নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ। ফাইল চিত্র।
কোভিড-১৯ সংক্রামিত রোগীর মৃত্যুর জেরে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের পুরুষদের ওয়ার্ড এবং ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, সোমবার থেকেই ওই বিভাগে নতুন করে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী দু’দিন জীবাণুমুক্ত করা হবে ওই ওয়ার্ড এবং সিসিইউ। ইতিমধ্যেই ওই বিভাগে কর্মরত এবং তাঁদের সংস্পর্শে আসা চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে মোট ৬৪ জনকে রাজারহাটের কোয়রান্টিন সেন্টারে রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য় দফতর সূত্রে খবর, এঁদের প্রত্য়েকের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হবে।
শনিবার ওই হাসপাতালে মৃত্যু হয় দক্ষিণ ২৪ পরগণার মহেশতলার বাসিন্দা ৩৪ বছরের এক যুবকের। তিনি হিমোফিলিয়ায় ভুগছিলেন। গত ৩০ মার্চ তাঁকে ভর্তি করা হয়। প্রথমে তাঁকে রাখা হয়েছিল মেডিসিন বিভাগের পুরুষদের ওয়ার্ডে। কিন্তু তার পরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তাঁকে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ দেখা দিতে থাকে ওই যুবকের শরীরে। এর পরই শনিবার সকালে তাঁর লালারসের নমুনা পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। কিন্তু সেই রিপোর্ট আসার আগেই মৃত্যু হয় তাঁর। শনিবার রাতে ওই যুবকের রিপোর্ট পজিটিভ আসার পরেই রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা হাসপাতাল জুড়ে।
ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা এক পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনি বলেন,‘‘যখন ওই রোগীকে ভর্তি করা হয়েছিল তখন তাঁর শরীরে করোনার কোনও উপসর্গ ছিল না। ফলে কোনও ধরনের স্ক্রিনিং হয়নি। কোনও চিকিৎসক, নার্স বা চিকিৎসাকর্মী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্টও ব্যবহার করেননি।” শনিবার ওই রিপোর্টের কথা প্রকাশ্যে আসার পরেই স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়। ওই ওয়ার্ডে এবং সিসিইউ-তে কারা কারা ওই ক’দিন চিকিৎসা করেছেন এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা কারা ছিলেন— তা চিহ্নিত করা শুরু হয়। জানা যায়, প্রায় ৩৯ জন চিকিৎসক ওই ওয়ার্ড এবং ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে কাজ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ১৫ জন পিজিটি, ৬ জন হাউস স্টাফ এবং ১৮ জন ইন্টার্ন। সবাইকে দ্রুত রাজারহাটের কোয়রান্টিন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ছাড়াও নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের সংস্পর্শে আসা সব মিলিয়ে প্রায় ৬৪ জনকে সোমবার পর্যন্ত কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে।
আরও পড়ুন- রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬১, মৃত ৩, নবান্নে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
হাসপাতাল সূত্রে খবর, রবিবার থেকেই গোটা ওয়ার্ড জীবাণুমুক্ত করার কাজ শুরু হয়। সোমবারও সেই কাজ হয়। সিসিইউ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আরও ৪৮ ঘণ্টা বন্ধ রেখে জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলবে বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, ওই বিভাগে তিন জন রোগী ছিলেন। তাঁদের অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তাঁদেরও আইসোলেশনে রেখে পর্যবক্ষণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ওই যুবকের এখনও কোনও ভ্রমণের ইতিহাস পাওয়া যায়নি। তিনি কী ভাবে করোনা আক্রান্ত হলেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সরকারি ভাবে এখনও রাজ্য ওই যুবকের ম়ৃত্যু করোনার কারণে হয়েছে বলে ঘোষণা করেনি। রাজ্য সরকার নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি ৩৪টি কারণ খতিয়ে দেখার পর সিদ্ধান্ত নেবে ঠিক কী কারণে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
রবিবার সকালে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও এক ৫৩ বছর বয়সী ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনিও করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের কর্মী ওই ব্যক্তি। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ওই রোগী প্রথমে রেসপিরেটরি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (রিকু)-তে ভর্তি ছিলেন। তাঁর পাশের বেডেই ছিলেন কালিম্পঙের বাসিন্দা মহিলা যিনি পরে মারা যান করোনায় আক্রান্ত হয়ে। তাই হাসপাতাল থেকেই তাঁর আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: এক বছর ৩০% বেতন পাবেন না মন্ত্রী-সাংসদরা, নেবেন না রাষ্ট্রপতি-রাজ্যপালরাও
ক’দিন আগেই করোনা আক্রান্ত রোগীকে আইসোলেশনে না রেখে চিকিৎসা করার জন্য হুগলির একটি নার্সিংহোম ১৪ দিনের জন্য কোয়রান্টিন করার ঘোষণা করে স্বাস্থ্য দফতর। তবে কোনও সরকারি হাসপাতালে এভাবে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা এই প্রথম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy