Advertisement
E-Paper

ছন্দ নেই, বরং দ্বন্দ্বে ভরা! অ্যাকাডেমির সিদ্ধান্তে তোলপাড় সাহিত্য মহল, সাফাই-পোস্ট সুবোধের

অনেকেই বিষয়টির মধ্যে ‘রাজনৈতিক অভিসন্ধি’ দেখতে পাচ্ছেন। যা বিতর্ককে অন্যমাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। যদিও তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁরাও মনে করছেন না, এর মধ্যে রাজনীতি আছে।

Subosh Sarkar

কবি সুবোধ সরকার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:২৯
Share
Save

কবিতা উৎসব কমিটির একটি সিদ্ধান্ত ঘিরে তোলপাড় বাংলার সাহিত্য মহল। একের পর এক কবি, সাহিত্যিক, আবৃত্তিকার তাঁদের সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে কমিটির সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন এটা ‘সিদ্ধান্ত’ নয়, ‘ফতোয়া’। গত ২৪ ঘণ্টায় পরিস্থিতি এমন জায়গায় যায় যে, শনিবার কবিতা অ্যাকাডেমির সভাপতি তথা কবি সুবোধ সরকার নিজে ফেসবুকে একটি পোস্ট করে তার ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু তার পরেও বিতর্ক থামছে না। যা দেখে অনেকে বলছেন, উৎসব শুরু হওয়ার আগে কবিতা ‘ছুটি’ নিয়েছে। ছন্দ নেই, বরং দ্বন্দ্বেই ভরা উৎসব।

বিতর্ক কী নিয়ে?

কবিতা অ্যাকাডেমি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আবৃত্তিকার দম্পতিদের কোনও এক জন (স্বামী বা স্ত্রী) একক পারফরম্যান্স করতে পারবেন। দু’জনকে পারফর্ম করতে দেওয়া হবে না। গত বৃহস্পতিবার কবিতা অ্যাকাডেমির এক আধিকারিক ফোন করেন আবৃত্তিকার সুমন্ত্র সেনগুপ্তকে। সুমন্ত্র এবং তাঁর স্ত্রী রঞ্জনা দু’জনেই আবৃত্তিকার। সুমন্ত্রের দাবি, তাঁকে সেই আধিকারিক কমিটির ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান। সুমন্ত্র বলেন, ‘‘ওই আধিকারিক আমাকে বলামাত্রই আমি বলি, রঞ্জনা পারফর্ম করবে। তিনি তখন বলেন, হ্যাঁ, আপনি তো অনেক জায়গায় করেন। এ বার বৌদি করুন।’’ এখানেই শেষ নয়। শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে সুমন্ত্র বলেন, ‘‘ওই আধিকারিককে আমি প্রশ্ন করি, এটা কি কখনও শিল্পের ক্ষেত্রে মানদণ্ড হতে পারে? কেন স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দেখা হবে? তিনি আমায় বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না। পুরোটাই কমিটির সিদ্ধান্ত। তিনি কেবল বার্তা বহন করছেন।’’

এর পরেই বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষো শুরু হয়। সাহিত্য মহলেও বিতর্ক ক্রমশ জোরালো হতে শুরু করে। একের পর এক ফেসবুক পোস্টে কবিতা অ্যাকাডেমির বাছাইয়ের ‘মানদণ্ড’ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন সাহিত্য জগতের একাংশ। তাঁদের মধ্যে অন্যতম কবি তথা অধ্যাপক অংশুমান কর। শনিবার তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘কবিতা উৎসব কমিটি যে মানদণ্ড তৈরি করেছে তা হাস্যকর। এই মানদণ্ড অন্যান্য ক্ষেত্রে কার্যকরী হলে মাদাম কুরি, পিয়েরে কুরি বা অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় আর এস্থার ডুফলো একসঙ্গে কাজ করতে পারতেন না। পার্থ ঘোষ-গৌরী ঘোষের মধ্যে যে কোনও এক জনকে এই উৎসব থেকে বাদ পড়তে হত। সুবোধদাও তো মল্লিকাদির (প্রয়াত কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত) সঙ্গে কত অনুষ্ঠানে কবিতা পড়েছেন। তাঁদের কি স্বামী-স্ত্রীর মানদণ্ডে দেখা হত?’’

এর মধ্যেই সুবোধ ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। তাতে তিনি লেখেন, ‘‘বিগত কয়েক বছর ধরে আবৃত্তি সমাজ থেকে আপত্তি উঠছিল যে, একই পরিবার থেকে একাধিক সদস্য কেন কবিতা উৎসবে অংশ নেবেন? স্বামী, স্ত্রী, ভাই বা বোন বা পুত্র-কন্যা সবাই কেন একসঙ্গে অংশ নেবেন? এ বার কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, স্বামী-স্ত্রীর যে কোনও এক জন অংশ নেবেন। তাঁদের সম্মেলক দল যদি মনোনীত হয়ে থাকে, সেই দলকে আলাদা ভাবে আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেই দলের পরিচালক হিসেবে তাঁর নাম থাকবে।’’ সুবোধ আরও লেখেন, ‘‘কমিটির পক্ষ থেকে তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাঁরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কে এ বছর একক আবৃত্তি করবেন আর কে দল পরিচালনা করবেন। এই সিদ্ধান্ত কমিটি নেয়নি, নিয়েছেন সেই পরিবারের প্রধান।’’ উল্লেখ্য, আগামী ৪-৬ জানুয়ারি হবে কবিতা উৎসব।

এই পোস্টের ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে সুবোধের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি লিখিত ভাবে জানান, ‘‘কবিতা উৎসবে কেউ বাদ যাননি। যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই আছেন। তা ছাড়াও আরও নতুন মুখ আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তালিকা ছাপা হলেই দেখতে পাবেন।’’

এর মধ্যে আবার রাজনৈতিক রঙের কথাও উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ। প্রসঙ্গত, আবৃত্তিকার সুমন্ত্র ঘোষিত ভাবেই তৃণমূল এবং বিজেপি-বিরোধী। দু’বছর আগে কবিতা উৎসবের মঞ্চেই একটি ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। তার পরে কবিতা পাঠ না করে বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দু’টি লাইন— ‘কবিতা তুমি কেমন আছ? ভালবাসার মানুষ যেমন থাকে, অপমানে’ উচ্চারণ করে নেমে গিয়েছিলেন মঞ্চ থেকে। তবে সুমন্ত্র স্পষ্ট বলেছেন, তিনি এখনও মনে করেন না যে, এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রাজনীতি রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘যে হেতু আমি রাজ্য ও রাষ্ট্রের শাসকদের বিরুদ্ধে, তাই অনেকেই দুইয়ে-দুইয়ে চার করছেন। অনেকেই আমায় সিপিএম বলে দেগে দিচ্ছেন! কিন্তু আমি কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নই। এই দুইয়ে-দুইয়ে চার করারও পক্ষপাতী নই।’’ তবে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘যদি এই মানদণ্ডে ৫০ জন বাদ পড়তেন এবং তাঁদের জায়গায় ৫০ জন নতুন মুখ আসতেন, তা হলে এই মানদণ্ডকে স্বাগত জানাতাম। কিন্তু দম্পতি বলতে এই জগতে রয়েছি কেবল আমি-রঞ্জনা আর অরুময় বন্দ্যোপাধ্যায়-স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ সুমন্ত্র আরও জানিয়েছেন, ফেসবুকে অনেকের লেখালিখি দেখে কবিতা অ্যাকাডেমির সেই আধিকারিক তাঁকে ফের ফোন করে জানান, গোটা বিষয়টি নিয়ে সুবোধ বিরক্ত। সুমন্ত্র বলেন, ‘‘আমি সুবোধদাকেও ফোন করেছিলাম। তাঁকেও আমি আমার কথা বলেছি।’’

তবে শিল্পের উৎকর্ষের বদলে দাম্পত্যকে ‘মানদণ্ড’ করা নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার রেশ আসন্ন কবিতা উৎসবে কোন আঙ্গিকে ধেয়ে আসে, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে সাহিত্য মহলের শাসক-ঘনিষ্ঠ অংশে। তবে অনেকেই মনে করছেন, কবিতা অ্যাকাডেমির সভাপতি সুবোধ বিষয়টি সামলে নিতে পারবেন। দ্বন্দ্ব মিটে ছন্দ ফিরে আসবে উৎসবে।

Subodh Sarkar Controversy

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।