Advertisement
E-Paper

ধোঁয়া এড়াতে গ্যাসে মিড-ডে মিল চালু করতে চাইছে রাজ্য

পানিপথের যুদ্ধ পড়াচ্ছেন শিক্ষক। পড়ানোর মধ্যে বেশ একটা নাটক ছিল। পড়ুয়ারা তাই মন দিয়ে শুনছিল। হঠাৎই কাশির দমকে পানিপথের যুদ্ধে বিরতি। জানলা দিয়ে গলগলিয়ে ঢুকছে কালো ধোঁয়া।

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৭

পানিপথের যুদ্ধ পড়াচ্ছেন শিক্ষক। পড়ানোর মধ্যে বেশ একটা নাটক ছিল। পড়ুয়ারা তাই মন দিয়ে শুনছিল। হঠাৎই কাশির দমকে পানিপথের যুদ্ধে বিরতি। জানলা দিয়ে গলগলিয়ে ঢুকছে কালো ধোঁয়া। সেই ধোঁয়ার উস্কানিতে কাশির প্রবল দমক ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক পর্যন্ত সকলকেই এমন ভাবে দমিয়ে দিল যে, ভন্ডুল হয়ে গেল ক্লাস!

এ ভাবে কাশিতে ক্লাস বন্ধ হয়ে যাওয়াটা পড়ুয়াদের কাছে গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। তারা জানে ওই ধোঁয়ার তাৎপর্য। ধোঁয়ার উৎস আসলে মিড-ডে মিল রান্না করার জন্য জ্বালানো উনুন। কোনও দিন ইতিহাসের ক্লাস, কোনও দিন বা অঙ্কের ক্লাস এ ভাবেই বন্ধ হয়ে যায়। চিত্রটি হাওড়া জেলার বাউড়িয়ার একটি স্কুলের।

কালো ধোঁয়ার রোজকার হামলায় পঠনপাঠনের ক্ষতি এড়াতে মিড-ডে মিল রান্নার ব্যবস্থাটাই বদলে ফেলতে চাইছে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর। রাজ্যের সব প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে এলপিজি (লিকুইড পিউরিফায়েড গ্যাস) দিয়ে রান্নার ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে চলেছে তারা। তাতে পড়াশোনা ঢেকে যাবে না ধোঁয়ায়। সেই সঙ্গে রক্ষা পাবে কচিকাঁচাদের ফুসফুস। স্কুলশিক্ষা দফতর দেখেছে, শুধু হাওড়া নয়, রাজ্যের অধিকাংশ স্কুলে রান্নার ধোঁয়ায় পঠনপাঠন বিঘ্ন তো ঘটছেই। সেই সঙ্গে কালো ধোঁয়া সরাসরি ঢুকে যাচ্ছে পড়ুয়াদের ফুসফুসে। ধোঁয়ার দূষণে ছাত্র-শিক্ষক দু’পক্ষেরই স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। গ্যাসে রান্না হলে পড়ুয়াদের ফুসফুস বাঁচবে। ধোঁয়ার তাড়া খেয়ে পানিপথের যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালাতেও হবে না।

স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল দেওয়া হয়। কিন্তু গ্রামের অধিকাংশ স্কুলেই সেটা রান্না করা হয় কাঠ, কয়লা বা শুকনো ডালপাতা দিয়ে। নিয়ম অনুযায়ী স্কুলের ভিতরেই মিড-ডে মিল রান্নার ব্যবস্থা থাকা উচিত। সেই ব্যবস্থায় রান্নার সময়ে ক্লাস ভরে যায় ধোঁয়ায়। মাত্রা ছাড়ায় দূষণও। পাঠের ক্ষতি এবং দূষণ, দু’টিতেই এ বার রাশ টানতে চায় সরকার। তবে ওই শিক্ষাকর্তা বলেন, ‘‘রাজ্যে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি স্কুলে মিড-ডে মিল চালু আছে। সব স্কুলেই একসঙ্গে এলপিজি দেওয়া সম্ভব হবে না। ধাপে ধাপে গোটা প্রক্রিয়া শেষ করা হবে।’’

শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, সব জেলার স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে বৈঠকে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, ওভেন এবং এলপিজি সেন্টার থেকে সংযোগ নেওয়ার জন্য যে-টাকা দিতে হয়, সেটা সরকারই দেবে। তার পরে মিলের জন্য দেওয়া টাকা দিয়েই কাজ চালাতে হবে। মিড-ডে মিলের জন্য এখন প্রাথমিকের পড়ুয়া-পিছু চার টাকা ১৩ পয়সা এবং উচ্চ প্রাথমিকে ছ’টাকা ১৮ পয়সা দেওয়া হয়। গ্যাসের বিল দিতে হবে তা থেকেই।

রান্নার জন্য গ্যাসের বন্দোবস্ত হলে আরও একটি বড় সমস্যার সুরাহা হবে বলে শিক্ষাকর্তাদের আশা। তাঁরা জানাচ্ছেন, বর্ষাকালে কাঠ এবং অন্য জ্বালানি জলে ভিজে যাওয়ায় অনেক সময়েই পড়ুয়াদের কাছে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়া যায় না। ফলে ওই মরসুমে উপস্থিতির হার কমে যায়। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘বর্ষায় অনেক স্কুলে মিড-ডে মিল দেওয়া যায় না। কারণ, টানা বৃষ্টিতে সমস্ত জ্বালানি ভিজে যায়। গত বর্ষায় তো অনেক স্কুলে বর্ষার দাপট কমে যাওয়ার কয়েক দিন পরে খড়ের গাদার ভিতর থেকে খড় বার করে কোনও রকমে রান্না করা হয়েছে।’’ গ্যাসে রান্না হলে মিড-ডে মিলে ছেদ পড়বে না এবং বর্ষায় স্কুলছুট আটকানো যাবে অনেকটাই।

তবে আশঙ্কাও আছে একটা। এলপিজি চালু করলে আগুন লাগা এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি কিছুটা বাড়বে বলে জানাচ্ছেন প্রধান শিক্ষকেরা। ‘‘এই সমস্যার মোকাবিলায় অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখা ও স্কুলের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে,’’ আশ্বাস দিচ্ছেন স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা।

Mid-Day Meal Cooking Gas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy