মৎস্যজীবীদের ঘরে ফেরাতে তৎপর উপকূলরক্ষী বাহিনী। নিজস্ব চিত্র।
এক প্রলয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে পশ্চিম উপকূল তছনছ। কোভিড আবহে পূর্ব উপকূলে মহা-আশঙ্কা ঘনিয়ে তুলেছে নতুন ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। এই প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের কাছে বিশেষ নির্দেশিকা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে কোনও ভাবেই যাতে কোভিড চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত না-হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশের পাশাপাশি বিপর্যয়ের পরে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, ডায়েরিয়ার মতো রোগ রুখতেও সক্রিয় থাকতে বলা হয়েছে রাজ্য প্রশাসনকে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব উপকূলের যে-সব রাজ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে, তাদের মুখ্যসচিবদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ।
আজ, শনিবারেই আন্দামান সাগর লাগোয়া বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ দানা বাঁধতে চলেছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দানা বাঁধার পরে নিম্নচাপ ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপ ও সুগভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। সোমবার নাগাদ সেটি আরও শক্তি বৃদ্ধি করে পরিণত হবে ঘূর্ণিঝড়ে। মঙ্গলবার নাগাদ সেটি ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছাকাছি আসবে, বুধবার ঢুকবে স্থলভূমিতে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে সাগর উত্তাল থাকবে। মঙ্গলবারেই উপকূলীয় জেলাগুলিতে বৃষ্টি শুরু হবে এবং তা ছড়িয়ে পড়বে অন্যান্য জেলায়। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের আশঙ্কাও রয়েছে।
গত বছরেও অতিমারি আবহে মারাত্মক প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমপানের দাপট দেখেছিল বাংলা। সেই ক্ষতের বর্ষপূর্তিতেই ফের শিয়রে শমন। এ বারের ঘূর্ণিঝড়টির নাম ইয়াস, আরবি ভাষায় যার অর্থ দুঃখ। এ বার করোনার প্রকোপ মারাত্মক। তাই প্রশাসন অতি সতর্ক। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও তাই আগেভাগে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য দফতরে আপৎকালীন কন্ট্রোল রুম খুলতে হবে এবং এক জন নোডাল অফিসার নিয়োগ করতে হবে। সেই অফিসার সবিস্তার তথ্য জানাবেন কেন্দ্রকে। উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতি রাখতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলি থেকে রোগীদের নিরাপদ জায়গার হাসপাতালে সরিয়ে নিতে হবে। বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে হাসপাতালগুলিতে। ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকার হাসপাতালগুলিকে স্যাটেলাইট ফোন এবং হ্যাম রেডিয়োর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যাতে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ট্যাঙ্কারের সরবরাহ না-আটকায়, তা নিশ্চিত করবে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় হাসপাতালগুলিতে আগেভাগে জরুরি ওষুধ মজুত করতে বলা হয়েছে। আশ্রয় শিবিরগুলিতে অ্যান্টিজেন টেস্ট এবং আরটিপিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ে দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে। তাই ওই সব জেলায় বিশেষ প্রস্তুতি চালিয়েছে প্রশাসন। দফায় দফায় বৈঠকও হয়েছে। দুর্বল নদীবাঁধের মেরামতি চলছে। তৈরি রাখা হয়েছে সাইক্লোন শেল্টার ও স্কুল। মাইকে সতর্কতা প্রচার চলছে। কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এখনও পর্যন্ত ৬০টি ত্রাণ শিবির তৈরি রয়েছে। প্রায় ৬০ জায়গায় নদীবাঁধ সারানোর কাজ চলছে।” গোসাবা ব্লকে ১৯টি ফ্লাড সেল্টার ও ১৮টি স্কুলকে ইতিমধ্যেই আশ্রয় শিবির হিসেবে চিহ্নিত করে স্যানিটাইজ় করা হয়েছে। সমস্ত ফসল খেত থেকে তুলে নিতে বলা হয়েছে চাষিদের। মৎস্যজীবীদের নদী বা সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে এনডিআরএফের দল সাগর, কাকদ্বীপ, বাসন্তী, গোসাবা এবং ডায়মন্ড হারবারে পৌঁছে গিয়েছে। বিভিন্ন দ্বীপ ও প্রত্যন্ত এলাকায় ৫০ হাজার বৈদ্যুতিক খুঁটি, ট্রান্সফর্মার, দু’লক্ষ জলের পাউচ, ওয়াটার ভেন্ডিং মেশিন প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। অস্থায়ী জলের ট্যাঙ্ক ও পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহের প্রস্তুতি চলছে। ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি বুঝতে ২০টি স্যাটেলাইট ফোন, ২৫টি ড্রোনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনার ন্যাজাটের বাউনিয়া-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় নদীবাঁধের মেরামতি শুরু হয়েছে। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, আপাতত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলিকেই ব্যবহার করা হবে। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের কয়েকটি জায়গায় বাঁধ সারানো হয়েছে। করোনা রোগী এবং তাঁদের পরিবারের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা হচ্ছে। বিদ্যুতের তার বাঁচাতে বিপজ্জনক গাছ কেটে ফেলার পরিকল্পনা চলছে। মিনাখাঁর আটপুকুর পঞ্চায়েতের উচিলদহ গ্রামে বিদ্যাধরী নদীর বাঁধের দুর্বল অংশগুলোকে চিহ্নিত করে তা মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy