Advertisement
E-Paper

বয়স-বিতর্ক ছাত্রভোটেও, আঁধারে মন্ত্রী

রাষ্ট্রপতি-পদে কিংবা লোকসভা-বিধানসভার ভোটে দাঁড়ানোর জন্য ন্যূনতম বয়ঃসীমা আছে। কিন্তু ঊর্ধ্বসীমা নেই। জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য বয়সের ঊর্ধ্বসীমা থাকবে না কেন, সেই বিতর্ক দীর্ঘ কালের। সাধারণ নির্বাচনে যা-ই হোক, ছাত্রভোটে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে সেই সীমা থাকা উচিত কি না?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১০

রাষ্ট্রপতি-পদে কিংবা লোকসভা-বিধানসভার ভোটে দাঁড়ানোর জন্য ন্যূনতম বয়ঃসীমা আছে। কিন্তু ঊর্ধ্বসীমা নেই। জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য বয়সের ঊর্ধ্বসীমা থাকবে না কেন, সেই বিতর্ক দীর্ঘ কালের। সাধারণ নির্বাচনে যা-ই হোক, ছাত্রভোটে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে সেই সীমা থাকা উচিত কি না? এই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ৬৫ পেরোনো এক পড়ুয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নেমে পড়ায়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, পঁয়ষট্টি-উত্তীর্ণ ওই পড়ুয়াকে ছাত্রভোটে প্রার্থী করা হয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র গোষ্ঠী-কোন্দলের জেরেই। ছাত্র সংগঠনে নিজেদের মধ্যে কাজিয়া যতই থাক, কী ভাবে এটা সম্ভব হল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষা শিবিরের একটি বড় অংশ। কী করে এটা হল, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও তা জানাতে পারছেন না। মন্ত্রী মঙ্গলবার জানান, এই বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নেবেন।

শিক্ষাজগৎ এই প্রশ্ন বা বিতর্কের দু’টি দিক দেখছেন। l লোকসভা, বিধানসভা বা পুরসভার নির্বাচনে কোনও দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে গোঁজ প্রার্থী দেওয়ার রেওয়াজ আছে দেশ জুড়ে। কিন্তু কোনও ছাত্র সংগঠনে নানা গোষ্ঠীর মধ্যে আকচাআকচি থাকলেও অবসরপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তিকে ছাত্রভোটে দাঁড় করানোর নজির বিশেষ নেই। l সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী-পদের ঊর্ধ্বতম বয়ঃসীমা না-থাকাটা তো বিতর্কের বিষয় বটেই। ছাত্রভোটে অন্তত ওই সীমা থাকা উচিত কি না, সেটাই প্রশ্ন।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু এ দিন বলেন, ‘‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোটে লড়তে গেলে বয়সের কী নিয়ম আছে, জানি না। এই বিষয়ে খোঁজখবর নেব।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) স্বাগত সেন অবশ্য জানান, ওখানে ছাত্রভোটে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বয়স কোনও বাধা নয়। ছাত্রভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন, ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্সের পড়ুয়ারা প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু পরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্রে যে-নিয়ম রয়েছে, তাতে ওই পড়ুয়াদের ভোটে দাঁড়ানো আটকানো যায় না। তাই ৬৫ পেরোনো অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক, আরবি ভাষার সার্টিফিকেট কোর্সের পড়ুয়া আনোয়ার হোসেনকেও প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত করা যায়নি।

বিরত করা হবেই বা কেন, প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষা মহলের অন্য একটি অংশ। তাঁদের বক্তব্য, শিক্ষার তো বয়স নেই। অর্থাৎ ছাত্র হওয়ার বিষয়টিও বয়সনিরপেক্ষ। এবং ছাত্র হতে পারলে ছাত্রভোটেই বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যাবে না কেন? বিশেষত দেশের সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বয়স যখন কোনও বাধাই নয়।

প্রশ্ন উঠছে, আনোয়ার কি নিজের তাগিদে এই বয়সে প্রার্থী হয়েছেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের গুঞ্জন তো বলছে, টিএমসিপি-র অন্তর্দ্বন্দ্বই তাঁকে ভোটে দাঁড় করিয়েছে। শিক্ষা শিবিরের একাংশের প্রশ্ন, ছাত্র সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কাজিয়ার জেরে এত প্রবীণ ছাত্রকে প্রার্থী করা হবে কেন?

গত কয়েক মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠী-কাজিয়া চূড়ান্ত আকার নিয়েছে। গত শনিবার ক্যাম্পাসে গিয়ে তা মেটানোর চেষ্টা করেন টিএমসিপি-র সভানেত্রী জয়া দত্ত। কিন্তু তাঁর চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। সংগঠনের কাজিয়ার জেরে এত প্রবীণ ছাত্রকে প্রার্থী করার বিষয়টি অনুমোদন করছেন না জয়া। তিনি বলেন, ‘‘কোনও রকম গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বই বরদাস্ত করা হবে না। মনোনয়ন অবশ্যই প্রত্যাহার করে নিতে হবে ওই প্র্রার্থী (আনোয়ার)-কে।’’

কে এই আনোয়ার?

আনোয়ার হোসেন হাওড়ার মুন্সিডাঙা মৌলানা আবুল কালাম আজাদ মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্রের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তাঁর এক ছেলে, এক মেয়ে। দুই সন্তানই বেশ কিছু দিন আগে স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছেন। মেয়ে গৃহবধূ। ছেলে একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। আনোয়ার এ দিন জানান, চলতি মাসেই তাঁর বয়স হবে ৬৬। আরবি ভাষার প্রতি ভালবাসা থেকেই তিনি এই বিষয়ে সার্টিফিকেট কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। তাই তিনি এখনও ছাত্র। এবং কাল, বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভোটের প্রচারে যোগ দিতে চান।

কেন দাঁড়ালেন ভোটে?

‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। তাই নির্বাচনে দাঁড়ানোর অনুরোধ ঠেলতে পারিনি,’’ বলেন আনোয়ার।

Partha Chatterjee TMCP Student Election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy