বিহারে রাহুল গান্ধী, তেজস্বী যাদবদের ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’র একটি সভা-মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর প্রয়াত মা’কে জড়িয়ে অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগকে সামনে রেখে বাংলায় প্রদেশ কংগ্রেসের দফতর বিধান ভবনে তাণ্ডব চালানো হয়েছিল। এর প্রতিবাদে রবিবার ফের রাজ্য জুড়ে পথে নামল কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বে মধ্য কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। পাশাপাশি, যুব কংগ্রেসের ডাকে শহরের অন্য প্রান্ত, খিদিরপুরের সভা থেকে একই বিষয়ে সরব হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরী। দফতরে তাণ্ডবের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরেও মূল অভিযুক্ত বিজেপি নেতা রাকেশ সিংহ এখনও কেন অধরা, সেই প্রশ্নে সরব হয়েছে কংগ্রেস। পক্ষান্তরে, কারও দফতরে হামলাকে দল অনুমোদন করে না জানিয়েও, কেন এই প্রতিবাদ, তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে বিজেপি।
প্রদেশ সভাপতির নেতৃত্বে এ দিন বিধান ভবন থেকে কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিল থেকে কয়েক জন কংগ্রেস কর্মী মুরলীধর সেন লেনে বিজেপির রাজ্য দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গেলে উত্তেজনা তৈরি হয়। সেখানে পুলিশের ব্যারিকেড ছিল। পরিস্থিতির সামল দেন শুভঙ্করেরা। তাঁর বক্তব্য, “এই (হামলার) সংস্কৃতি বাংলার নয়। রাহুল কোনও জায়গায় অত্যাচার করে সত্যকে লুকিয়ে রাখতে চান না। বিজেপির আমদানি করা সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি না। রাকেশ কি বিরোধী দলনেতার বাড়িতে রয়েছেন?” ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের ডাকা পটনার সমাবেশকে সফল করার আহ্বান জানিয়ে এবং বিধান ভবনে হামলার প্রতিবাদে দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ প্রসাদের নেতৃত্বে হাজরা মোড়েও বিক্ষোভ হয়েছে। এ দিকে, কেন্দ্রের ওয়াকফ সংশোধনী বিল, বিধান ভবনে তাণ্ডবের ঘটনার প্রতিবাদে যুব কংগ্রেসের ডাকে খিদিরপুরের প্রতিবাদসভায় যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা অধীর। আঁতাঁতের অভিযোগ তুলে তাঁর বক্তব্য, “বিধান ভবন থেকে থানার দূরত্ব ১০০ মিটার। কিন্তু পুলিশ হামলা আটকাতে পারেনি। হামলাটা যদি তৃণমূলের কার্যালয়ে হত, তখনও পুলিশ এটা করত? তৃণমূল সরকারের কাছে জানতে চাই, কোন সমঝোতার কারণে হামলার এতক্ষণ পরেও মূল অভিযুক্ত বিজেপি নেতা অধরা?”
যদিও এই আবহে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “হামলা বরদাস্ত করি না। পুলিশ প্রত্যেককে ধরবে। সবারই কুকথা বলা উচিত নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে ভাষায় বিজেপি আক্রমণ করে, তখন বিষয়টা মনে থাকে না?” বিজেপি অবশ্য মোদীর অবমাননার অভিযোগে এ দিনও ডোরিনা ক্রসিংয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। আর দলের রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য রঘুনাথগঞ্জে বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রীকে যে ভাষায় কংগ্রেস আক্রমণ করছে, তার প্রতিবাদ হওয়া দরকার। কর্মীরা আবেগতাড়িত। প্রতিবাদ যেটা হয়েছে, ঠিক হয়েছে। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকায় আগুন দেওয়া দল সমর্থন করে না।” বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও বলেছেন, “ওটা যে দলের কর্মসূচি ছিল না, সেটা রাজ্য সভাপতি বলেছেন। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রীকে কংগ্রেস অপমান করায় অনেক মানুষ আবেগতাড়িত। রাজ্য সভাপতির বক্তব্য ও আবেগকে সমর্থন করি।”
প্রসঙ্গত, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির রাজনৈতিক সচিব সৌরভ ঘোষের দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিজয় প্রসাদ ধনুক, সন্তোষকুমার রাজভার এবং দিব্যেন্দু সামন্ত নামে তিন জন বিজেপি কর্মীকে এন্টালি থানা গ্রেফতার করেছে। মোট অভিযুক্ত ৩০ জন। ধৃতদের এ দিন শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সূত্রের খবর, মূল অভিযুক্ত রাকেশের আলিপুরের অরফানগঞ্জ রোডে বাড়িতে শুক্রবার রাতে পুলিশ গেলেও, সেখানে তাঁকে পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে রাকেশ এক ভিডিয়ো-বার্তায় ধৃতদের পাশে থাকার কথা বলে পুলিশকে ভয় পান না বলে জানিয়েছেন। তাঁর আরও অভিযোগ, বাড়িতে অস্ত্র রেখে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হলেও সেটা সফল হয়নি।
দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের প্রতিবাদ। হাজরা মোড়ে।
এ দিকে, কংগ্রেস ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) নামে যে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে, সেই একই প্রেক্ষিতে এ দিন আবার সরব হয়েছে সিপিএম-ও। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ধূপগুড়িতে বলেছেন, “তৃণমূল-বিজেপি মিলে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যের ভোটে কারচুপি হয়েছে। বিহারের ভোটে কারচুপি করতে দেওয়া যাবে না। কারচুপি ভোটার তালিকা থেকেই শুরু হয়।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)