Advertisement
E-Paper

সমস্যা জটিল, কড়া নজরদারি একমাত্র ওষুধ

শিয়ালদহ ডিভিশনে গত কয়েক দিনে মাতৃভূমি স্পেশ্যাল চালানো নিয়ে যে ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সেই সমস্যার মূল কিন্তু গভীরে। এই ডিভিশনে বহু বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি— এখানে ঠিক মতো সময়ানুবর্তিতা রাখা গেলে অন্য অনেক সমস্যাও অত গুরুতর আকার ধারণ করে না।

সুভাষরঞ্জন ঠাকুর (রেল বোর্ডের প্রাক্তন কর্তা)

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২০

শিয়ালদহ ডিভিশনে গত কয়েক দিনে মাতৃভূমি স্পেশ্যাল চালানো নিয়ে যে ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সেই সমস্যার মূল কিন্তু গভীরে। এই ডিভিশনে বহু বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি— এখানে ঠিক মতো সময়ানুবর্তিতা রাখা গেলে অন্য অনেক সমস্যাও অত গুরুতর আকার ধারণ করে না। আবার এটাও ঠিক, সময়ানুবর্তিতার একটা সন্তোষজনক মাত্রা বজায় রাখা সত্যিই বেশ কঠিন।

অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এ কাজে প্রথম ও প্রধান প্রয়োজন হচ্ছে সত্যিকারের নজরদারি। এই নজরদারি মানে খুঁত খোঁজা নয়। এর মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, কোথাও কোনও সমস্যার সূচনা হলেই সঙ্গে সঙ্গে সেটাকে গোড়াতেই নির্মূলের চেষ্টা করা। আমার সময় এই কাজটা শুরু হতো সূর্য ওঠার আগে, চলত শেষ সন্ধ্যা পর্যন্ত। শিয়ালদহে ঠিক মতো ট্রেন চালাতে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পরিচালনা, ইলেকট্রিক্যাল ও সিগন্যালিং বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে চলা। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারী হচ্ছেন মোটরম্যান ও স্টেশনের পরিচালন বিভাগের কর্মীরা। ট্রেন কিন্তু মূলত এঁরাই চালান। বাকিরা সবাই এঁদের কাজের উপর নির্ভর করেন। তাই ঠিক মতো ট্রেন চালাতে এঁদের ‘মোটিভেট’ করতে হবে। এই ডিভিশনের আধিকারিকদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত সেটাই। এই কাজটা করতে পারলেই অনেকটা উন্নতি হবে। কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। কারশেডগুলির কাজের পর্যালোচনা করে রেকগুলিকে ঠিকমতো দেখাশোনা করতে হয়। ওভারহেডের বিদ্যুৎবাহী তার এবং সিগন্যালিং‌ ব্যবস্থার দিকে বিশেষ নজর দিয়ে এ ক্ষেত্রে যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে দিকে দেখতে হবে। মনে হতে পারে— এটাই তো রেলের কাজ, তা হলে বিশেষ উল্লেখ কেন?

মনে রাখা দরকার শিয়ালদহ ডিভিশনে ট্রেন চালানোর যে ক্ষমতা রয়েছে, যাত্রীদের চাপে তার পুরোটাই ব্যবহার করতে হয়। ধরা যাক, ওই ডিভিশনে ১০টি ট্রেন চালানোর ক্ষমতা রয়েছে। অন্য ডিভিশনে ৬-৮টি ট্রেন চালিয়ে জরুরি প্রয়োজনের জন্য হাতে দু’টি ট্রেন রেখে দেওয়া হয়। এখানে ১০টাই চালাতে হয় বাধ্য হয়ে। তাই একটা বা দু’টো সিগন্যাল যদি ঠিকমতো কাজ না করে অথবা কোনও রেক যদি ঠিকমতো না চলে বা বিদ্যুৎবাহী তারে কোনও ছোট সমস্যাও হয়, তখন ক্ষেত্রবিশেষে তা গুরুতর আকার ধারণ করে। কারণ বিকল্প ব্যবস্থা করার সুযোগ নেই।

মুম্বই শহরে শহরতলির ট্রেন চলাচল নিঃসন্দেহে শিয়ালদহ ডিভিশনের চেয়ে ভালো। তার প্রধান কারণ— ওখানে শহরতলি ট্রেন চলাচলের জন্য আলাদা করিডর রয়েছে । আর শিয়ালদহ ডিভিশনে একই লাইন দিয়ে দ্রুতগামী ট্রেন, শহরতলির ট্রেন, এমনকী বেশ কিছু মালগাড়িও চালাতে হয়। আলাদা করিডর করা সম্ভবই নয় এখানে। তবে, দু’টি ব্যাপারে পরিকাঠামোর উন্নয়ন আর ফেলে রাখলে চলবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অতিরিক্ত কামরার ব্যবস্থা করে সব ট্রেনকে ১২ কোচের করতে হবে। এর জন্য দরকারি পরিকাঠামোর কাজ প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তাই এতে বেশি সময় লাগা উচিত নয়। এটা হলে অতিরিক্ত ট্রেনের দাবি অনেকটাই কমবে। মাতৃভূমি স্পেশালে সাধারণ কামরাও আর যোগ করতে হবে না।

কিন্তু এই কাজের পরেও আরও একটি-দু’টি কাজ না করলে এই ডিভিশনে পরিচালন ব্যবস্থা মুম্বইয়ের ধারে কাছেও পৌঁছবে না। প্রথম কাজ— শিয়ালদহ নর্থ ও মেন ডিভিশনের পুনর্বিন্যাস। এর জন্য ডিআরএম অফিসের কাছে যে খাল রয়েছে, তার উপরের সেতুটি নতুন করে তৈরি করতে হবে। ট্রেন লাইনগুলিকে পুনর্বিন্যাস করলে কাঁকুড়গাছি থেকে শিয়ালদহ আসতে দু’-তিন মিনিট সময় বাঁচবে। শিয়ালদহ থেকে ছাড়া দু’টি ট্রেন ছাড়ার সময়ের ব্যবধান কমানো যাবে। মনে হয়, এই প্রকল্পটি রেল বোর্ড ইতিমধ্যেই মঞ্জুর করেছে। এই কাজটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া ভীযণ দরকার। এর সঙ্গে দরকার দমদম জংশন স্টেশনে বনগাঁ শাখার জন্য একটি উড়ালপুল। এই কাজটিও অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। এই দু’টি কাজ না হলে ভবিষ্যতে আরও অসুবিধা হবে। এর সঙ্গে দমদম থেকে শিয়ালদহের মধ্যে আরও একটি লাইন পেতে দ্রুতগামী ট্রেনগুলিকে কিছুটা হলেও শহরতলির ট্রেন থেকে আলাদা করা দরকার। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় বালিগঞ্জ থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত অতিরিক্ত একটি লাইন পাতা দরকার। এই প্রকল্পগুলি সবই দীর্ঘমেয়াদি।

তবে শিয়ালদহ ডিভিশনে এখনই লক্ষ্যণীয় উন্নতি করতে হলে প্রথমেই মনিটরিং ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে দৈনন্দিন কিছু সমস্যা তৈরি হবেই। দ্রুত তা মিটিয়ে ফেলাটা খুবই জরুরি বিষয়। এ জন্য পরিচালন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজতে হবে। রেলের কর্মী-অফিসারদের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য উচ্চতম পর্যায়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রত্যেক মুহূর্তে এই কাজ করা দরকার।

train service coordination coordination and surveillance surveillance better train service subhas ranjan thakur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy