগ্রামের ওই জল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল বাম জমানায় ২০০৯ সালে। নিজের এলাকায় সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পাওয়ার ঘটনা তাঁর ২০ বছরের বিধায়ক জীবনে নজিরবিহীন বলে জানিয়েছেন মইনুল। অনাহূত মইনুল স্বাভাবিক ভাবেই এ দিনের অনুষ্ঠানে যাননি। বাড়িতে বসে মইনুল ক্ষোভ উগড়ে তোপ দেগেছেন তৃণমূলের দিকেই। মইনুল বলেন, ‘‘আমি ফরাক্কায় বিধায়ক। অথচ আমন্ত্রণ নেই। আবু হাসেম খান চৌধুরী ফরাক্কা এলাকার সাংসদ। আমন্ত্রণ নেই তাঁরও। মান্নান হোসেন বিধায়কও নন, সাংসদও নন। অন্য যে বিধায়কেরা ছিলেন তাঁদের সঙ্গে ফরাক্কার কোনও সম্পর্কই নেই। তবু তাঁরা আমন্ত্রিত।’’ ‘‘এ যেন অনেকটা গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল গোছের অবস্থা’’— কটাক্ষ মইনুলের।
স্থানীয় বিধায়ক যে দলেরই হোন তাঁকে সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোর ঘটনাকে সমর্থন করেননি তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সাহাজাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘ব্লক অফিসে বিডিও-র সামনে আমন্ত্রিতদের যে তালিকা তৈরি হয়েছিল তাতে স্থানীয় বিধায়ক ও সাংসদ দু’জনেরই নাম ছিল। তারপরে নাম কী করে বাদ পড়ল জানা নেই।’’ তাঁর দাবি, এর জবাব দিতে হবে জেলার জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কর্তাদেরই। জেলার জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র রূপায়ণ ভট্টাচার্য অবশ্য দাবি করেছেন, বেনিয়াগ্রামের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর দায়িত্ব তাঁর ছিল না। তিনি বলেন, ‘‘আমন্ত্রণ পত্র ছাপানো হয়েছে বিভাগীয় সচিবের নামে। তাই কাকে, কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বা হয়নি তা জানা নেই।’’
এ দিন ফরাক্কার এনটিপিসি মোড়ে জল প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২০২০ সালের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত মানুষের কাছে আর্সেনিক মুক্ত জল পৌঁছে দেবে রাজ্য সরকার।’’ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বেনিয়াগ্রামের জল প্রকল্পটি গড়তে ৬ বছর সময় লেগেছে। ২১ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এর দ্বারা উপকৃত হবেন ১ লক্ষ ১২ হাজার মানুষ। জেলায় বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে ৪৮.৮৮ শতাংশ বাসিন্দা আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের সুবিধা পাচ্ছেন। ৮৭টি জলপ্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলছে। সে কাজ শেষ হলে ৮৭ শতাংশ মানুষের কাছে সে জল পৌঁছে দেওয়া যাবে।

অন্য দিকে, মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সহায়তায় জেলা পরিষদ চত্ত্বরে পঞ্চায়েত প্রশিক্ষণ ও সম্পদ কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। কিন্তু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের কেউ এলেন না! অনুষ্ঠান চলাকালীন ভুল করে সঞ্চালিকা একবার জেলা পরিষদের সভাধিপতি শব্দটা ব্যবহার করা ছাড়া আর কেউ মুখেও আনেনি তাঁদের নাম। কংগ্রেস পরিচালিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদারের দাবি, নাম কা ওয়াস্তে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমন্ত্রণপত্রে অতিথির তালিকায় শেষের দিকে নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আমন্ত্রণ পত্র থেকে মঞ্চ, সর্বত্রই তৃণমূল নেতারা ছিলেন সামনের সারিতে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা না গেলে ওরা খুব খুশি হবে সেটা বুঝেছিলাম। তাই আমরা এ দিনের অনুষ্ঠান বয়কট করেছি।’’

যদিও প্রশাসনের তরফে ওই দাবি উড়িয়ে বলা হয়েছে সব কিছু নিয়ম মতো হয়েছে। তা হলে জেলা পরিষদের সদস্যেরা কেন অনুষ্ঠান বয়কট করল? এর সদুত্তর মেলেনি। আমন্ত্রণ নিয়ে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সবটাই নিয়ম মাফিক ভাবে হয়েছে বলে শুনেছি। জেলা পরিষদের কেউ কেন আসেননি, সেটা তাঁরাই ভাল বলতে পারবেন।’’

এ দিন দুপুরে অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ফিতে কেটে ওই কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ছ’কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে জেলা পরিষদ চত্ত্বরে তৈরি হয়েছে পঞ্চায়েত প্রশিক্ষণ ও সম্পদ কেন্দ্র। এখানে ৮০ জন পঞ্চায়েত সদস্য কেবল থেকে প্রশিক্ষণ নয়, পাবেন পঞ্চায়েত সংক্রান্ত বই পড়ার সুযোগ। থাকবে ইন্টারনেটে তথ্য আদান প্রদানের সুবিধাও। এখানে থেকে নেওয়া যাবে কম্পিউটার প্রশিক্ষণও। জেলাশাসক ওয়াই রন্তাকর রাও বলেন, ‘‘অত্যন্ত আধুনিক এই প্রশিক্ষণ ও সম্পদ কেন্দ্রে পঞ্চায়েত সদস্যেরা একটি ঘরে একজন করে থাকার সুবিধা ছাড়াও নানা সুবিধা পাবেন। কেন্দ্রটি জেলার পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনবে বলে আশা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE