E-Paper

কমিশনের বিরুদ্ধে রাস্তায় কংগ্রেস, কটাক্ষ বিজেপির

বিজেপি নেতাদের কটাক্ষ, ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) হলে ‘ব্যথা’ হবে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের। তার জন্য কংগ্রেস আগাম কাতর হচ্ছে কেন!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৫ ০৭:২৫
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরের কাছে যুব কংগ্রেসের বিক্ষোভ।

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরের কাছে যুব কংগ্রেসের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

বাংলায় ভোটার তালিকা থেকে অন্যায় ভাবে কারও নাম বাদ গেলে এক লক্ষ লোক নিয়ে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কার্যক্ষেত্রে তৃণমূল সে সব কিছুই করার আগে কমিশনের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধে নেমে পড়ল কংগ্রেস! আবার কংগ্রেসের কমিশন তথা কেন্দ্র-বিরোধী অভিযানে ব্যাপক ধরপাকড় চালাল তৃণমূলেরই সরকারের পুলিশ! গোটা ঘটনাপ্রবাহে বিজেপি নেতাদের কটাক্ষ, ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) হলে ‘ব্যথা’ হবে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের। তার জন্য কংগ্রেস আগাম কাতর হচ্ছে কেন!

দিল্লিতে নির্বাচন কমিশন অভিযানের পথে বিরোধী শিবিরের সাংসদদের বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেস। মিছিল করে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা রাজভবনের কাছে পৌঁছতেই শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশ লাঠি চালিয়েছে বলেও কংগ্রেস কর্মীদের অভিযোগ। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, মহম্মদ মোক্তার-সহ দলের একাধিক নেতা-কর্মীকে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্করের বক্তব্য, ‘‘রাহুল গান্ধীর অভিযোগের জবাব জবাব দিতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। আমরা বলছি, ‘ওয়ান ম্যান, ওয়ান ভোট’— এটাই সর্বত্র হতে হবে। আমাদের রাজ্যে ভোট-সন্ত্রাসের প্রতিবাদও করছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কেন্দ্রের প্রতিনিধি রাজ্যপালের দফতরে বলতে এসেছিলাম, অসাংবিধানিক কোনও কিছু আমরা মানব না। পুলিশের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই ছিল না। তবু বাধা দেওয়া হল!’’

একই দিনে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এসআইআর-এর প্রতিবাদে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতর ঘেরাও করতে গিয়েছিল সৌরভ প্রসাদের নেতৃত্বে যুব কংগ্রেসের একাংশ। বিবাদি বাগ এলাকায় সেই বিক্ষোভেও ধুন্ধুমার বাধে। যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের টেনে-হিঁচড়ে ভ্যানে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। ‘ভোট চুরি’র দায়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও নির্বাচন কমিশনারকে রাহুল কোমরে দড়ি পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, এমন দৃশ্য তৈরি করতে কয়েক জনকে সাজিয়ে আনা হয়েছিল যুব কংগ্রেসের বিক্ষোভে। লোকসভার বিরোধী দলনেতা কী ভাবে প্রধানমন্ত্রী বা নির্বাচন কমিশনারকে দড়ি পরাবেন, এমন প্রতীকী দৃশ্যের কী অর্থ, সে সব প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলেই!

এমতাবস্থায় বিজেপি নেতারা বলতে শুরু করেছেন, দিল্লিতে রাহুলের সঙ্গে তৃণমূলের ‘নৈকট্যে’র জেরে এই রাজ্যেও শাসক তৃণমূল ও অন্যতম বিরোধী কংগ্রেসের সুর মিলতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের দাবি, ‘‘সিপিএম, তৃণমূল, কংগ্রেস সব তো এক! বাইরে থেকে দেখতে আলাদা লাগে। রাজ্যে কংগ্রেস বিপন্ন। তাই তৃণমূলের ছত্রছায়ায় এসে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।’’

পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরে ‘কন্যা সুরক্ষা যাত্রা’য় গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ দিন ফের দাবি করেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর ভাইপো ভোটার তালিকার সংশোধন আটকাতে চান। কারণ, সংশোধন হলে তৃণমূলকে খুঁজে পাওয়া যাবে না!’’ভোটার তালিকা থেকে বাংলাদেশি মুসলমান ও রোহিঙ্গাদের নাম বাদ দিতে চাইলে দেশের স্বার্থে সবাইকে বিজেপির হাত শক্ত করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার পাল্টা দাবি, ‘‘এসআইআর বা এফআইআর হোক, এখানে মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতে কিছুতেই কিছু হবে না! এখন বিজেপির নির্দেশে নির্বাচন কমিশন চলছে, এটা আগে কখনও হয়নি। বিহারে কী হয়েছে, তা সবাই দেখছে। রাজ্যের ৮০ হাজার বুথও জেগে আছে। মুখ্যমন্ত্রীর সৈনিক হিসাবে আমরা পথে নেমে পড়েছি।’’

আর ভোটার তালিকায় ভুল থাকলে প্রধানমন্ত্রী-সহ সাংসদদের পদত্যাগের যে দাবি অভিযেক তুলেছেন, তার প্রেক্ষিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘তালিকার ভূত তাড়ানো এবং এসআইআর-কে গুলিয়ে দিচ্ছেন ওঁরা। যিনি বলছেন, তিনি ৮ লাখি ভোটে জিতেছিলেন। আগে তিনিই পদত্যাগ করুন!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Congress Election Commission Special Intensive Revision

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy