জাতীয় শিক্ষানীতি প্রবর্তন করে দেশে শিক্ষাকে গৈরিকীকরণের পথে নিয়ে যেতে চাইছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। পাঠ্যসূচির ইতিহাসে কাটাকুটি তারই অঙ্গ। এই ভাবেই বিজেপির শিক্ষানীতিকে আক্রমণ করল কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, পাঠ্যবই থেকে মোগল আমলের ইতিহাস বাদ দিয়ে যে রাস্তায় বিজেপি সরকার এগোচ্ছে, তা আদতে সংবিধানের নীতিকেই লঙ্ঘন করছে। বিজেপির অবশ্য পাল্টা দাবি, ভারতের ‘প্রকৃত ইতিহাস’ই তারা এখনকার প্রজন্মকে শেখাতে চাইছে।
কলকাতা প্রেস ক্লাবে মঙ্গলবার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রফেসর্স, টিচার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনে’র (ডব্লিউবিপিটিইএ) তরফে কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ইতিহাসের পাঠ্যসূচিতে এই রদবদল এনসিইআরটি-কে সামনে রেখে করা হলেও এর পিছনে মোদী সরকার এবং বিজেপির ভাবনাই দায়ী। যে জাতীয় শিক্ষানীতির বিরোধিতা আমরা করছিলাম, তারই আসল চেহারা এই পদক্ষেপে ধরা পড়ে গিয়েছে। শক-হূনদল-মোগল-পাঠানের কথা আমরা সবাই পড়েছি। কিন্তু এই সরকার মনে করছে, মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাস পড়ানো যাবে না। অথচ আমরা তো কখনও বলিনি যে, সম্রাট অশোক বা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যদের ইতিহাস পড়া যাবে না।’’ প্রদীপবাবুদের মতে, ইতিহাস তার নিজের গতিতেই এগোবে। তবে কেন্দ্র যে ভাবে জাতীয় শিক্ষানীতির নামে গৈরিকীকরণের দিকে যাচ্ছে এবং রাজ্যে শিক্ষায় অনাচার চলছে, তার প্রতিবাদে মে মাসে কলকাতায় কনভেনশনের আয়োজন করবে কংগ্রেসের অধ্যাপক ও শিক্ষক সংগঠন। ইতিহাসের বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছে প্রতিবাদ জানানোর কথাও বলেছেন প্রদীপবাবু।
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের অবশ্য পাল্টা দাবি, অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ ভাবে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা সারা দেশের নয়, সারা পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দিতে চাই। সেই কাজ ১০ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। ইতিহাস মানে যুগ যুগ ধরে মানুষের সঙ্গে মানুষের ব্যবহারের পরম্পরা। তার বদলে মোগল শাসকের রাজ্য জয়ের বীরগাথা, হারেম তোষণ আর যৌন লালসাকে ইতিহাস বলে চালানো ভুল! শূন্য আমরা আবিষ্কার করেছি। দশমিকের ব্যবহার আমরা করেছি। ভাষায় ব্যাকরণের ব্যবহার আমরা শুরু করেছি। এই ইতিহাস আমরা মানুষকে জানাতে চাই।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)