প্রতীকী ছবি।
আটচল্লিশ বছর বয়সি এক ব্যক্তি ব্যক্তি লকডাউন শিথিল হওয়ার পরে লেকটাউনের কর্মস্থলে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। গত ২৩ জুন জ্বর, ক্লান্তি ভাবের উপসর্গ দেখা দিলে নিজস্ব উদ্যোগে বেসরকারি ল্যাব থেকে নমুনা পরীক্ষা করান তিনি। করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়ার পরে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন তিনি। আক্রান্তের বাড়িতে স্ত্রী, ৭৮ বছরের বৃদ্ধা মা এবং দুই ছেলে রয়েছেন। নিয়মানুযায়ী ২৬ জুন আক্রান্তের করোনা ধরা পড়ার পরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তাঁদেরও নমুনা পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু আক্রান্তের অভিযোগ, সে সব কিছুই হয়নি!
এই অভিজ্ঞতা উত্তর কলকাতার দর্পনারায়ণ স্ট্রিটের বাসিন্দার একার নয়। সরশুনায় করোনা পজ়িটিভ হয়ে মৃত প্রৌঢ়ের পরিজন, বালিগঞ্জের বাসিন্দা প্রাক্তন সেনাকর্মী এবং বেলেঘাটার এক চিকিৎসকের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সকলেই ঘটনাক্রমে বেসরকারি ল্যাব থেকে নিজস্ব উদ্যোগে করোনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের সংস্পর্শে আসা পরিজনদের নমুনা পরীক্ষা করানোর প্রশ্নে সরকারি উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। তাঁরা জানিয়েছেন, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এবং কলকাতা পুরসভার তরফে আক্রান্তদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নমুনা পরীক্ষা নিয়ে কিছু বলা হয়নি বলে তাঁদের দাবি।
স্বাস্থ্য দফতরের করোনা বুলেটিন অনুযায়ী, ল্যাবের সংখ্যা বৃদ্ধি হলেও জুনে প্রতি দিন গড়ে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা সাড়ে ন’হাজারের ঘরেই রয়েছে। গত ১৯ জুন এক দিনে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দশ হাজারের গণ্ডি অতিক্রম করলেও তিন দিন পর থেকেই সাড়ে ন’হাজারের নীচে চলে আসে। গোটা জুনে মাত্র চার বার এক দিনে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দশ হাজার অতিক্রম করেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, জুনের প্রথমে রাজ্যে মোট ল্যাবের সংখ্যা ছিল ৪৩। জুনের ২৫ তারিখে ল্যাবের সংখ্যা ৫০ পেরোলেও নমুনা পরীক্ষার সংখ্যায় কেন বৃদ্ধি নেই?
প্রসঙ্গত, এম আর বাঙুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ জুন সরশুনার বাসিন্দা ৫৪ বছরের প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়। বুধবার মৃতের শ্যালক জানান, সপ্তাহখানেক আগে তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হলেও এখনও রিপোর্ট তাঁরা হাতে পাননি। দুই শ্যালকের নমুনা সংগ্রহ হলেও মৃতের স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং একই ঘরে বসবাসকারী ৬৫ বছরের বৃদ্ধা শাশুড়ির নমুনা পরীক্ষা করানোর প্রশ্নে সরকারি স্তরে উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। বেলেঘাটার বাসিন্দা এক চিকিৎসক জানান, তাঁর স্ত্রী হুইলচেয়ারে যাতায়াত করেন। স্ত্রী’র নমুনা পরীক্ষা করানোর জন্য তিনি পুরসভার কর্মীদের কাছে অনুরোধ করেছিলেন। লাভ হয়নি। ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘অনেক বলার পর হাল ছেড়ে দিই।’’
এই অভিজ্ঞতারই প্রতিফলন ঘটেছে স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকের মন্তব্যে। তাঁর কথায়, ‘‘নমুনা আসছে না। তাই ল্যাব বাড়লেও পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে না!’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যে এখন পরীক্ষাগারের যা কাঠামো রয়েছে, তাতে প্রতি দিন অন্তত ১৫ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। আরটি-পিসিআরের পাশাপাশি র্যাপিড অ্যান্টিজেন কিট কেন ব্যবহার করা হচ্ছে না, তা নিয়েও চিকিৎসকদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন।
স্বাস্থ্য দফতরের আর এক পদস্থ আধিকারিক জানান, র্যাপিড অ্যান্টিজেন কিটে পরীক্ষিত নমুনা আরটি-পিসিআরে কী ফল দিচ্ছে সে বিষয়ে সম্প্রতি সমীক্ষা হয়েছে। সরকারি দু’টি ভিআইআরডিএল ল্যাবে একই নমুনা দু’রকম পদ্ধতিতে পরীক্ষা করার পরেও রিপোর্টে তেমন তারতম্য ঘটেনি বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর।
স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘গত সাড়ে তিন মাস ধরে দিনের পর দিন রাত জেগে একটানা ল্যাবের কর্মীরা কাজ করছেন। ফলে ক্লান্তিভাব কাজ করা তো স্বাভাবিক। এগুলোও তো দেখতে হবে। আরটি-পিসিআরের পাশাপাশি সিবি-ন্যাট, ট্রু-ন্যাট, র্যাপিড অ্যান্টিজেন কিটেও পরীক্ষা হচ্ছে। ফলে আপাতদৃষ্টিতে যা মনে হচ্ছে, তা ঠিক নয়। যে ১০ হাজার র্যাপিড কিট কেনা হয়েছিল, তা প্রায় শেষ। আরও কিট কেনা হচ্ছে। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা এখন কিছুটা কমলেও তা দ্রুত বেড়ে যাবে।’’ কনট্যাক্ট ট্রেসিং প্রসঙ্গে তিনি জানান, সকলের পরীক্ষা করানোর যে প্রয়োজন নেই, সেটা বুঝতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘উপসর্গহীন ব্যক্তি, কোনও সমস্যা নেই, তাঁদের টেস্ট করানোর প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। উপসর্গহীনদের টেস্ট করালে সংখ্যা বাড়লেও কোনও লাভ নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy