Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্বাস্থ্যকর্তা প্রদীপের আচমকা বদলি কেন, জল্পনা

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তার (ডিএমই) পদ থেকে প্রদীপ মিত্রের বদলির ‘রহস্য’ নিয়ে চর্চা চলছে স্বাস্থ্য প্রশাসনের অন্দরমহল।

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তার (ডিএমই) পদ থেকে প্রদীপ মিত্রের বদলি।

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তার (ডিএমই) পদ থেকে প্রদীপ মিত্রের বদলি।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯ ০২:৫৬
Share: Save:

জুনে তিনি ছিলেন ‘আশ্চর্য প্রদীপ’! এক মাসও কাটল না। জুলাইয়ে সেই প্রদীপের তলাতেই কেন ‘অন্ধকার’ দেখল স্বাস্থ্য প্রশাসন?

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তার (ডিএমই) পদ থেকে প্রদীপ মিত্রের বদলির ‘রহস্য’ নিয়ে চর্চা চলছে স্বাস্থ্য প্রশাসনের অন্দরমহল। ঘটনাচক্রে, জুনেই ঘটেছে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন আর জুলাইয়ে সরকারি চিকিৎসকদের পদোন্নতি এবং বদলির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রহস্যের উত্তর না কি লুকিয়ে রয়েছে পদোন্নতি-বদলিতেই।

জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন চলাকালীন একটি ঘটনার কথা জানালেন শহরের এক বিশিষ্ট চিকিৎসক। তিনি জানান, আন্দোলন উঠবে কি না, তা নিয়ে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সভাগৃহে জুনিয়র চিকিৎসকদের বৈঠক চলাকালীন আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি দল অধ্যক্ষের ঘরে যান। সেখানে ছিলেন প্রদীপবাবু-সহ স্বাস্থ্য প্রশাসনের অনেকেই। প্রতিনিধিরা প্রদীপবাবুর উদ্দেশে বলেন, ‘‘সভাগৃহে শুধু আপনিই চলুন। আমরা আপনার কথাই শুনব।’’ পরের দিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠক এবং আন্দোলনে ইতি।

ওই চিকিৎসক জানান, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান শুনেছেন তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতা, মন্ত্রী নির্মল মাজি। ‘মুখ্যমন্ত্রী ফোনে কথা বলতে চান’, এই আর্জি নিয়ে আন্দোলনকারীদের কাছে প্রত্যাখ্যাত হন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। কিন্তু প্রদীপবাবু আন্দোলনকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন। সেই জনপ্রিয়তাই কি কাল হল? স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশ সেই চর্চা করে চলেছেন।

আরও একটি বিষয় নিয়ে আধিকারিক এবং চিকিৎসকদের একাংশে জল্পনা চলছে। তা হল, দীর্ঘদিন পরে সরকারি চিকিৎসকদের পদোন্নতি ও বদলি শুরু হয়েছে। সূত্রের দাবি, রাজ্যের দু’টি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ এবং একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসকদের পদোন্নতি ও বদলি নিয়ে তৃণমূলের এক চিকিৎসক নেতার কিছু ‘সুপারিশ’ ছিল। তাতে প্রাথমিক ভাবে আমল দেননি প্রদীপবাবু। এক মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের কোন গোষ্ঠী ওঁকে সরাতে চেয়েছে, খোঁজ নিন।’’

চিকিৎসক-কর্তাদের একাংশের দাবি, প্রদীপবাবুর অসুস্থতার পরবর্তী ঘটনাক্রমে নজর দিলেই বদলির কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন মনে আসবে। তাঁরা জানান, গত ৫ জুলাই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ছুটিতে যান প্রদীপবাবু। তিন দিন পরে তাঁর পদে বসেন দেবাশিস ভট্টাচার্য। আগামিকাল, সোমবার প্রদীপবাবুর কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। স্বাস্থ্য ভবনের একটি সূত্রের দাবি, ওই সময়ের মধ্যেই পদোন্নতি ও বদলির যাবতীয় প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে ফেলা হয়েছিল। সূত্রের এ-ও দাবি, তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ার খবর পেয়ে শুক্রবারই কাজে যোগ দেবেন বলে স্থির করেছিলেন প্রদীপবাবু। ঘটনাচক্রে বৃহস্পতিবারই রদবদলের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়।

প্রদীপবাবু কাজে যোগ দিলে তাঁর অনুপস্থিতিতে তৈরি হওয়া তালিকায় সম্মতি জানাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল বলেই কি তড়িঘড়ি তাঁকে বদলি করা হয়? প্রশ্ন তুলছেন সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ। প্রবীণ এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘দু’মাস বাদেই প্রদীপবাবুর অবসর। কী এমন ঘটল, দু’মাস অপেক্ষা করা গেল না!’’

বদলি প্রসঙ্গে প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘যখন যে দায়িত্ব পেয়েছি, সামলেছি। অবসরের দিন পর্যন্ত তেমনই সামলাব।’’ আর এই আবহে যাঁর বক্তব্য শুনতে সকলেই আগ্রহী, সেই নির্মল মাজি বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ প্রশাসনিক ব্যাপার। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিষয়ে কারও হস্তক্ষেপ করার জায়গা নেই। অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির পরে প্রদীপবাবুকে হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞরা বিশ্রাম নিতে বলেছেন। সব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে পদোন্নতি-বদলির কোনও সম্পর্কই নেই।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Controversy DME Pradip Mitra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE