E-Paper

মতুয়া-জলে মেপে পা ফেলতে চায় কংগ্রেস

মতুয়া ভোটও মেরুকরণ হয়ে রয়েছে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে। রাতারাতি সেখানে অন্য স্রোত এনে ফেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবু বিজেপি ও তৃণমূলের প্রবল টানাপড়েনের মধ্যেই মতুয়া মহলে তৃতীয় পরিসর তৈরির চেষ্টায় সতর্ক হয়ে পা ফেলতে চাইছে কংগ্রেস।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:৪৩
এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপালের কাছে নাগরিকত্ব আন্দোলনের প্রতিনিধি সুকৃতী রঞ্জন বিশ্বাস। আছেন এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীর ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারও।

এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপালের কাছে নাগরিকত্ব আন্দোলনের প্রতিনিধি সুকৃতী রঞ্জন বিশ্বাস। আছেন এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীর ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারও। —নিজস্ব চিত্র।

ঠাকুরনগরে একই বাড়ি থেকে একই নামে দু’টো মতুয়া মহাসঙ্ঘ চলছে! মতুয়া ভোটও মেরুকরণ হয়ে রয়েছে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে। রাতারাতি সেখানে অন্য স্রোত এনে ফেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবু বিজেপি ও তৃণমূলের প্রবল টানাপড়েনের মধ্যেই মতুয়া মহলে তৃতীয় পরিসর তৈরির চেষ্টায় সতর্ক হয়ে পা ফেলতে চাইছে কংগ্রেস।

তাঁদের নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের ভোট-কেন্দ্রিক সংঘাতে মতুয়া সম্প্রদায়ের একাংশ যে ‘স্বস্তি’ খুঁজছেন, সেই বার্তা পৌঁছেছে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। ওই অংশের বক্তব্য, রাজনৈতিক টানাপড়েন এক দিকে চলছে, অন্য দিকে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তাঁদের মূল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর কাছেও এই সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। তারই রেশ ধরে এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপাল কলকাতায় এসে মতুয়া-প্রশ্নে মতামত শুনেছেন। সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে বিশদে খোঁজখবর করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক ও বাংলার পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীরের মারফত দলকে পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন তিনি। এমতাবস্থায় একটি কমিটি তৈরি করে নাগরিকত্ব ও মতুয়াদের প্রশ্নে এগোতে চাইছে প্রদেশ কংগ্রেস।

সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি) এবং প্রদেশ কংগ্রেসের নবগঠিত রাজনীতি বিষয়ক কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছিলেন বেণুগোপাল। তিনি শহর ছাড়ার আগে শুক্রবার আলিপুরের একটি অভিজাত হোটেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন নাগরিকত্ব ও সংবিধান রক্ষার আন্দোলনের অন্যতম মুখ সুকৃতী রঞ্জন বিশ্বাস। ছিলেন এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক মীর এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারও। সুকৃতীর বক্তব্য, গত মাসে রাহুলের সঙ্গে দেখা করে তিনি যা কথা বলেছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় বেণুগোপালের সঙ্গে নাগরিকত্বের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সূত্রের খবর, বেণুগোপালের পরামর্শ পেয়ে পরে মীর মতুয়া এবং নাগরিকত্বের সমস্যা নিয়ে প্রসেনজিৎ বসুর মতও শুনেছেন। প্রসেনজিৎ দীর্ঘ দিন ধরে ‘নাগরিকপঞ্জি-বিরোধী যুক্ত মঞ্চে’র হয়ে আন্দোলন করছেন, সুকৃতীদের সঙ্গে কাজ করেছেন। দু’দিন পরে কংগ্রেসে তাঁর যোগ দেওয়ার কথা। মতুয়াদের একাংশের পাসপোর্ট নবীকরণেও যে সমস্যা হচ্ছে, সে সব কথাও জানানো হয়েছে এআইসিসি নেতৃত্বকে। পরে মীর বলেছেন, ‘‘বিষয়টি যথেষ্ট জটিল। আমরা বিভিন্ন অংশের মতামত শুনে, তথ্য নিয়ে তার পরে পদক্ষেপ করব।’’

মতুয়া ঠাকুরবাড়িকে আড়াআড়ি বিভাজন করে যে রাজনৈতিক মেরুকরণ চলছে, তার প্রতিবাদে কাল, রবিবার ঠাকুরনগরে দু’দশকের মধ্যে প্রথম বার কংগ্রেসের ডাকে ‘সত্যাগ্রহ’ কর্মসূচি হতে চলছে। সেখানে যাওয়ার কথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর-সহ দলের অন্য নেতাদের। দলূয় সূত্রের খবর, কর্মসূচির উদ্যোক্তা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা (গ্রামীণ) কংগ্রেসের সভাপতি ইন্দ্রাণী দত্ত চট্টোপাধ্যায় এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক মীরকে চিঠি দিয়ে আর্জি জানিয়েছেন, মতুয়াদের বিষয়ে এখনই যেন রাহুলকে সরাসরি জড়িয়ে দেওয়া না হয়। কারণ, আগে জল মেপে নেওয়া জরুরি। বিহারে রাহুলের ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’র ফাঁকে যে মতুয়া প্রতিনিধিরা দেখা করেছিলেন, তাঁদের একাংশও ফিরে সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলেছেন। একই মত প্রদেশ নেতৃত্বেরও। শুভঙ্করের কথায়, ‘‘নমঃশূদ্র-সহ তফসিলি জাতি, জনজাতি, ওবিসিদের পাশে থাকতে কংগ্রেস তৎপর। কিন্তু কোনও হঠকারী পদক্ষেপ চাই না। মতুয়া ও নাগরিকত্বের বিষয়ে যাঁরা অবহিত, তাঁদের সহায়তা নিয়ে এগোব।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Congress BJP Matua Community Thakurnagar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy