Advertisement
E-Paper

সেতু উদ্বোধন নিয়ে তরজা তুঙ্গে, রেলমন্ত্রী আসার আগেই বর্ধমানে গিয়ে ফিতে কেটে দিলেন সুব্রত

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর সেটি উদ্বোধন করার কথা রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২৩:১৭
রেল ওভারব্রিজের উদ্বোধন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। —নিজস্ব চিত্র

রেল ওভারব্রিজের উদ্বোধন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। —নিজস্ব চিত্র

ঝুলন্ত রেল ওভারব্রিজ উদ্বোধন করতে ৩০ সেপ্টেম্বর বর্ধমানে আসবেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। সোমবার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল এ কথা জানিয়েছিল রেল। কিন্তু মঙ্গলবার আচমকাই বর্ধমানে হাজির হয়ে সেই সেতু উদ্বোধন করে দিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের বীরসিংহ থেকে প্রতীকী উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অতএব আরও এক পর্দা চড়ল কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাতের সুর। মঙ্গলবার রাতে একের পর এক টুইট করে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। উল্টো দিকে এই উদ্বোধনে কোনও অস্বাভাবিকতাই খুঁজে পেলেন না সুব্রত মুখোপাধ্যায়

বর্ধমান স্টেশনের কাছেই তৈরি হয়েছে চার লেনের একটি ঝুলন্ত রেল ওভারব্রিজ, যা ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বলে রেলের তরফে জানানো হয়েছে। ব্রিজের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ। তবে রেল সূত্রে খবর, নিরাপত্তা ও অন্যান্য কিছু বিষয় খতিয়ে দেখার কাজ বাকি ছিল। তাই সব খতিয়ে দেখার পর ছাড়পত্র নিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর সেটি উদ্বোধন করার কথা রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের। সেই অনুযায়ী পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ সোমবার একটি প্রেস বিবৃতিও জারি করে রেল। সেই অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াও নিজের টুইটার হ্যান্ডলের মাধ্যমে রাজ্যবাসীকে জানিয়েছিলেন যে ৩০ সেপ্টেম্বর রেলমন্ত্রী বর্ধমানে আসছেন ঝুলন্ত রেল ব্রিজের উদ্বোধন করতে। সোমবার রাতেই তিনি টুইটটি করেন এবং তাতে রেলের বিজ্ঞপ্তির ছবিও তুলে ধরেন। পরের দিনই যে মুখ্যমন্ত্রী দূরনিয়ন্ত্রিত উদ্বোধন করে দেবেন ওই সেতুর আর মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে বর্ধমানে হাজির হয়ে পঞ্চায়েত মন্ত্রী ফিতেও কেটে ফেলবেন, সে কথা সম্ভবত তখনও জানা ছিল না সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার।

বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষ উপলক্ষে তাঁর জন্মভিটে বীরসিংহে মঙ্গলবার বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল রাজ্য সরকার। সেখান থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমানের রেল ওভারব্রিজের উদ্বোধন করে দেন। আর মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে বর্ধমানে গিয়ে ফিয়ে কাটেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কিন্তু তার পর নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, কেন্দ্রের প্রকল্প কী ভাবে উদ্বোধন করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং পঞ্চায়েত মন্ত্রী ?

এই ব্রিজেরই উদ্বোধন করেছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র

আরও পডু়ন: বৈঠকে গেল না প্রশাসন-তৃণমূল, ক্ষোভ উগরেও রাজ্যপাল বললেন, ‘প্রত্যেক জেলায় যাব’

যদিও পঞ্চায়েত মন্ত্রী বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই ব্রিজের পরিকল্পনা ও অনুমোদন করেছিলেন। কিন্তু রেল নানা বাহানায় কাজের গতি শ্লথ করে দিয়েছে। না হলে অনেক আগেই কাজ শেষ হয়ে যেত। সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই ব্রিজ খুলে দেওয়া হল। এর পর রেল যা ভাল বুঝবে করবে। পীযূষ গয়ালের উদ্বোধনের প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে সুব্রতবাবু বলেন, “উনি যত বার খুশি আসতে পারেন।”

রেল অবশ্য মঙ্গলবার সুব্রত মুখোপাধ্যায়দের উঠতে দেয়নি নতুন ওভারব্রিজে। এখনও সেই ব্রিজ খোলাও হয়নি। তবে যে পরিস্থিতি মঙ্গলবার তৈরি হয়েছে, তাতে রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল আর বর্ধমানে আসছেন না। আজ পূর্ব রেল নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে, ২৭ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ শুক্রবার নতুন সেতুর উদ্বোধন হবে। উদ্বোধন করবেন রেল প্রতিমন্ত্রী সুরেশ অঙ্গদি। তার পরেই সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে এই ব্রিজ।

আরও পডু়ন: ‘রাজীবকে অবিলম্বে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা প্রয়োজন’, রায়ে লিখলেন বিচারক

কেন্দ্রের প্রকল্প রাজ্যের মন্ত্রীদের উদ্বোধনের এমন নজির অবশ্য এ রাজ্যে এই প্রথম নয়। সেই প্রসঙ্গ টেনেই রাজ্য সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। টুইটে তাঁর খোঁচা, ‘রেলমন্ত্রীর উদ্বোধন করার কথা ছিল। তার আগেই বর্ধমানে সুব্রত মুখ্যোপাধ্যায় যে অসম্পূর্ণ ঝুলন্ত রেল ব্রিজের উদ্বোধন করেছেন, সেটা হাস্যকর। বাবুল সুপ্রিয়র উদ্বোধন করার কথা থাকলেও রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক আগেভাগেই গিয়ে পানাগড় বাইপাসের উদ্বোধন করে দিয়েছিলেন। তার পর জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চের ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর আগে প্রায় একই কাজ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’

আরও পড়ুন: নিরপেক্ষ নন রাজ্যপাল, সঙ্ঘাত আরও বাড়িয়ে বললেন পার্থ

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবুল সুপ্রিয়কে নিগ্রহ এবং রাজ্যপাল নিজে গিয়ে তাঁকে ‘উদ্ধার’ করে আনা ঘিরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্র তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সঙ্ঘাত শুরু হয়েছিল। তৃণমূলের বিবৃতি, পাল্টা রাজ্যপালের বিবৃতিতে কার্যত ঠান্ডা যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল দু’পক্ষের মধ্যে। আজ মঙ্গলবারই উত্তরবঙ্গে গিয়ে রাজ্যপালের বৈঠক করা নিয়ে সেই সঙ্ঘাত চরমে উঠেছে। তার মধ্যেই রেলের ঘোষিত দিনের এক সপ্তাহ আগেই বর্ধমানের এই রেল ব্রিজের উদ্বোধনের পর সেই দ্বৈরথ আরও তীব্র হল বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।

Indian Railway Burdwan Subrata Mukherjee Piyush Goyal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy