সাড়ে চার বছর আগে রাজ্যের বিধানসভা ভোটের সময়ে খুন হয়েছিলেন তিনি। আবার একটি বিধানসভা ভোটের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রাজ্য। মাঝে কলকাতার পুরভোট এবং একটি লোকসভার ভোটও কেটে গিয়েছে। তবু এখনও ভোটার হয়েই থেকে গিয়েছেন নিহত সেই যুবক!
নারকেলডাঙা থানার শীতলাতলা লেনের বাসিন্দা, বিজেপি কর্মী সেই যুবক অভিজিৎ খুন হয়েছিলেন ২০২১ সালের ২ মে। ২০২৫ সালের সংশোধিত ভোটার তালিকাতেও রয়ে গিয়েছে তাঁর নাম। বেলেঘাটা বিধানসভার পার্ট নম্বর ৮৮-র এই ভোটার তালিকায় ৪০ নম্বরে রয়েছে অভিজিতের নাম। ৩৯ নম্বরে রয়েছে অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার এবং ৪১ নম্বরে রয়েছে তাঁদের মা মাধবী সরকারের নাম। বিজেপি কর্মী বিশ্বজিতের দাবি, ‘‘অভিজিৎ খুনে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ ভাইয়ের ভোটার, আধার, প্যান কার্ড ইত্যাদি নথি নিয়ে গিয়েছিল। আমরা অভিজিতের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে বলায় পুলিশ জানিয়েছিল, ঠিক জায়গায় বিষয়টি জানানো হয়েছে। নাম বাদহয়ে যাবে।’’
২০২১-এর রাজ্য বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার দিন গলায় তার পেঁচিয়ে খুন করা হয় অভিজিৎকে। অভিযোগের আঙুল ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। হাই কোর্টের নির্দেশে নারকেলডাঙা থানার এই মামলায় তদন্তভার যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে। মামলায় একাধিক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেলেঘাটার বিধায়ক পরেশ পাল, দুই পুরপ্রতিনিধি স্বপন সমাদ্দার ও পাপিয়া ঘোষ এবং নারকেলডাঙা থানার প্রাক্তন ওসি শুভজিৎ সেন, তদন্তকারী অফিসার রত্না সরকার, ওই থানার হোমগার্ড দীপঙ্কর দেবনাথ-সহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। এই মামলার বিচার চলছে কলকাতা নগর দায়রা আদালতে।
প্রসঙ্গত, আর জি কর হাসপাতালের নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার নামও ভোটার তালিকায় রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, অভিজিৎ বা আর জি করের নির্যাতিতার খুন সংক্রান্ত মামলা এখনও চলছে। চর্চায়-আলোচনায়-প্রতিবাদে রয়েছে বিষয়গুলি। তার পরেও এই দু’টি নাম ভোটার তালিকা থেকে কেন বাদ দেওয়া হয়নি? তা হলে স্বাভাবিক ভাবে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের নামই বা ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া কতটা সম্ভব হবে? নিহত অভিজিতের দাদা, বিজেপি কর্মী বিশ্বজিৎ বলছেন, ‘‘এই কারণেই এসআইআর জরুরি।’’
পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর)-এর কাজ শুরু করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এই নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা। অভিযোগ উঠেছে এসআইআর-এর জেরে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে আতঙ্কে আত্মঘাতী হয়েছেন পানিহাটির প্রৌঢ় প্রদীপ কর। এসআইআর-আতঙ্কে দিনহাটাতে খাইরুল শেখ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এবং বীরভূমের ইলামবাজারে ক্ষিতীশ মজুমদার আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ। এই সব নিয়ে এই মুহূর্তে তপ্ত বঙ্গের রাজনীতি।
ভাইয়ের নাম ভোটার তালিকায় রয়ে যাওয়ার দায় তৃণমূলের উপরেই চাপিয়েছেন বিশ্বজিৎ। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সব তৃণমূলের কারসাজি। এ ভাবে মৃতদের ভোটেই জিতে আসছেন শাসক দলের প্রার্থীরা। তাই এসআইআর-এর বিরোধিতা করছে তৃণমূল।’’ তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘অভিজিৎ তো পরিচিত বিজেপি সমর্থক ছিলেন। তৃণমূল কেন তাঁর নাম রেখে দেবে? নাম বাদ দেওয়ার আবেদন তো করার কথা বিজেপির আর তাঁর পরিবারের!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)