Advertisement
E-Paper

বীরভূমে থানার ‘দখল’ জনতার হাতে, পালিয়ে গেলেন ওসি-ই

সেচ দফতরের চেকপোস্ট এড়াতে অন্য পথ নেয় অতিরিক্ত বালিবোঝাই লরি-ট্রাক-ডাম্পার। কিন্তু, সেখানে আবার বসে থাকে পুলিশ। অভিযোগ, ওই সব ট্রাক-ডাম্পার থেকে প্রতিদিন পুলিশ তোলা তোলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৯
ঘটনার পরে বাড়িতে বাড়িতে চলছে পুলিশের তল্লাশি। আতঙ্কিত বাড়ির লোকজন। শুক্রবার বীরভূমের ময়ূরেশ্বরে অনির্বাণ সেনের তোলা ছবি।

ঘটনার পরে বাড়িতে বাড়িতে চলছে পুলিশের তল্লাশি। আতঙ্কিত বাড়ির লোকজন। শুক্রবার বীরভূমের ময়ূরেশ্বরে অনির্বাণ সেনের তোলা ছবি।

সেচ দফতরের চেকপোস্ট এড়াতে অন্য পথ নেয় অতিরিক্ত বালিবোঝাই লরি-ট্রাক-ডাম্পার। কিন্তু, সেখানে আবার বসে থাকে পুলিশ। অভিযোগ, ওই সব ট্রাক-ডাম্পার থেকে প্রতিদিন পুলিশ তোলা তোলে। শুক্রবার তেমনই একটি ডাম্পারকে পুলিশ ধাওয়া করার সময় ঘটল দুর্ঘটনা। এক যুবক পিষ্ট হলেন ডাম্পারের চাকায়। তার জেরে অগ্নিগর্ভ হয়ে গেল বীরভূমের ময়ূরেশ্বর।

উত্তেজিত জনতা ময়ূরেশ্বর থানায় ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন ধরিয়ে দিল। প্রতিরোধ তো দূর, প্রাণ বাঁচাতে থানা থেকে ছুট লাগালেন খোদ ওসি! জনতার হাতে মার খেলেন কয়েক জন পুলিশকর্মী। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেও আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁদের। ক্ষোভের সঙ্গে বলে দিচ্ছেন, প্রতিরোধ করবেন কী করে! উপরতলার ‘অর্ডার’ যে নেই! তাই এ দিন পড়ে পড়ে মার খেতে হয়েছে। এই জেলাতেই যে পুলিশ খুনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা তোলার আর্জি জানিয়েছে সরকার—তা-ও একান্ত আলোচনায় মনে করিয়ে দিচ্ছেন জেলার নিচুতলার কিছু পুলিশকর্মী।

তবে, এটাও ঘটনা, জনরোষের নেপথ্যে কিন্তু উঠে আসছে পুলিশের বিরুদ্ধে থানার সামনেই বালির গাড়ি আটকে তোলাবাজির অভিযোগ। যদিও বীরভূমের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের দাবি, ‘‘তোলা নেওয়ার জন্য পুলিশ তাড়া করায় ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে, এই অভিযোগের কোনও ভিত্তিই নেই। জনতা সম্পূর্ণ ভুল ধারণার বশে পুলিশের উপরে চড়াও হয়। থানায় হামলা করে।’’ ঘটনার পরে আক্রোশ মেটাতে পুলিশ ও র‌্যাফ নির্বিচারে গ্রামবাসীদের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর ও লাঠিপেটা করে বলে অভিযোগ। পুলিশের মার থেকে রক্ষা পাননি এক প্রতিবন্ধী প্রৌঢ়ও। ওই অভিযোগও ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন এসপি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন বেলা সাড়ে ১১টায় ময়ূরেশ্বর থানার সামনে দিয়ে যাচ্ছিল অতিরিক্ত বালিবোঝাই ওই ডাম্পার। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশ তোলা নিতে ডাম্পারটিকে থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু, ডাম্পারটি পুলিশকে ধোঁকা দিয়ে সাঁইথিয়া-রামপুরহাট সড়কে বেপরোয়া গতিতে রামপুরহাটের দিকে পালাতে শুরু করে। পুলিশের একটি গাড়ি ডাম্পারটিকে ধাওয়া করে। সেই সময়ে লাগোয়া ছোট তুড়িগ্রাম থেকে কাজ সেরে মালিকের মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন পেশায় রাজমিস্ত্রি, ময়ূরেশ্বরের স্কুলপাড়ার বাসিন্দা সাজু শেখ (৩২)। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘পিছনে পুলিশের গাড়ি দেখে ডাম্পার চালক আরও গতি বাড়িয়ে দিয়েছিল। হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ময়ূরেশ্বরের ঠিক বাইরে ক্যানাল ব্রিজের কাছে সাজুকে পিছনের চাকায় পিষে দেয়।’’ কেউ কিছু করার আগে সাজুর মোটরবাইক নিয়েই ডাম্পারের চালক ও খালাসি চম্পট দেয় বলে জানা গিয়েছে।

এর পরেই জনরোষ ছড়িয়ে পড়ে। সাজুর মৃত্যুর জন্য পুলিশই দায়ী, এই অভিযোগ তুলে হাজার তিনেক এলাকাবাসী চড়াও হন থানায়। মোবাইলে কর্তাদের খবর দিতে দিতেই দৌড় লাগান ওসি রাকেশ সাধুখাঁ। ভাঙচুর চলে ওসি-র অফিসঘর ও পুলিশ ব্যারাকে। ডাম্পারের পিছু নেওয়ায় পুলিশের গাড়িটিতে প্রথমে আগুন ধরানো হয়। গাড়িতে থাকা পুলিশকর্মীরা মার খান। তাঁদের উদ্ধার করতে থানা থেকে যাওয়া আর একটি গাড়ির উপরেও চড়াও হয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা। থানা চত্বরে পড়ে থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্রও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এক ঘণ্টা ধরে থানা কার্যত এলাকাবাসীর দখলে চলে যায়। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘কোনও মতে পালিয়ে বেঁচেছি। এখনও বুকের ভিতরটা কাঁপছে!’’ বিশাল পুলিশ বাহিনী এবং র‌্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স সাড়ে ১২টা নাগাদ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। লাঠি চালানোর কথা অবশ্য মানেননি পুলিশ সুপার।

বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের শাসনে পুলিশকে যে ভাবে ঠুঁটো জগন্নাথ করে রাখা হয়েছে, তাতে এমন ঘটনা বাড়বে। বারবার পুলিশ আক্রান্ত হলেও দোষীদের কঠোর শাস্তি হচ্ছে না। আবার পুলিশের নানা ভূমিকায় ক্ষোভ বাড়ছে জনমানসে।

বিজেপি নেতা রিতেশ তিওয়ারির মন্তব্য, ‘‘রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা তলানিতে। জঙ্গলরাজ চলছে। যে পারছে পুলিশকে মারছে।’’ নবান্নের এক শীর্ষকর্তা এ দিন জানান, ঘটনার বিশদ রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের কাছে। তা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।

mayureswar police station mob attack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy