Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

যৌথ প্রকল্পের ছাত্রী নিবাস ন’বছরে ৪টি!

শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের স্কুলে অসংখ্য ছাত্রীর পড়াশোনা হস্টেলের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তাদের কী হবে?

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সুপ্রিয় তরফদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৪:৪৪
Share: Save:

অনশন করে হস্টেল আদায় করেছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়ারা। কিন্তু শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের স্কুলে অসংখ্য ছাত্রীর পড়াশোনা হস্টেলের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তাদের কী হবে?

ওই সব অঞ্চলের স্কুলে ছাত্রী নিবাস গড়তে উদ্যোগী হয়েছিল কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারই। কিন্তু প্রকল্প হাতে নেওয়ার ন’বছর পরেও সেই কাজ অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে অর্থাভাবের কথা। বলা হচ্ছে প্রকল্প-ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কথা। অনুমোদিত ৬২টি হস্টেলের মধ্যে তৈরি হয়েছে মাত্র চারটি। তবে শীঘ্রই বেশ কিছু গার্লস হস্টেলের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতরের দাবি।

কয়েক সপ্তাহ আগে স্কুলশিক্ষা দফতরের তরফে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান (আরএমএসএ) ২০১৬-’১৭ সালের বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এ রাজ্যে এডুকেশনাল ব্যাকওয়ার্ড ব্লক (ইবিবি) বা শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া এলাকা হিসেবে ৮৭টি অঞ্চলকে চিহ্নিত করা হয়। ২০০৯-’১০ আর্থিক বছরে নবম-দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের জন্য হস্টেল তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয় ১০টি জেলার ৬২টি অঞ্চলে। ১০০ জন থাকতে পারে, এমন ৬২টি হস্টেল তৈরির জন্য আরএমএসএ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্পের ৬৫% টাকা কেন্দ্রের দেওয়ার কথা। বাকিটা রাজ্যের দায়িত্ব।

ইবিবি এলাকায় যে-সব ছাত্রীর পড়াশোনার অনুকূল পরিবেশ নেই, মূলত তাদেরই হস্টেলে রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী হস্টেলে থাকতে হবে: ১) প্রতিটি ঘরে চার জনের থাকার মতো পর্যাপ্ত পরিসর। ২) পরিচ্ছন্ন চানঘর ও শৌচালয়। ৩) রান্নাঘর। ৪) আলাদা খাবার ঘর। ৫) ওয়ার্ডেন অফিস। ৬) নিরাপত্তারক্ষীর ঘর। ৭) মেডিক্যাল পরীক্ষার পৃথক ঘর। ৮) বিনোদনের ঘর।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, কেন্দ্রের বরাদ্দ রাজ্যের হাতে আসে ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষে। ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯ সালে ওই সব হস্টেল তৈরি করতে যে-পরিমাণ অর্থ খরচ হবে বলে ধরা হয়েছিল, চার বছর পরে তা বেড়ে যায়। ফলে বরাদ্দ অর্থে হস্টেল তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তখন রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত তহবিল থেকে টাকা দেওয়া হয়। ফের শুরু হয় কাজ। কিন্তু তার পরেও কেটে গিয়েছে তিনটি আর্থিক বছর। হস্টেলের অধিকাংশ কাজই হয়নি।

‘‘দ্রুত কাজ চলছে। শেষও হয়ে যাবে। আর্থিক কারণে কাজ করতে সমস্যা হয়েছে,’’ বলেন বিকাশ ভবনের এক কর্তা। দু’টি শর্তের ভিত্তিতে ইবিবি বেছে নেওয়া হয়। প্রধানত যেখানে মহিলাদের সাক্ষরতার হার ৫৬.১৩ শতাংশের কম এবং পুরুষ ও মহিলাদের গড় সাক্ষরতার হার ২১.৫৯ শতাংশের কম হবে, সেই সব এলাকাকেই আনা হবে ইবিবি-র আওতায়। ইবিবি-র অধিকাংশই গ্রামাঞ্চলে। পুরুলিয়ায় ১৮টি হস্টেল গড়ার কথা থাকলেও তৈরি হয়েছে মাত্র একটি! মালদহে ১১টি ছাত্রী নিবাস অনুমোদন পেলেও কোনও হস্টেল তৈরির কাজ শেষ হয়নি। বাঁকুড়ায় ১১টির মধ্যে দু’টি ছাত্রী নিবাস তৈরি হয়েছে। বীরভূম, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ, শিলিগুড়ি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তর দিনাজপুরে একটিও হস্টেল হয়নি।

‘‘কেন্দ্র তো সাহায্য করছেই না। রাজ্য সরকারেরও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। নইলে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কেউই এ ভাবে অবহেলা করত না,‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌’’ বলছেন শিক্ষক-নেতা স্বপন মণ্ডল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE